আইসক্রিমে ঘনচিনি ফার্নিচারের রং চট্টগ্রামে দুই কারখানার জরিমানা
ফার্নিচারের রং + ঘনচিনি + সেকারিন + পানি = আইসক্রিম! সমীকরণ দেখে চোখ কপালে উঠলেও ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্য! আইসক্রিম তৈরিতে এসব উপাদানই ব্যবহূত হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার দুটি কারখানায় এই সমীকরণের সত্যতা মিলেছে! এসব কারখানায় দেখা গেছে, ফার্নিচারের রং অর্থাত্ বার্নিশে ব্যবহূত রং, ঘনচিনি, সেকারিন ও পানি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুদের অতিপ্রিয় মালাই আইসক্রিম। আর এরসাথে চরম অস্বাস্থ্যকর কারখানা ও নোংরা পরিবেশ তো আছেই। তারচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে- যেসব কারখানায় এসব আইসক্রিম তৈরি হচ্ছে তারা নিয়েছিল বরফ তৈরির লাইসেন্স।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন ইত্তেফাককে জানান, গতকাল রবিবার চান্দগাঁওয়ের চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় কোহিনুর আইসবার ও লাকী আইসবার ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালানো হয়। কোহিনুর আইসবারের লাইসেন্স আছে মাছ প্রক্রিয়াজাতে ব্যবহূত বরফ তৈরির। কিন্তু তারা অবৈধভাবে আইসক্রিম তৈরি করছে। চরম নোংরা পরিবেশে প্রতিষ্ঠানটি কাঠের ফার্নিচারে ব্যবহূত রং, চিনির বদলে ঘনচিনি, নিম্নমানের সেকারিন ও পানি মিশিয়ে আইসক্রিম তৈরি করছে। সেগুলো প্যাকেটজাত করে বাজারে মালাই আইসক্রিম বলে বিক্রি করছে। অনিয়মের জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া লাকী আইসবারকেও একই কারণে সিলাগালা করা হয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে না পাওয়ায় জরিমানা করা যায়নি।
চিকিত্সকের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান, এসব আইসক্রিমে ব্যবহূত ঘনচিনি, রং, সেকারিন সব বয়সী মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এসব উপকরণ অত্যাধিক ক্ষতিকর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে আইসক্রিমের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা দুপুরবেলা আইসক্রিমের দোকানে ছুটছে। এদের মধ্যে দু’চারজন শিক্ষার্থী নামী ব্র্যান্ডের আইসক্রিম খেলেও বেশিরভাগই এই ধরনের নিম্নমানের আইসক্রিম খেয়ে অভ্যস্ত। অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে তেমন সচেতন নন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে আইসক্রিম তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। যা স্বাস্থের জন্য চরম ক্ষতিকর।
বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক কে এম হানিফ চট্টগ্রামে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ইত্তেফাককে জানান, চট্টগ্রামে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আইসক্রিম কারখানা আছে মাত্র তিনটি। বাকি সবগুলোই আইসবার বা বরফ তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় আইসক্রিম তৈরিতে চিনির পরিবর্তে ঘনচিনি ব্যবহার হচ্ছে। এটি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য। ১ কেজি ঘনচিনি ১০ কেজি চিনির সমপরিমাণ কাজ দেয়। কিন্তু এটা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। খাদ্যপণ্যে এর ব্যবহার বৈধ নয়। সেকারিনের ব্যবহার বৈধ হলেও এসব আইসক্রিম তৈরিতে নিম্নমানের সেকারিন ব্যবহূত হয় বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ৫০টির অধিক বরফ তৈরির কারখানা রয়েছে। এছাড়া শহরের বাইরে মফস্বলের ১৪ উপজেলায়ও কমপক্ষে পাঁচশ কারখানা রয়েছে। যেগুলোতে এই ধরনের নিম্নমানের ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করে আইসক্রিম তৈরি হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই