আফসোস প্রধানমন্ত্রীর

যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সিলেট এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩ অক্টোবর সকালে তিনি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে প্রায় ১ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন। এসময় তিনি গরুর মাংস আর সিলেটের সাতকরা না খাওয়ায় আফসোস প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজিরবাজার সেতু উদ্বোধন ও সিলেটের বিমানবন্দর-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কালে এ আফসোসের কথা জানান।

সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গত ৩ অক্টোবর সিলেটে গিয়েছিলাম। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দলীয় কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাই আজ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য শুনবনা।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটে গিয়েছি। কিন্তু গরুর মাংস আর সাতকরা খাওয়া হয়নি। এজন্য আমার আফসোস আছে। আমি আগামীতে সিলেট গেলে গরুর মাংস দিয়ে সাতকরা খেতে চাই।’

এসময় সিলেট জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সাংসদ ইমরান আহমদ, মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আসল নাম ‘সাতকরা’। তবে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় জাম্বুরার চেয়ে একটু ছোট সাইজের টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলকে ‘হাতকরা’ নামেই ডাকা হয়। সমগ্র সিলেট তো বটেই, বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও রয়েছে সাতকরার কদর।

সিলেটের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়- ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে সাতকরার মজুদ রেখেছেন। ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের সাতকরা বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। ছোট সাইজের সাতকরার হালির দাম ১২০-২০০ টাকা। মাঝারিগুলোর দাম হালি প্রতি ২০০-৩০০ টাকা। আর বড় সাইজের সাতকরার হালি ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমানে সাতকরার মৌসুম থাকায় দাম কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

গরুর গোশতের পাশাপাশি ছোট মাছ ও কচু শাক দিয়েও সাতকরা খাওয়া যায়। বর্তমানে সিলেটের বাজারে কাচের বোতলেও সাতকরার আচার পাওয়া যায়। সিলেটে আসা অন্য জেলা লোকজনের কাছে কাঁচা সাতকরার চেয়ে বোতলের আচারের কদরই বেশি।

বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ এবং টিলা এলাকায় সাতকরার গাছ দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশী সাতকরা চাষ হয় সিলেটের পাহাড়ী এলাকায়। সিলেটের জৈন্তাপুর এবং গোয়াইনঘাট এলাকার মাটি সবচেয়ে উর্বর এই ফল চাষের জন্য।

সাতকরার রেসিপি
বেশ কয়েকজন রাঁধুনীর সাথে কথা বলে সাতকরা কীভাবে রাঁধতে হয়, সেই বিষয়টি জানা গেছে।

উপকরণ:
গরুর মাংস ১ কেজি, সাতকরা ফালি করা ৪ থেকে ৫ টুকরো, লবন আন্দাজ মতো, আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাটা পেঁয়াজ ২ কাপ, হলুদের গুঁড়া ১ থেকে ২ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া ঝাল অনুযায়ী, জিরার গুঁড়া ১ থেকে ২ চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, গরম মসলা (এলাচ, দারচিনি) ৩ থেকে ৪টি, সয়াবিন তেল ৩ থেকে ৪ কাপ, গোল মরিচ ৭ থেকে ৮টি, কাচামরিচ ৪ থেকে ৫ টি।

প্রণালী:
প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। তারপর সাতকরা,কাচামরিচ ও গোলমরিচ বাদে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে কিছু সময় রেখে দিন। তারপর মাখানো মাংস চুলায় বসিয়ে দিন কড়া আঁচে। গোশতের পানি বের হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে রাখুন যাতে গোশতের পানি দিয়ে সেদ্ধ হয়ে যায় এবং মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন। একটি সাতকরাকে ফালি ফালি করে কেটে নিন। মাংস ৭০ ভাগ সিদ্ধ হয়ে গেলে সাতকরা দিন। রান্না হয়ে আসলে কাঁচামরিচ ও গোলমরিচ দিয়ে কিছুসময় রেখে নামিয়ে নিন। ভাত, পোলাও বা খিচুড়ি দিয়েও খেতে পারেন।

খেয়াল রাখবেন:
সাতকরা কেনার সময় পাতলা দেখে কিনবেন। পাতলা সাতকরা তেতো হয়না। আর তেতো সাতকরা হলে একটি ডেকচিতে পানি ফুটিয়ে সাতকরা দিয়ে ২ থেকে ১ টা বলক উঠলে পানি ঝরিয়ে নেবেন।



মন্তব্য চালু নেই