‘আপনারা সাহেব হবেন, আর আমরা হব সুইপার!’

খুলনার ফুলতলা বাজারের দলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য ফুলমতি বাঁশফোর। দোকানে খেতে গেলে নিজেদের খাবারের পাত্র নিয়ে যেতে হয়। দোকানের পাত্রে তাঁদের খাওয়া নিষেধ। তাঁদের শিশুরা স্কুলে গেলে অপমান করা হয়; পেছনের বেঞ্চে বসতে বলা হয়। স্কুলের সামনে অন্য শিশুরা চটপটি কিনে খায়। শুধু তাঁদের শিশুদের ওই চটপটি কিনে খাওয়ার অধিকার নেই। এমন আরও নানা অভিযোগ তুলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফুলমতি বলেন, ‘আপনারা সাহেব হবেন, আর আমরা হব সুইপার!’

ফুলমতির মতো দলিত গোষ্ঠীর আরও অনেকে জীবনের পরতে পরতে নানা অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন। দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণ ও মানবাধিকার সংরক্ষণে গণশুনানিতে এই বৈষম্যের কথা উঠে আসে। গতকাল শনিবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে এ গণশুনানির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ।

যশোরের অভয়নগর শ্রীধরপুরের প্রসেনজিৎ বলেন, মানুষ তাঁদের অবহেলার চোখে দেখে। সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে ডাকে না। এলাকার পুকুরঘাট ব্যবহার করতে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

জমি দখল, মাদকের মিথ্যা মামলা, নারী নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ উঠে আসে গণশুনানিতে। বৈষম্যের শিকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্যদের অনেকে তাঁদের দুঃখ-বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, দলিত জনগোষ্ঠীর সদস্যরা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে দারুণভাবে অবহেলিত হন। তিনি বলেন, দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের অধিকার আদায়ে সব ধরনের সহায়তা দেবেন তাঁরা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে অনলাইনে তাঁদের অভিযোগ শোনা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্য দূর করার জন্য শিক্ষকদের সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন তিনি।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের আইনজীবী নারায়ণ চর্মকার, বাংলাদেশ দলিত নারী ফেডারেশনের সভাপতি মণি রাণী দাস, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি সুনীল কুমার মৃধা প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই