আত্মহত্যা করা মুক্তিযোদ্ধাকে ‘চেনেন না’ সচিব
‘গলাধাক্কা খেয়ে’ অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার কথা ‘মনে করতে পারছেন না’ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত সচিব এম এ হান্নান।
তিনি দাবি করেছেন, ওই মুক্তিযোদ্ধা চিরকুটে যে বর্ণনা দিয়ে গেছেন সে রকম ঘটনা তার বাসায় বা মন্ত্রণালয়ে ঘটেনি, তিনি তাকে চেনেনও না।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তোপখানা রোডের কর্ণফুলী হোটেলের ২০৪ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইয়ুব খানকে (৬২) উদ্ধার করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
ঘটনার পর পুলিশ জানায়, আত্মহত্যার জন্য তিনি বিষ খেয়েছিলেন। ওই বিষেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার কক্ষ থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে একজন সচিব তাকে অপমান করেছেন বলে লেখা রয়েছে।
এ ঘটনায় তার মামাতো ভাই আমিন হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
এদিকে অপমানিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবের আত্মহত্যার ঘটনায় সচিবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্বজনরা। আর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার।
মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবের ভাগ্নে মো. লোকমান হোসেন বলেন, “মামা এভাবে এভাবে সচিবের দ্বারা অপমানিত হয়ে মারা যাবেন তা ভাবা যায় না। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।”
চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, “আইয়ুব খানের আত্মহত্যা দুঃখজনক। তিনি কার দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন তা তদন্ত করে দেখা উচিত।”
ঘটনার পর মঙ্গলবার অভিযুক্ত সচিব এম এ হান্নানকে পাওয়া না গেলেও বুধবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ওই মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি চেনেন না।
“প্রতিদিন অনেক মানুষ মন্ত্রণালয়ে আসেন, মন্ত্রীও আমার সঙ্গে দেখা করেন। ওই মুক্তিযোদ্ধাও আসতে পারেন। তবে যেসব কথা বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হয়েছে সেরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।”
“বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হয়েছে, তিনি শুঁটকি, মাছ ও টাকা আমাকে দিয়েছেন। আবার আমার বাসায় গিয়ে অপমানিত হয়েছেন। তাই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।”
নিজের বাসায় যে কেউ সহজে ঢুকতে পারেন না জানিয়ে সচিব বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ইস্কাটন গার্ডেন, এমনকি আমার মন্ত্রণালয়েও হয়নি।”
মৃত্যুর আগে একজন মানুষ কোনো কারণ ছাড়া কাউকে জড়াবে কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা আমারও প্রশ্ন? আমিতো শুঁটকি মাছ কখনও খাইনি, শুঁটকির গন্ধ সহ্য করতে পারি না।”
তাছাড়া যে জেলা কমান্ড গঠন করার কথা চিরকুটে উল্লেখ রয়েছে তা তার নিজের অধীনে নয় বলেও দাবি করেন এম এ হান্নান।
“তারপরও বলবো- এভাবে মৃত্যু দুঃখজনক। উনার যদি মনে হয়ে থাকে আমার দ্বারা তিনি অপমানিত হয়েছেন, তাহলে সাংবাদিক সম্মেলন করতেন, মন্ত্রীকে জানাতেন।”
স্বজনরা জানিয়েছেন, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবকে বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের মরফলা গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই