আইসিসি মানে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’!

শেষ আটে বাংলাদেশের মুখোমুখি ভারত। তখন থেকেই জোর গুঞ্জণ শুরু হয়ে গিয়েছিল, মেলবোর্নে আইসিসি না আবার বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন আগে থেকে তৈরী করে না রাখে।

গুঞ্জন ডাল-পালা মেলার কারণও ছিল। বিশ্বকাপের শুরু থেকে ভারতকে অনৈতিক কিছু সুবিধা দেওয়াতেই এই গুঞ্জণ শুরু হয়। একই সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালের ভেন্যু পরিবর্তণ নিয়েও জোর গুঞ্জণ ওঠে। যদিও এ বিষয়ে পরবর্তীতে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে আইসিসির পক্ষ থেকে। কিন্তু সেটা টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে। স্বভাবতই বিরোধীরা বলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন, ভারতের জন্যই এমন পরিবর্তণ।

আইসিসি যে ভারতের জন্যই মেলবোর্নে বিজয়ের মঞ্চ তৈরী করে রেখেছে সেটা খেলা শুরু হওয়ার পরই বোঝা গেলো। মেলবোর্নের উইকেট তৈরী করা হলো যেন বোলারদের বধ্যভুমি হিসেবেই। পেসারদের জন্য তো এই উইকেটে কিছুই রাখা হয়নি। বাধ্য হয়ে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার থেকেই নাসির হোসেনের মত অকেশনাল বোলারকে ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

তবে ভারতীয় ইনিংসের মাঝ পথে এসে বোঝা গেলো আইসিসি শুধু ভারতীয় ব্যাটিং বান্ধব উইকেটই তৈরী করেনি, আম্পায়ারদেরও হয়তো কোন নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন, ন্যুনতম সন্দেহ তৈরী হলেও কোন সিদ্ধান্ত যেন ভারতের বিপক্ষে না যায়।

মাশরাফির বলে রায়নার এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন ইয়ান গোল্ড। রিভিউতে দেখা গেলো বল লাইনের বাইরে পিচ করেছে। কিন্তু কতটুকু লাইনের বাইরে ছিল আর কতটুকু ভেতরে ছিল, সেটা দেখারও প্রয়োজন বোধ করলেন না টিভি আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস।

রায়নারটা না হয় বাদই দেওয়া গেলো। কিন্তু ৩৯.৩ ওভারে ৯০ রানে থাকা রোহিত শর্মার নিশ্চিত ক্যাচটার কী ব্যাখ্যা দেবে আম্পায়ার আলিমদার, ইয়ান গোল্ড কিংবা আইসিসি? টিভি রিপ্লেতে দেখা গেলো, বলটা হাঁটুর সামান্য ওপরে। তাও ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলেছিলেন রোহিত। কিন্তু আলিম দার নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়েও জানালেন এটি নো বল। আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডও সেটাকে নো ডেকে বসলেন। বেঁচে গেলেন রোহিত। ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ১৯৫।

এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণ টুইটারে লিখলেন, ‘ইয়ান গোল্ডের খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। এটা নিশ্চিত কোমরের ওপরের বল ছিল না। রোহিত নিশ্চিত ভাগ্যবান। এটাই সম্ভবত ২০ রানের পার্থক্য গড়ে দেবে।’

শেন ওয়ার্ন বলেন, ‘এটা নিশ্চিত আউট। কোনভাবেই বল কোমরের ওপরে ওঠেনি। আলিম দার আবারও নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন নিশ্চিত।’ রমায়েক কুপার নামে আরেকজন লিখেন, ‘দুর্ভাগ্য। শর্মা কোনভাবেই এই সেঞ্চুরি পাওয়ার যোগ্য নয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আলিম দারের কাছ থেকে এমন বাজে সিদ্ধান্ত, সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।’

রাজদীপ সরদেশাই নামে একজন টুইটারে লেখেন, ‘আলিম দার জিন্দাবাদ।’ লাইভ এন্টারটেইনার নামে একটি সংগঠন নিজেদের টুইটার পেজে লেখে, ‘পাকিস্তান আলিম দারের সৌজন্যে রোহিত শর্মা ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে ফেলেছে।’

তবে ২০ রানের পার্থক্য নয়, কম করে হলেও ৫০ রানের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন রোহিত। শেষ পর্যন্ত ১২৬ বলে ১৩৭ রান করে আউট হন তিনি। আর ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০২ রান।

রোহিত শর্মাকে আউট না দেওয়ার আম্পায়ারি সিদ্ধান্তের পর ঝড় উঠেছে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুক আর টুইটারেও। সবারই একটা কথা, ‘আইসিসি মানেই হলো ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল কিংবা ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ক্লাব।’ কেউ কেউ লিখেছেন, এত আয়োজ এত কিছু করার কী দরকার, বিশ্বকাপের ঘোষণা দিয়ে কাপটা ভারতকে দিয়ে দিলেই পারে আইসিসি।

11055384_792702664155876_6620348383713269082_n

ফেসবুকে নিজের পেইজে বাংলাদেশের নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে বলছি, আইসিসিকে এই মুহূর্তে খুব ঘৃণ্য মনে হচ্ছে। আমাকে একবার বলুন তো, এটা একটা স্বচ্ছ এবং বৈশ্বিক খেলা! আমার বক্তব্য পরিস্কার করে বলতে চাই, বিশ্বকাপ ফুটবলে কী কোনভাবে, অহেতুক কোন যুক্তিতে কোয়ার্টার ফাইনালের তারিখ কিংবা ভেন্যু পরিবর্তণ সম্ভব? আমি জানি দুর্নীতিতে ফিফা অনেক বেশি জড়িত। তবে এমন নির্লজ্জ কাজ তারাও কখনও কোন টুর্নামেন্টে করেনি। এবার আপনি নির্লজ্জ এই সিদ্ধান্ত এবং আজকের ম্যাচের আম্পায়ারিয়ের সাথে মিলিয়ে নিন। তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন আমি আইসিসির প্রতি এতটা ক্ষুব্ধ। জনাব আম্পায়ার, এটা কোন বিমার ছিল না। এটা নিশ্চিত কোমরের নীচে ছিল এবং ক্লিয়ার আউট। ধরুন এই ঘটনা অন্য কোন দিন ঘটলো। রায়নার বিপক্ষে এলবির আবেদনও নিশ্চিত ইতিবাচক হতো। নিশ্চিত নির্লজ্জ একটি ব্যাপার। ….. বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অঘটনের শিকার….’।

10170797_549175795222653_7228351301451759944_n

বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামার পরও আম্পায়ারদের বিমাতাসূলভ আচরনের শিকার হচ্ছে। তামিমের আউটটা ছিল খুবই বিতর্কিত। ক্যাচটা মাটিতে পড়লো নাকি সরাসরি গ্লাভসে গেলো সেটাও টিভি রিপ্লেতে দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না টিভি আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস। এরপর মাহমুদুল্লাহকেও একই কায়দায় আউট দিয়ে দিলেন। শিখর ধাওয়ান ক্যাচ ধরে বাউন্ডারি লাইনে পা লাগালেও সেটাকে আউট বলে ঘোষণা করে দিলেন স্টিভ ডেভিস।



মন্তব্য চালু নেই