আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
সারাদেশে রোববার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে। প্রায় এক হাজার ৪০০ বছর আগে আজকের এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তৌহিদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই মহামানব। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। তাঁর আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির ললিত বাণীর প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইসলাম ধর্ম মতে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তের সিলসিলায় শেষ নবী। তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল মোসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন। মোসলমান সম্প্রদায় দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৩৬ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মসচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান। মিলাদ ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব প্রফেসর মাওলানা সালাহ উদ্দিন। প্রখ্যাত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী না’তে রাসূল (সা.) পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, ‘মানবতার দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এ আদর্শ অনুসরণ করতে হবে তাহলেই আমাদের জীবনে শান্তি আসবে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হচ্ছে।’ রাষ্ট্রীয়ভাবে এ অনুষ্ঠান সারাদেশে পালিত হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘বিশ্ব মানবের শান্তির জন্যই মহানবীকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিষয়ে ওয়াজ করেন জাতীয় মসজিদের খতীব প্রফেসর মাওলানা সালাহ উদ্দিন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর শায়খ আল্লামা খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী।
এদিকে সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ইসলামিক বই মেলারও উদ্বোধন করেছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এবারের বই মেলায় দেশের খ্যাতনামা ইসলামিক প্রকাশনাগুলোর স্টল রয়েছে।
পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ মাহফিল, ইসলামী বইমেলা, সেমিনার, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান ও ক্বিরআত ও হামদ-না’ত মাহফিল।
ওয়াজ মাহফিল
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ ও উলামায়ে কেরাম ওই মাহফিলে বয়ান করবেন।
সেমিনার
বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ৪ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মিলানায়তনে বাদ আসর অনুষ্ঠেয় সেমিনার রেকর্ড করে বাংলাদেশ বেতার তা প্রচার করবে।
ইসলামী ক্যালিগ্রাফি ও মহানবী (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক পোস্টার ও গ্রন্থ প্রদর্শনী
৩ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর সাহানে। প্রতিদিন বাদ যোহর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
ইসলামী বইমেলা
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ইসলামী বইমেলা। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে চলবে এ মেলা। মেলায় কুরআন-হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামী পুস্তক বিশেষ কমিশনে পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
আগামী ১০ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মিলনায়তন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের মহিলা নামাজকক্ষে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে- ক্বিরআত, আযান, হামদ-না’ত, কুরআন-হাদিসের আলোকে গল্প বলা, উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতা। বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার ও সনদপত্র দেয়া হবে।
অটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান
সুইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের জন্য আগামী ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মিলনায়তনে ক্বিরআত, আযান ও হামদ-না’ত বিষয়ে ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার ও সনদপত্র দেয়া হবে।
ক্বিরআত ও হামদ-না’ত মাহফিল
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে আগামী ১২ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি বাদ মাগরিব যথাক্রমে হামদ-নাত ও ক্বিরআত মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
রাসূল (সা.)-এর শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর
আগামী ১৪ জানুয়ারি বাদ আসর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে রাসূল (সা.)-এর শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা আয়োজন করেছে। সিরাতুন্নবী (সা.) উদযাপন জাতীয় কমিটি পবিত্র রবিউল আউয়াল উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ক্বেরাত, হামদ-না’ত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন সিরাতুন্নবী (সা.) উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেইমর সাবেক মহা-পরিচালক মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
‘ক’ ও ‘খ’ এই দুই গ্রুপে প্রতিযোগীরা সকাল ৯টায় নাম রেজিস্ট্রেশন করবেন এবং ১০টা থেকে মূল প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ক গ্রুপ: ৩য়-৫ম শ্রেণী, খ গ্রুপ: ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। ক্বেরাত : ‘ক’ গ্রুপ: সূরা ইখলাস/ সূরা কাওসার। ‘খ’ গ্রুপ: সূরা নসর/ সূরা ফিল। আবৃত্তি : ‘ক’ গ্রুপ: কবিতা ‘হাজার সালাম’ কবি : সাজজাদ হোসাইন খান। ‘খ’ গ্রুপ: কবিতা ‘আজাদ’ কবি : কাজী নজরুল ইসলাম। হামদ-না’ত : উভয় গ্রুপের জন্য উম্মুক্ত। বিজয়ী প্রতিযোগীদের জন্য থাকছে নগদ অর্থসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার।
মন্তব্য চালু নেই