ঢাকা ট্রিবিউনের জরিপ :
আগাম নির্বাচন চায় বেশিরভাগ মানুষ
নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করে বেশিরভাগ মানুষ। সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষে সামাজিক ও বাজার গবেষণা সংস্থা আইআরসি লিমিটেড পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য জানা যায়।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০০ জন মানুষের ওপর চালানো টেলিফোন-জরিপে আরো দেখা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি মানুষ।
জরিপে চলতি সরকারকে সফল বলে রায় দিয়েছে জরিপে অংশ নেয়া ৬২ শতাংশ মানুষ। আবার একইসঙ্গে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের ব্যর্থ বলেছে ৬২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
এতে বলা হয, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ওপরই ভরসা রাখছে বেশি। এই বয়সসীমার ৪৮ শতাংশই বিএনপির পক্ষে, আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে বলে জানিয়েছে ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে ভবিষ্যদ্বাণী দিতে গেলে বিএনপির ভাগ্যই সুপ্রসন্ন বলতে হবে।
এদিকে, ছয় মাস আগে একই প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৫৩ শতাংশ জনগণ চায় বর্তমান সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করুক। তখন জরিপে অংশ নেয়া ২৫ শতাংশ জানিয়েছিল, তারা এক বছরের মধ্যেই নির্বাচন দেখতে চায়। ছয় মাস পর আগাম নির্বাচনের পাল্লা ভারি হয়েছে এবং বিপরীতে কমেছে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন প্রত্যাশীর সংখ্যা।
সরকারের যত ব্যর্থতা
গত এক বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই। সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বলেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। দুর্বল অবকাঠামোর কথা বলেছেন ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বেকারত্বের কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। দুর্বল অর্থনীতির কথা বলেছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলেছেন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কট তথা রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বলেছেন ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। সরকার সাধারণ মানুষের অধিকার সমুন্নত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ। দুর্বল প্রশাসনের কথা বলেছেন ২ দশমিক ১ শতাংশ। কৃষিখাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে, গত এক বছরে সরকারের সামগ্রিক ভূমিকাকে অত্যন্ত সফল মনে করেন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং শুধু সফল মনে করেন ৬০ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ৭১ দশমিক ৭ শতাংশই মনে করছে বর্তমান সরকার সফল। অন্যদিকে সরকারকে ব্যর্থ মনে করছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।
সাফল্যের খাত
বড় সাফল্যের তালিকায় উঠে এসেছে শিক্ষা। পরের অবস্থানে রয়েছে অবকাঠামো। ২৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করে শিক্ষা খাতে সরকার সফল। ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন ফ্লাইওভার, ব্রিজ, সড়ক-মহাসড়কের মতো অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকার সফল। ৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন বিদ্যুৎ সংকটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে এবং ৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র কমেছে।
কৃষিতে উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করেন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারের সফলতার তালিকায় আইসিটি তথা ডিজিটাল বাংলাদেশকে রেখেছেন ২ দশমিক ৮ শতাংশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা শাস্তির কথা বলেছেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা বলেছেন ১ দশমিক ৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির কথা বলেছেন ১ শতাংশ।
অর্থনীতিতে সরকারকে সফল মনে করেন প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে অত্যন্ত সফল মনে করে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে সরাসরি ব্যর্থ মনে করেন ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারকে খুব সফল মনে করেন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ। সফল মনে করেন ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে ব্যর্থ মনে করেন ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। একেবারেই ব্যর্থ মনে করেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জানেন না ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সরকারকে সফল মনে করেন ৬২ শতাংশ মানুষ। ১০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে ব্যর্থ মনে করেন ২৬ দশমিক ১ শতাংশ।সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সফল মনে করে ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।
সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারকে সফল মনে করে ৬৩ শতাংশ মানুষ। ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর ব্যর্থ মনে করেন ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে দেখতে চান?
বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি কাকে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনার কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার কথা বলেছেন ২২ দশমিক ১ ভাগ। এইচ এম এরশাদের কথা বলেছেন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
আজ নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন?
আজ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিএনপি’র কথা বলেছেন ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় পার্টিকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জামায়াতে ইসলামীর কথা বলেছেন ১ শতাংশ। বিএনপি জোটের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ইসলামী দলগুলোর কথা বলেছেন দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যান্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। না ভোটের কথা বলেছেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
নির্বাচনে কোন দল জিতবে?
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট বিজয়ী হবে বলে মনে করেন ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন নির্বাচনে বিজয়ী হবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। অন্যান্য দলের জোট বিজয়ী হবে বলে মনে করেন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। ৭ শতাংশ বলেছেন তাদের জানা নেই। উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিএনপি ও জোটসঙ্গীদের পারফরমেন্স
সরকারের বৈধতার প্রশ্নে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের সফল মনে করেন ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করে তারা ব্যর্থ। ব্যর্থ বা সফল কিছুই মনে করে না ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্রদের সফল মনে করেন ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করে এক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্ররা ব্যর্থ। ২ শতাংশ মনে করে এক্ষেত্রে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।
জনগণের জন্য অধিকতর ভালো ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্রদের সফল মনে করেন ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ। ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।
আবার বর্তমান সরকারের অধিকতর ভালো বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপনে বিএনপি ও এর মিত্রদের সফল মনে করেন ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ব্যর্থ মনে করে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।
সামগ্রিকভাবে বিএনপি ও মিত্রদের পারফরমেন্সকে সফল মনে করে ৩২ শতাংশ মানুষ। ব্যর্থ কিংবা অত্যন্ত ব্যর্থ মনে করে ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। সফল বা ব্যর্থ কিছুই মনে করে না ২ দশমিক ৭ শতাংশ।–ঢাকা ট্রিবিউন।
মন্তব্য চালু নেই