আবুধাবি মুছাফফায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহত পরিবারের শোকের মাতম

সংযুক্ত আরব আমীরাতের আবুধাবীস্থ মুছাফফায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের ৫ জনই রাউজানের। অন্যরা ফটিকছড়ির ও ১ জন বোয়ালখালীর রয়েছে। এই ঘটনারপর থেকে ৪ দিন ধরে এসব পরিবারের মাঝে চলছে আহাজারী ও কান্নার রোল। একের পর পর আত্মীয় স্বজনরা এসে ভীড় করছে পরিবার গুলোতে। এদের অনেকের কান্নায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে আরো কান্না আহাজারি বেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসি অধ্যুষিত এলাকা রাউজানের প্রবাসির পরিবারের মাঝেও নেমে এসেছে শোকের মাতম। এ নিয়ে এলাকার সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রশাসন এবং প্রবাসি ভাইদের সহযোগিতা করার আহবান জানান। এদিকে ঘটনাস্থলে নিহত হতাহত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়। ঘটনার পর থেকে কেউ কিছু করতে পারছে না। প্রতিটি মুহুর্তেই খবরা খবর নিতে মরিয়া পরিবারের সদস্যরা। বিদেশ থেকে কোন কল আসলেই ছুটে যায় পরিবারের সকল সদস্যরা। এতে কোন সদুত্তর না পেলেই পরে যায় কান্নার রোল।

একই ভাবে কোন আত্মীয় স্বজন আসলেই এই চিত্র ফুটে উঠে। নোয়াপাড়ার নিহত এনামুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বৃদ্ধ মা ছনোয়ারা বেগম (৮০) বাবা হাজী আবদুস সোবহান (৮৫) সহ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভীড় করছে আর অঝোর ধারায় কাঁদছে। তার বড় ভাই মফিজুল হক জানান, এনামুল হকের মরদেহ স¤পর্কে এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মরদেহ কখন আসবে তাও ঠিক বলতে পারছে না মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত স্বজনরা। তবে আগামি বৃহ¯পতিবার ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর আসার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অন্যদিকে ঘটনায় গুরুতর আহত রাউজানের নোয়াপাড়া এলকার কর্তারদীঘির মো.ইসমাইল (৫০) সেকানকার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছে। ঘটনার পর থেকে এখনো জ্ঞান ফিরেনি তার। এতেই চরম শঙ্কায় রয়েছে একমাত্র উপার্জমক্ষম ব্যক্তি ইসমাইলের পরিবার।

ইসমাইলের জামাতা ফারুক আজিম বলেন, আমার শ্বাশুরির বেচেঁ থাকার সম্ভবনা অনেক অনিশ্চিত রয়েছে। তার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। তার শ্যালক আবদুর রহিম বলেন, বোন কামরুন নাহারের সংসাদে ইসমাইলই একমাত্র উপার্জমক্ষম ব্যক্তি। এখন পরিবারের আখি, লাকি, হাসি, খুশির ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চতায় পড়েছে। তবে বড় মেয়ে আখির বিবাহ হয় মাসখানেক পূর্বে। যার বিবাহ অনুষ্ঠানে এসেছিল ইসমাইল। একই ভাবে আহাজারী চলছে একই পরিবারের দুই সহোদর আহত হওয়া উপজেলার পাচখাইন গ্রামের দরগাহবাড়ীস্থ নুর আহমদ মাস্টারের পরিবারে। এতে আফছার উদ্দিন (৫৪) ও মহিউদ্দিন (৪২) নামে দুই সহোর লাফ দিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও গুরুতর আহত হয়ে হাসপতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন মহিউদ্দিন। এতে পরিবারে যে কেউ আসলে বৃদ্ধা মাতা ইউনুছ বেগম (৮৫) হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কেউ আসতে না আসতেই জিজ্ঞেস করেন ছেলের কথা। এতে শহরে থাকা মহিউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল আমেনাও ছেলে নাঈম উদ্দিন (১০), নুর মো.সাঈদ (৪) ও মেয়ে আয়েশা মহিন অর্নি (১৫) কে নিয়ে গ্রামে অবস্থান করতেছে।

উপজেলার নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজারের আমানত বেকারীর নেছার আহমদের পুত্র আনোয়ার আজমের পায়ে গুরুতর আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। তবে সে আশংখামুক্ত বলে জানান, তার নিকট আত্মীয় ও বড়ঠাকুর পাড়ার বাসিন্ধা মফিজুর রহমান ও সেলিম উদ্দিন। তবুও এ পরিবারের চলছে আহাজারী। অন্যদিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে আহত বোয়ালখালী কদুরখীল জামতল এলাকার আলামিয়অ সওদার বাড়ীর ফরিদ আহমদের পুত্র আবদুল্লাহ আল ফরহাদ (৩৫) ও গুরুতর আহত হয়ে কোমর ভেঙ্গে যায়।

উল্লেখ্য সংযুক্ত আরব আমীরাতের আবুধাবীস্থ মুছাফফা সাত নম্বর রোড এলাকার একটি মার্কেটে আল ওয়াসিন টায়ার পানচার নামক দোকানে শুক্রবার ভোরে আগুন লেগে রাউজানের একজন নিহত ও অপর চারজন আহত হয়েছে। এছাড়াও ফটিকছড়ির ২জন নিহতসহ বোলায়াখালীর একজন আহত হয়। হতাহতরা সকলে একই রুমের বাসিন্ধা ছিল।



মন্তব্য চালু নেই