আত্মগোপনে থেকেই নির্বাচন?

আত্মগোপনে থেকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ আত্মগোপনে থাকা এসব নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগাম জামিন না নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিএনপি বলেছে- যেসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বা যারা গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে আছে তাদের বের হওয়ার সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আগাম জামিন না নিয়ে কেউ আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হলে বা প্রচারে অংশ নিলে, তার বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখি দল। সিটি করপোরেশন দলীয় নির্বাচন নয়, এটি স্থানীয় নির্বাচন। এরপরও সিটি নির্বাচনকে বিএনপি গুরুত্বসহকারে দেখছে। যেসব নেতাকর্মী মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে আছে তাদের বের হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যেন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।’

এদিকে আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপি সমর্থিত ছয় প্রার্থী। এদের মধ্যে তিনজন রয়েছেন আত্মগোপনে। বাকি তিনজন কারাগারে। তবে গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে থাকা প্রার্থীদের কেউই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে রিটার্নিং অফিসের কার্যালয়ে যাননি। সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের পক্ষের লোকজন অনেকটা চুপিচুপি রিটার্নিং অফিসের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীরাও তাদের পক্ষের লোকজন দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে ‘গ্রেপ্তার আতঙ্ক’ নিয়েই অনেকে কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কেউ কেউ গিয়েছিলেন নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য জানতে। আবার অনেককেই কার্যালয়ের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত কয়েক দিনে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের তুলনায় আওয়ামী লীগপন্থি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বেশি। কিন্তু সরকারি ছুটির দিনেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসের কার্যালয় ছিল খোলা। ফলে গত কয়েক দিনের তখন তুলনায় কার্যালয়ে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের লোকজনের আনাগোনা ছিল বেশি।

সূত্র মতে, আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অংশ নেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও ইতোমধ্যে ছয়জন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেয়র মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

এরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টু, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু, মহানগর বিএনপির নেতা আবুল বাশার ও বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষক নেতা সেলিম ভুঁইয়া। এদের মধ্যে পিন্টু, বাশার ও সেলিম ভুঁইয়া কারাগারে অন্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস, আবদুস সালাম ও আব্দুল আওয়াল মিন্টু অনেক দিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা কেউই রিটার্নিং অফিসের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের পক্ষের লোকজন। এসব প্রতিনিধিরাই চুপি চুপি কার্যালয়ে এসে বিভিন্ন খোঁজ খবর নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে আইনজীবীর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু। পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টু কারাগারে আছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পিন্টুর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খান। কারাগারে থাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবুল বাশার ও বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষক নেতা সেলিম ভুঁইয়াও প্রতিনিধি পাঠিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীরা অনেকটা চুপিসারে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদের অনেককেই রিটার্নিং অফিসের কার্যালয়ের চারপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। অনেকে ছিলেন ভয়ে। কারণ তাদের নামে মামলা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে।

স্বাধীনতা দিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা নিজেরা না এসে সমর্থিত ব্যক্তির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গত বুধবারও বেশ কয়েকজন মেয়রপদসহ কাউন্সিলর পদে বিএনপিপন্থি সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

দক্ষিণের বিএনপিপন্থি একজন কাউন্সিলর প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘সবাই তো জেলে। নির্বাচন করবে কে? পুলিশের ভয়ে কেউ মাঠে নেই। তাহলে কাদের নিয়ে কাজ করবো আমরা?’

উত্তরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম নিখোঁজ দীর্ঘদিন ধরে। তার বোন মারুফা ইসলাম একই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন রুবেল নামের ব্যক্তি।

আটক হওয়ার ভয়ে নিজে মনোনয়নপত্র নিতে আসনেনি বিএনপির বনানী থানার সদস্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন। তার পক্ষে উত্তরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন কিনেন ছোট ভাই কিবরিয়া।

তিনি  বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন করার আগ্রহ আছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অনেকে বের হতে পারছেন না। অনেকেই খোঁজ খবর নিচ্ছেন, সবার ভয় একটাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হলে কিংবা কেউ প্রচারে অংশ নিলে পুলিশ যদি গ্রেপ্তার করে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার বিএনপির বিজয় বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত।’



মন্তব্য চালু নেই