আট দফা দাবিতে ৬ নভেম্বর দেশব্যাপী ট্রাক ধর্মঘট
পুলিশি হয়রানি-চাঁদাবাজি-হয়রাণিমূলক মামলা-ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও রেকার বাণিজ্যবন্ধসহ আট দফা দাবিতে আগামী ছয় নভেম্বর সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
সোমবার বিকাল তিনটার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে আলোচনা সভা থেকে দেশব্যাপী এই ধর্মঘট সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদেও আহবায়ক রুস্তুম আলী খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, যতটুকু জানি দেশের সাধারণ শ্রমিক-মালিকদের নিরাপত্তার জন্য হাইওয়ে পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা কাস্টমস অফিসারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। হাইওয়ে পুলিশের নির্যাতনের আজ আমরা নির্যাতিত-নিপীড়িত। পুলিশের এই অত্যাচারে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন। আমরা ধার-দেনার মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাস্তায় যদি কোনো গাড়ি আটক করা হয় তখন ঐ গাড়ি ছাড়ানোর জন্য স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিকাশ করে পাঠানোর পর ঐ গাড়ি ছাড়া হয়, এর আগে নয়। অথচ সব দোষ দেয়া হয় আমাদেও ওপর। বাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদেরও ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, অথচ ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বাসের কারনে। তিনি বলেন, সড়কে ডিভাইডার দিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে।
পুলিশি হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, হয়রাণিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ বন্ধসহ আট দফা দাবিতে আগামী ছয় নভেম্বর ঘোষিত ধর্মঘট সফল করার দাবি জানানো হয়।
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে আয়োজিত সমাবেশে ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব কাউছার আহম্মেদ পলাশও অনেকটা একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি ও অত্যাচারে মালিক শ্রমিকরা আজ অতিষ্ট। আমরা আজ নির্যাতিত-লাঞ্চিত।
কথায় কথায় গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও গাড়িতে রেকার লাগানোর কারনে মহাসড়কে পণ্য পরিবহন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে আমরা একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগের ফল হয়েছে উল্টো, চাঁদাবাজি আরো বেড়ে গিয়েছে।
ধারাবাহিক এই নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং আগামী ছয় নভেম্বর ধর্মঘট সফল করার জন্য আগামী পাঁচ নভেম্বর দুপুর আড়াইটায় মতিঝিলের বক চত্বর থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে পতাকা মিছিল হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের সমালোচনা করে নেতারা বলেন, তিনি ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা দেয়ার কথা বলেও আজ পর্যন্ত আমাদের তা দেয়া হয়নি। কাউছার আহমেদ শ্রমিক ও মালিকেদর সজাগ থাকার আহবান জানান।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. তোফায়েল হোসেন মুজমদার, বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এ্যাজেন্সী মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মকবুল আহম্মেদ, বাংলাদেশ ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মনির, আন্ত:জেলা ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিল্লাত হোসেন, ঢাকা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মোনায়েম খান, নরসিংদী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মানিক মৃধা, নয়ারহাট বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি বাসেত দেওয়ান, ঢাকা জেলা ট্রাক কভার্ডভ্যান- -ট্যাংকলরী-মিনিট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুছ, নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাক-কভার্ডভ্যান-ট্যাংকলরী চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদুর রহমান মানিক, গাজীপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির শাহাবুদ্দিন সাহা এবং গাজীপুর জেলা ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাষ্টারসহ বিভিন্ন নেতৃত্ববৃন্দ।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এম এ মালেক বলেন, তারা যদি ত্রুটিপূর্ণ কাজপত্র নিয়ে গাড়ি চালান এবং কাগজপত্রে যদি বিচ্যুতি থাকে তাহলে আমরা তো তা ধরবোই। তবে হাইওয়ে পুলিশ করার পর চুরি ডাকাতি অনেক কমে গেছে। সাধারণ মানুষ এখন নির্বিঘ্নে মহাসড়ক পথে যাতায়াত করতে পারছে।
মন্তব্য চালু নেই