আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
দেশকে ভালবাসার আহ্বান জানিয়ে শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে জাতির পিতার জন্ম, এখানেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তোমরা এ মাটির সন্তান। তোমাদের আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, দেশকে ভালবাসবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে। নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে তোমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারো। ভবিষ্যতে আমার মত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারো।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ মসজিদ কমপ্লেক্স চত্বরে আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক অভিভাবক ও শিক্ষকরা শিশুদের খোঁজ খবর রাখবেন। শিশুরা স্কুলে উপস্থিত আছে কি না দেখবেন। উপস্থিত না থাকলে খোঁজ খবর নিবেন। যাতে তারা বিপথগামী হয়ে কোনো প্রকার অপরাধ বা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে। জাতির পিতা শিশুকাল থেকে শিশুদের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তা সকল শিশুদের জানাতে হবে।
শিক্ষার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি তখনই দেশকে উন্নয়ন, খাদ্য ও শিক্ষা নির্ভর করতে চেয়েছি। ৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন ও শিক্ষনীতি চালু করেন। আমরা ক্ষমতায় এসে আবার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। বিনামূলে বই বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি ত্রিশ লাখ গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছি।যা মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মায়েদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। তাদের পুষ্টিবান হতে হবে। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। যাতে তারা বিপথে চলে যেতে না পরে। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। ভালবাসা দেখাতে হবে এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। কিন্তু ধর্মান্ধতা যেন না আসে। ধর্ম মানুষকে খুন করার অধিকার দেয়নি। প্রত্যেকটি ধর্ম শান্তির বাণী প্রচার করে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমি আমার মা, বাবা, ভাই সকলকেই হারিয়েছিলাম। আমি চাই না যে, কোনো ছেলে মেয়ে একদিনে বাবা, মা, ভাই, বোনকে হারাক। আমরা চাই এদেশ এমন হয়ে উঠবে যা আমার পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কারাগারে বাবাকে দেখতে যেতাম। দুখি মানুষের শোষণ-নিপীড়নের কথা বলায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল।
শিশু উপমা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শিশু সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, ঢাকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মনির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু প্রতিনিধি ফাইয়াদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
শিশু সমাবেশে বক্তব্য শেষে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শক সাড়িতে বসে কাব্যনৃত্যগীতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এরপর তিনি শিশুদের সঙ্গে ছবি তুলেন, বই মেলার উদ্বোধন ও সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। পরে তিনি ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
এর আগে সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ৩০ মিনিট পরে রাষ্ট্রপতি এসে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তারা দুজনে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে।
এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য বইতে স্বাক্ষর করেন।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
মন্তব্য চালু নেই