অস্ট্রেলিয়া যেন ক্রিকেটের ব্রাজিল!
ফুটবলের কথা উঠলেই চলে আসে ব্রাজিলের নাম। মনে পড়ে পেলের কথা। বিশ্বকাপের চিরন্তন ফেবারিট ব্রাজিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে পাঁচ পাঁচবার। ক্রিকেটেও তাই করলো অস্ট্রেলিয়া। এ যেন ক্রিকেটের ব্রাজিল। কাকতালীয়ভাবে দু’দলের জার্সিও এক, হলুদ।
অনেকেই বলেন, ফুটবলের শেষ কথা ব্রাজিল! ক্রিকেটেও কী অস্ট্রেলিয়া তাই হতে যাচ্ছে? মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) একপেশে ম্যাচে অসিদের ৭ উইকেটের জয় তো সেটাই বলে। বিশ্বকাপে অপরাজেয় নিউজিল্যান্ডকে পাত্তাই দিল না অস্ট্রেলিয়া। ১৮৩ রানকে মামুলি বানিয়ে তারা ১০১ বল হাতে রেখেই অতিক্রম করে গেল।
শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, বিশ্বক্রিকেট ইতিহাসেই নিজের নামটা খোদাই করে রাখলেন মাইকেল ক্লার্ক। গোটা টুর্নামেন্টজুড়ে রানের জন্য হ্যাপিত্যেশ করা ক্লার্ক ফিফটি (৭৪) করলেন ফাইনালে। অসি অধিনায়করা বুঝি এমনই হয়! বিদায়ও নিলেন অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে। এর চেয়ে আর ভালো বিদায় কী হতে পারে!
১৯৯৯-২০১৫ মাঝে ২০১১ বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ারই জয়জয়কার। তাদের শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৭ বিশ্বকাপে। ডেভিড বুনের কীর্তিতে সেবার প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে ১৯৭৫ বিশ্বকাপে দলটি ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পেরে উঠেনি তারা। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অসিরা ফাইনাল খেললেও দুর্বার শ্রীলংকার সঙ্গে হেরে রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে যে দলটিকে নিয়ে স্টিভ ওয়াহ ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সেটি ততটা ভালো ছিল না! গ্রুপপর্বে তাদের হারতে হয়েছিল পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের কাছে। জয় বলতে বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সময় যত গড়াল এই দলটি আরও ভয়ংকর হতে থাকলো।
অবশ্য ভাগ্যও পাশে ছিল স্টিভের। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচ টাই করেও নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের সেই ফাইনালে ¯্রফে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়ে ক্যাঙ্গারুর দেশ।
১৯৯৯ এর পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট এতটাই বদলে গেল যে, তারা জয় পেতে পেতে হারাটাই ভুলে গেল! স্টিভের অস্ট্রেলিয়া এই সময় টানা ১৬টি টেস্ট জিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। ফর্মের চূড়ায় থেকে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন স্টিভ। যেটা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম সংস্কৃতি!
যে দলটি রেখে গেলেন স্টিভ সেটিকে আঁকড়ে ধরলেন রিকি পন্টিং। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে তার (১৪০*) ব্যাট ¯্রফে খুন করেছে সৌরভ গাঙ্গুলীর ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। যে ইনিংসটি পরে পরিচিতি পেয়েছে ‘পন্টিং স্পেশাল’ হিসেবে।
স্টিভ একটি বিশ্বকাপ জয় করে ক্ষান্ত দিয়েছেন কিন্তু পন্টিং তা দেননি। ২০০৭ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়া গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে। এখানেও সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা হারতে জানে না। যাদের লক্ষ্য একটাই, মাঠে নামো এবং জিতে আসো! সেটাই হলো ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপে। বৃষ্টিবিঘিœত ফাইনালে মাহেলা জয়াবর্ধনের শ্রীলংকাকে ¯্রফে কচুকাটা করলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (১৪৯)। আর হ্যাট্টিক চ্যাম্পিয়নের বুনো উপযাপন করলো অস্ট্রেলিয়া।
পন্টিং তবুও দমলেন না। ক্রিকেট চালিয়ে গেলেন। নিজের হ্যাট্টিক শিরোপা জয়ের আশায় এলেন উপমাহাদেশের বিশ্বকাপে (২০১১)। এবার আর পারলো না পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। কোয়ার্টারফাইনালেই তাদের থামতে হলো ভারতের কাছে হেরে।
২০১৫ বিশ্বকাপের কথা ভেবে বুড়ো পন্টিংকে সরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হলো তরুণ মাইকেল ক্লার্কের হাতে। তার সময়ে অনেকটা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে অসিরা। ক্লার্কের জন্য উটকো ঝামেলা হিসেবে দেখা দিল চোট। জিম্বাবুয়েতে চোট নিয়ে খেলতে গিয়ে আবার চোটে পড়লেন। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। সব সংশয় তুড়ি মেরে উড়িয়ে ক্লার্ক দলকে নেতৃত্ব দিলেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বানালেন। জয়তু ক্লার্ক, জয়তু অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য চালু নেই