আপনি কি অতিরিক্ত চিন্তা করেন?

আপনি অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার বললেন, “আপনার তো কোন সমস্যা নেই। আপনি দুশ্চিন্তা কম করবেন, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।” আপনি অবাক হয়ে বললেন, “আমার কিসের দুশ্চিন্তা?” ডাক্তার আবারো একই কথা বলে আপনাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। এমন ঘটনা নিজের ক্ষেত্রে বা অন্য কারও ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন, তাই না?

অনেক সময় আমরা অতিমাত্রায় চিন্তা করি, কিন্তু নিজেরাই খেয়াল করি না। আপনার যদি অতিরিক্ত চিন্তা করার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে দ্রুতই সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা করা আমাদেরকে নানান রকম মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন করে। শুধু আমরাই যে ক্ষতিগ্রস্থ হই তা নয়। আমাদের কারণে অন্যরাও ঝামেলায় পড়ে।

এই লক্ষণগুলো মিলিয়ে বুঝে নিন আপনার অকারণে বেশী চিন্তা করার অভ্যাস আছে কিনা-

১। আপনার ঘুমাতে অসুবিধা হয়
আপনার শরীর ক্লান্ত, কিন্তু আপনি বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকেন। আমরা কমবেশী সবাই করি এই কাজগুলো। চিন্তা করতে থাকি সারাদিন কি করেছি না করেছি। অথবা ভাবতে থাকি কাল কি করব! কিন্তু আপনি যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী চিন্তা করেন তাহলে দেখা যাবে আপনার ঘুমই আসছে না, রাত পেরিয়ে যাচ্ছে।

২। আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায়
ঘুমানোর আগে সকালে সময়মত ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে আপনি এতই চিন্তা করেছেন যে সকাল হওয়ার আগেই কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গেযাচ্ছে আপনার। ফলাফলে সারারাত ভাল ঘুম হচ্ছে না। ভয়ে অনেক সময় আপনি আর ঘুমাতেই যান না, অথবা শেষবার এমনভাবে গভীর ঘুমে তলিয়ে যান যে কাজের সময় পেরিয়ে ঘুম ভাঙ্গে আপনার। দুশ্চিন্তার কারণে আপনার মস্তিষ্ক এতই উদ্বিগ্ন থাকে যে সে বার বার আপনাকে জাগিয়ে তোলে। পরে সারাদিনই আপনার শরীর খারাপ লাগতে থাকে।

৩। আপনি হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে যান
ছোট ছোট বিষয়ে আপনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফেলেন। সামান্য রুঢ় ব্যবহার আপনার মাঝে হীনমন্যতা তৈরি করে। চট করে রেগে যান প্রায়ই। কখনো কখনো রাগ আর কষ্টের অনুভূতি এত তীব্র হয় যে আপনি কেঁদেই ফেলেন। আপনার মনে হতে থাকে, কেউ আপনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এগুলো সবই অতি চিন্তার ফল। ঘটনাটী ছোট। কিন্তু আপনি সেটা নিয়ে এত চিন্তা করেন যে তা আপনার মাঝে অনেক জটিলতার তৈরি করে। আপনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

৪। নিজেকে দোষারোপ করা
আপনি যে কোন ব্যর্থতা বা নেতিবাচক ফলফলের জন্য সবার আগে নিজেকে দোষারোপ করেন। আপনার মনে হতে থাকে, আপনিই ভুল করেছেন। যা ঘটেছে আপনার কারণেই ঘটেছে। আপনি যেহেতু আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ এবং আপনার কাজগুলো আপনার আলাদা করে জানবার প্রয়োজন নেই তাই আপনি সেগুলোকেই আগে বিচার করতে শুরু করেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অন্যান্য পরিস্থিতি কোন কিছুই আপনার চোখে পড়ে না। কারণ আপনি নিজের ভুলের চিন্তা থেকে বেরই হতে পারেন না।

৫। আপনি অন্যের এক্সপ্রেশনকে নিজের সাথে মিলিয়ে ফেলেন
পথে হাটার সময় আপনার মনে হয় পেছনে লোকগুলো আপনাকে দেখেই হাসছে! কফিশপে বসে আপনার মনে হয়, পাশের টেবিলে বসে থাকা অপরিচিত যুগলটি আপনাকে নিয়েই কথা বলছে। কোন দোকানে গেলে আপনার মনে হয়, সেলসম্যান আপনাকে দেখেই ধরে নিয়েছে আপনি কিনবেন না। এই সবকিচগুই বলছে, আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করেন। আপনার চিন্তাজগতে এমন সব ছবি তৈরি হয়, বাস্তবে যার অস্তিত্বই নেই।

এই সমস্যাগুলো যদি আপনার থাকে তাহলে সচেতন হন। যে বিষয়ে চিন্তা করছেন সেই বিষয়টি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিন। যে বিষয়ে দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে অন্যকে দায়িত্ব দিন। যেমন, সকালে ঘুম থেকে সময়মত উঠতে চাইলে ঘড়িতে এলার্ম দিন। কাউকে বলুন আপনাকে ডেকে দিতে। তারপর উঠতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে ভাবাই বন্ধ করে দিন। নিজেই নিজেকে সহযোগিতা করুন। তবে যদি কোন কাজ না হয়, তাহলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হন।



মন্তব্য চালু নেই