আদ-দ্বীনে চাকরি নিলেন বাবুল আক্তার

বহুল আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ নিয়েছেন।

রাজধানীর মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালের পরিচালক তিনি। নিয়মিত অফিসও করছেন।

আদ-দ্বীনে কাজ নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে পরিচালক হিসেবে যোগ দেয়ার বিষয়টি।

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি চান বাবুল আক্তার। পরে চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করেলও তা ফেরত পাননি।

এরপর থেকে নিজেকে আড়াল করে নেন বাবুল আক্তার। ১ নভেম্বর থেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে চাকরি নেন তিনি।

৫ জুন চট্টগ্রামে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। সাত মাসের তদন্তেও পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা সামনে আসে। হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সন্দেহভাজন আসামি মুসা সিকদার ওরফে আবু মুসা ও তার সহযোগী কালু। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় দুই সন্দেহভাজন রাশেদ ওরফে ভাগিনা রাশেদ ও আবদুল নবী।

এসব ঘটনা এবং বাবুল আক্তারের চাকরি ছাড়া বা ফিরে পাওয়ার আবেদন সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে।

৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বাবুল আক্তারকে। ১ নভেম্বর তিনি আদ-দ্বীন হাসপাতালে যোগ দেন। তবে কী পদে যোগ দিয়েছেন, তা জানাতে পারেননি মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বাবুল সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার কিছু না কিছু করতেই হতো। তাই সে নতুন চাকরি নিয়েছে। এতে বাবুল তার মানসিক চাপ থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে পারছে।’

আদ-দ্বীন হাসপাতালের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাবুল আক্তার হাসপাতালের বেতনভুক্ত পরিচালক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে দেখাশোনা করছেন এবং নিয়মিত অফিস করেন।

সাত মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মিতু হত্যার সাত মাস চলে গেছে। কিন্তু কী কারণে তিনি খুন হয়েছেন, সে তথ্য এখনও সামনে আসেনি। হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুটি মামলা রয়েছে দুই থানায়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা হয় বাকলিয়া থানায়। অস্ত্র মামলায় দুই আসামি এহতেশামুল হক ভোলা ও তার কর্মচারী মনির হোসেনের বিচার শুরু হয়েছে।

তবে হত্যা মামলার তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ মুসাকে গোয়েন্দা পুলিশ খুঁজছে। তাদের মতে, মুসাকে পাওয়া গেলেই মিতু হত্যার নির্দেশদাতা কে, তা বের করা যাবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান শনিবার বলেন, ‘হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বা বাধ্যবাধকতা নেই। তাছাড়া মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত না করে তাড়াহুড়া করে এ মামলার তদন্ত শেষ করতে চাইছি না আমরা। এটি স্পর্শকতার মামলা বিধায় সময় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’

তদন্ত কতদিনে শেষ হতে পারে বা মুসাকে আদৌ পাওয়া যাবে কি? কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে মামলার বাদী ও মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথাও বলেছি।’

বাবুল আক্তার এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

বন্দুকযুদ্ধে দুই আসামির মৃত্যু
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠাণ্ডাছড়িতে গোয়েন্দা পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সন্দেহভাজন আসামি রাশেদ ওরফে ভাগিনা রাশেদ ও আবদুল নবী।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল, একটি এলজি, ২টি কিরিচ ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে তারা। রাশেদ ও নবী দু’জনের বাড়িই রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে।

এদের মধ্যে নবী মিতুকে ছুরিকাঘাত করে বলে আদালতে দুই আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। আর রাশেদ কিলিং মিশনের সময় ঘটনাস্থল থেকে খুনিদের সহযোগিতা করেছিল বলে পুলিশ দাবি করছে।

মুসা ও কালুর খোঁজ মিলছে না
পুলিশ বলছে, মিতু হত্যার সন্দেহভাজন মূল হোতা আবু মুসা ও তার সহযোগী কালু আত্মগোপনে আছে। তবে পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, মুসাকে ঘটনার কয়েক দিন পর বন্দর থানা এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে খোঁজ মিলছে না তার। তা অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, মুসাকে তারা আটক কিংবা গ্রেফতার করেনি। তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই