আজ পবিত্র ঈদুল আজহা
আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মুসলমান উদযাপন করবেন এ ধর্মীয় উৎসব। চাঁদ দেখার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে এবার জিলকদ মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হওয়ায় সেই হিসেবে ১০ জিলহজ মোতাবেক ২৫ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। কারণ, হিজরি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করে থাকেন।
মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা শুধু পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এ ঈদ সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান আছে।
এবার ঈদে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি থাকবে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় এবার ঈদে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রকৃতপক্ষে মাত্র একদিন ছুটি ভোগ করতে পারবেন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা ও হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সকালেই মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে আসবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য। নামাজের খুতবায় তুলে ধরা হবে কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় করবেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে।
নামাজ শেষে অনেকেই যাবেন কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে করজোড়ে মোনাজাত করবেন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও সুসংহত করবে।
প্রধানমন্ত্রী ত্যাগের মহিমায় ভাস্কর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলিম ভাই-বোনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।
সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সড়ক সজ্জিত করা, আলোকসজ্জার ব্যবস্থা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে ঈদের দিন উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত সকাল ৮ টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান। বিকল্প ইমাম থাকবেন ঢাকার মিরপুরের শায়খুল হাদিস মুফতী ওয়াহিদুজ্জামান।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭ টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯ টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০ টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদে আজ সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ঈদের জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য চালু নেই