গাউছুল আজম সিটিতে তরিক্বত কনফারেন্সে লাখো সুন্নি জনতার ঢল

আধ্যাত্মিক জাগরণে ব্যক্তিচরিত্রের সংশোধনে বদলে যাবে পুরো সমাজ : অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ্

কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ্ব শাহছুফি আল্ল¬ামা অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী বলেছেন, শতাব্দীর সেরা আধ্যাত্মিক মনীষী খলিফায়ে রাসুল কাগতিয়ার গাউছুল আজমের তরিক্বত তথা আধ্যাত্মিক জাগরণে নূরে মুহাম্মদীর রওশনে মুছে যাবে অতীতের সকল পাপ, হেদায়তের প্লাবনে ব্যক্তিচরিত্রের সংশোধনে এবং সুপ্রবৃত্তির বিকাশে আলোকিত হবে নিজের জীবন ও কর্ম। আর এর প্রভাবে বদলে যাবে নিজের জীবন এবং তার চারপাশের পরিবেশ ও সমাজ। সমাজের কল্যাণে নিবেদিত কাগতিয়ার গাউছুল আজমের এ সফল ফর্মূলা ও দর্শন সামাজিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।

তিনি গত ২৮ মার্চ ২০১৫ ইং শনিবার গাউছুল আজম সিটিতে ঐতিহাসিক তরিক্বত কনফারেন্সে উপস্থিত কাগতিয়ার গাউছুল আজমের অগনিত অনুসারী, আশেক ও তরিক্বতপন্থী সহ সর্বস্তরের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। চট্টগ্রাম বায়েজিদস্থ গাউছুল আজম সিটির কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ কমপ্লেক্স ময়দানে অনুষ্ঠিত এ তরিক্বত কনফারেন্সের আয়োজন করে অরাজনৈতিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, ইসলামের খেদমতে নিবেদিত মুহিউচ্ছুন্নাহ্ কালজয়ী মনীষী কাগতিয়ার গাউছুল আজমের সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে রয়েছে অসামান্য অবদান। দেশ ও দেশের বাইরে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, পাঠাগার ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদে গাউছুল আজম সিটিতে সুবিশাল জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে একটি বিশ্বমানের জামে মসজিদ, একটি অত্যাধুনিক কামিল মাদ্রাসা, একটি ডিজিটাল লাইব্রেরী, একটি ঐতিহ্যময় আধ্যাত্মিক গবেষণা কেন্দ্র ও একটি যুগোপযুগী বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রামে এ গাউছুল আজম সিটি একটি এবাদত, রিয়াজত এবং জ্ঞান-চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্বে কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, সিএমপি পুলিশ কমিশনার মোহাঃ আব্দুল জলিল মন্ডল, বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদার্রেছীন এর মহাসচিব আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব ফরিদ উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী, মদিনা ট্যানারিজ এর স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব আবু আহমদ, এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক মুহাম্মদ ফোরকান মিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, কাগতিয়া দরবার ও মুনিরীয়া যুব তবলীগের সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার যুবকের শৃঙ্খলা, অমায়িক ব্যবহার ও আল্লাহভীতি দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চরম এ সংকটকালে সকলের কাছে যা একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আলহাজ্ব মাহাবুবুল আলম তালুকদার বলেন, যুগশ্রেষ্ঠ অলী কাগতিয়ার গাউছুল আজম দেশ ও জাতির সম্পদ। আর এ মহান আধ্যাত্ম্কি ব্যক্তিত্বের বর্ণাঢ্য জীবন, দর্শন ও কর্ম যুবকদেরকে আজীবন আলোর পথ দেখাবে। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক ফোরকান মিয়া বলেন, কাগতিয়ার গাউছুল আজম অন্ধকারে নিমজ্জিত পথভ্রষ্টদের আলোরদিশারী এবং তাঁর জীবন দর্শন আলোর পথে অভিযাত্রীদের জন্য পথ চলার সোপান। এ মহান মনীষীর ফুয়ুজাতে ও বরকতে দিন দিন প্রাচুর্যতায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ ও জাতি।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আবুল মনছুর বলেন, সকল অসুন্দর থেকে সুন্দরের দিকে প্রত্যাবর্তন এবং ব্যক্তিচরিত্রের উন্নয়ন ঘটাতে তাওয়াজ্জুহ্ সমৃদ্ধ গাউছুল আজমের অনুসৃত এই তরিক্বত অনন্য মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে। দেশের সকল স্তরের শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ তরিক্বত সাধনায় জীবনের শুরু থেকেই সচ্চরিত্রবান হয়ে গড়ে ওঠবে। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এর পরিচালক মোহাম্মদ মোনতাহার উদ্দীন সাকিব,চবি আইন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ তালুকদার, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারীজ এর প্রভাষক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সরকার, চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ প্রমুখ।

তরিক্বত কনফারেন্সকে কেন্দ্র করে নগরীর বায়েজিদে গাউছুল আজম সিটির কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ কমপ্লেক্স ও এর বিশাল এলাকা সহ কমপ্লেক্সস্থ আল-ফজল মুনিরী গাউছুল আজম হিফজুল কোরআন বিভাগের ভবন আলোকসজ্জিত করা হয়। এতে করে গাউছুল আজম সিটি সহ এর আশপাশের এলাকায় এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয় ও এলাকাবাসীদের মনে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। এছাড়া সপ্তাহ জুড়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে তোরণ উত্তোলন, প্রধান প্রধান সড়কের আইল্যান্ড সমূহ কোরআন-হাদিসের বাণী, দরুদ, গাউছুল আজমের বাণী সম্বলিত ব্যানার ও ফেষ্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়।

বেলা ১ টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা গাউছুল আজম সিটিতে আসতে শুরু করে। আছরের আগেই কনফারেন্সস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাগরিবের সময় তা এর আশেপাশের এলাকা ও রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম হানফি, আল্লামা কাজী আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকী, উপাধ্যক্ষ বদিউল আলম আহমদী, আল্লামা মোহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা এমদাদুল হক মুনিরী, আল্লামা সেকান্দর আলী ও আল্লামা মুহাম্মদ ফোরকান।

কনফারেন্সে মিলাদ-কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা কাগতিয়ার গাউছুল আজমের দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। এসময় লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন আমিন ধ্বনিতে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সূচনা হয়।



মন্তব্য চালু নেই