আইভীর এক ভক্তের কথা

নারায়ণগঞ্জের রাজপথের মিছিলে নৌকা চলছে। এতে বসে আছে ফুটফুটে দুই শিশু। তাদের হাতে বইঠা। লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বসে আছেন একজন বয়স্ক লোক। নাম তাঁর সিদ্দিক মিয়া। আইভীর পক্ষে প্রচার চালাতে ভ্যানগাড়ির নৌকা নিয়ে এসেছেন সুদূর নেত্রকোনা থেকে।

সিদ্দিক মিয়া বলছিলেন, তিনি থাকেন নেত্রকোনায়। তিন দিন আগে নৌকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন দুই ছেলেকে। যোগ দিয়েছেন আইভীর মিছিলে। থাকেন নারায়ণগঞ্জের একটি হোটেলে।

নেত্রকোনা থেকে কেন নারায়ণগঞ্জে নৌকা নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে সিদ্দিক বললেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। ভালোবাসি নৌকাকে। কয়েক দিন আগে ঢাকায় এসে শুনলাম আইভী আপা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। তাই তাঁর পক্ষে প্রচার চালাতে নিজের তৈরি ভ্যানগাড়ির নৌকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসেছি।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাঁর বাসা শহরের দেওভোগ এলাকায়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় দেখা গেল, ভ্যানগাড়ির নৌকাটি আইভীর বাসার সামনে আসে। আর বেলা তিনটার পর আইভীর বাড়ি থেকে বের হওয়া নির্বাচনী মিছিলের সামনেও ছিল সিদ্দিকের ভ্যানগাড়ির নৌকা।

আইভীর প্রচার সেলের প্রধান জহিরুল ইসলাম বললেন, আইভীকে ভালোবেসে নেত্রকোনা থেকে ভ্যানগাড়ির নৌকা নিয়ে এসেছেন সিদ্দিক ও তাঁর দুই ছেলে। বিষয়টি ভাবতেও ভালো লাগে।

সিদ্দিকের সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলেদের নাম সাকিব ও আশিক। সাকিবের বয়স সাত বছর। আশিকের পাঁচ বছর। সাকিব বলছিল, সে নেত্রকোনার একটি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আশিক পড়ে শিশু শ্রেণিতে। তাঁর বাবা ভ্যানগাড়ির নৌকায় করে নেত্রকোনা থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে এসেছেন। সিদ্দিক বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি হোটেলে থাকছেন। ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।

সিদ্দিক বললেন, ‘নারায়ণগঞ্জ এই প্রথম এলাম। তিন দিন হয়েছে। আমাকে এখানে কেউ দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে নাই। নৌকা প্রতীক যেহেতু আইভী আপা পেয়েছেন, তাই এখানে এসেছি। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে এখানে এসেছি। আমার ভালো লাগছে।’

সিদ্দিক জানান, এই নৌকা বানাতে তাঁর খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। নেত্রকোনার এক মিস্ত্রিকে দিয়ে নৌকা বানিয়েছেন। নৌকা নিয়ে আসার নেপথ্যের কাহিনি জানতে চাইলে সিদ্দিক আরও বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭০ সালে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা গিয়েছিলেন। সেই সমাবেশে আমি যোগ দিয়েছিলাম। ওই জনসভায় অনেক লোকজন যোগ দিয়েছিল। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম। সমাবেশে আমি পড়ে গেলে লোকজন আমাকে পাড়া দিয়েছিল। মাথায়ও আঘাত পেয়েছিলাম। তখন লোকে বলাবলি করেছিল, একটা ছেলে পাড়া খেয়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমাকে ওই মঞ্চে নেওয়া হয়। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করান।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান সিদ্দিক। এটাই তাঁর জীবনের শেষ স্বপ্ন। সিদ্দিক বললেন, ‘এই নৌকাটা অনেক সুন্দর করে বানাইছি। আমি বাড়ি থেকে কিছু খরচপাতি নিয়ে আসি। ঘোরাফেরা করি। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের আশায় পাগলের মতো ঢাকায় ঘুরছি। ওনার সঙ্গে হাত মেলাইলে জীবনে আর কোনো দুঃখ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে নৌকাটি রেখে আমি ঢাকা ছেড়ে চলে যাব। আর আসব না।’



মন্তব্য চালু নেই