‘আদালতের আদেশ দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করা যায় না’

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমনের শেষ চেষ্টা হিসেবে আদালতকে ব্যবহার করে বর্তমান অবৈধ সরকার ও আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই স্বীকার করে নিয়েছে বলে দাবি করেছে ২০ দলীয় জোট। একই সঙ্গে জোটটি বলেছে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আদালতের আদেশ দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কখনো স্তব্ধ করা যায় না।

সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এ সব কথা বলেন।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গই শাসন বিভাগের হাতে বন্দী। এক ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন হচ্ছে বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগে। ফলে রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের চূড়ান্ত শিকারে পরিণত হয়েছে আজ দেশ ও জাতি। মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকারের শেষ চিহ্নটুকু বিলুপ্ত প্রায়। বিচার বিভাগকে বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে সরকার।

তিনি বলেন, চূড়ান্ত দলীয়করণ ও বিচারক অভিশংসন আইন বিচারিক নৈরাজ্য সৃষ্টির মূল কারণ। ফলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্যহীনতার শেষ পরিণতি ভোগ করছে জাতি। স্বাধীনতা পরবর্তী মুজিব সরকার বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ বিভাগে পরিণত করেছিল সাংবিধানিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণের ইতিহাস।

সালাহউদ্দিন বলেন, আইন বিভাগ অর্থাৎ সার্বভৌম সংসদ এখন ‘বিকাশ মার্কা’ এমপিদের আড্ডাখানা। জাতীয় সংসদ এখন জাতীয় বিষয়াদি ও আইন প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দু নয়। এটা এখন বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গতকাল বিষোদ্গার করেছেন, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে যে মাত্রাজ্ঞানহীন, ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর বাড়াবাড়ি আপনি প্রদর্শন করছেন তার পরিণাম কখনই শুভ হবে না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ, জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা ও গণগ্রেফতারের দায়ভার হুকুমদাতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। রাষ্ট্রশক্তির দমন-পীড়নের প্রতিক্রিয়ায় গণশক্তির বহুমাত্রিক উত্থান হয়েছে আজ। সেই গণশক্তির সুনামীতে স্বৈরশাসকরা খড়-কুটোর মতো ভেসে যাবে অচিরেই।

নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার কেবল টেলিভিশনেই অস্তিত্ব ধরে রেখেছে দাবি করে সালাহউদ্দিন সরকারের উদ্দেশে বলেন, টেলিভিশনের বাকশো থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের আওয়াজ শুনুন। পুলিশ পাহারা পরিত্যাগ করে মন্ত্রী-নেতাদের রাস্তায় ও এলাকা সফর করতে বলুন। তাহলেই সরকারের দিগম্বর দানবীয় চেহারা দেখা যাবে।

তিনি গতকাল মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বিএনপি নেতা কাজী মশিয়ার রহমানকে ওসি বিপ্লব কুমার নাথের নেতৃত্বে গুলি করে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন। একইভাবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে রানীরবন্দর শাখার ছাত্রশিবিরের সভাপতি মতিয়ার রহমানকে যৌথবাহিনী প্রকাশ্যে গুলি ও নৃশংস অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করে বলে দাবি করেন। সরকারী বাহিনীর এহেন জঘন্য নরহত্যার তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানান তিনি। এ সব ঘটনায় দোষীদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবতাবিরোধী আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনসহ সকল গণদাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ-হরতাল এবং গণআন্দোলন অব্যাহত থাকবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘সংগ্রামী জনতার বিজয় আসন্ন।’



মন্তব্য চালু নেই