আজ ফারাক্কা দিবস : গঙ্গা পানি চুক্তি রিভিউয়ের দাবি
আজ ১৬ মে, ফারাক্কা দিবস। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির ১৯ বছর পার হতে চললেও শুকনো মৌসুমে পানি সংকট বেড়েই চলেছে উত্তর জনপদের অন্যতম জেলা পাবনায়।
চুক্তির পানি দিয়ে চাহিদার অর্ধেকই পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পদ্মা ও এর সব শাখা নদী আজ মৃত। হুমকীর মুখে পদ্মার দুই পাড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় পাশ হয়েছে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল। এ নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। এখন গঙ্গা পানি চুক্তি রিভিউ করার দাবিতে গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষক ও পরিবেশবিদরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুময়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ বছরের পানি চুক্তি হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড় ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হায়দরাবাদ হাউজে ঐতিহাসিক ৩০ শালা পানি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা ভারতের।
দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু-একবার বাদে বেশিরভাগ সময়ই ভারত-বাংলাদেশকে কম পানি দিয়ে আসছে। পানির অভাবে পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর নিচে জেগে উঠে বিশাল চর। পানি শূন্যতার কারণে চাষাবাদসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুময়তা দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি কমতে কমতে পদ্মা অনেকটা খালের আকার ধারণ করেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে দশটি পিলারের নিচে পানি নেই। পানি শুকিয়ে নদীতে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। আর সেই বালু চরে চলছে চাষাবাদ। পদ্মার শাখা-উপশাখার অবস্থা আরো করুন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমিশনের (জেআরসি) পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত এপ্রিলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী বেশি পানি পাচ্ছে বাংলাদেশ।
পাকশী এলাকার কৃষক আবুল হোসেন ও মৎসজীবী বছির উদ্দিন বলেন, এই পদ্মার পানির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙতো। কিন্তু সেই পদ্মায় আজ পানি নাই, সেচ অভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। নদীতে মাছ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার জেলে। এক সময় এই নদীতে ইলিশসহ বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন সেসব স্বপ্নের মতো।
নদী গবেষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুরতে চুক্তি অনুযায়ী পানি পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ সময়ই চুক্তি অনুযায়ী পানি পাওয়া যায়নি। শুকনো মৌসুমে পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর উজান ও ভাটিতে পদ্মার পানির স্তুর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা পরিণত হয়েছে ছোট নদীতে। একই কারণে মরা নদীর খাতায় চলে যেতে বসেছে আরো ১৭টি নদী।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি হয়েছিল সেই ১৯ বছর আগে। এর মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে, পানির চাহিদা বেড়েছে, অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। তাই পদ্মাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং এ অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে গঙ্গা পানি চুক্তি রিভিউ করতে হবে। তাহলে আমরা পদ্মাপাড়ের মানুষ স্বস্তি পাব।
পরিবেশবিদ ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শাহনেওয়াজ সালাম বলেন, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসংশ্লিষ্ট এলাকা। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আজ হুমকীর মুখে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমার মনে হয় নতুন করে গঙ্গা পানি চুক্তি হওয়া দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগ পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রইচ উদ্দিন বলেন, ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে গড়ে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বর্তমানে আমরা বেশি পানি পাচ্ছি। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবারের (১৪ মে) পরিমাপ অনুযায়ী পানি পাওয়া গেছে ৯৮ হাজার কিউসেক। গত বছরের এই দিনে পানি পাওয়া গিয়েছিল ৬০ হাজার কিউসেক। আর পানির লেবেলটা বর্তমানে রয়েছে ৬ দশমিক ২৪ মিটার। গত বছরের এই সময় সেটা ছিল ৫ দশমিক ৪১ মিটার। তিনি বলেন, এখন আমাদের সমস্যা নেই। তবে সামনে শুকনো মৌসুম আসছে। তখন দেখতে হবে কী পরিমাণ পানি পাওয়া যায়।
মন্তব্য চালু নেই