বাজেট ২০১৪-১৫
অর্থসংগ্রহ, ঘাটতি পূরণ ও বাস্তবায়ন অসম্ভব
২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ রেখে রাজস্ব আয় এবং বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে ব্যয় মেটানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না তারা। এছাড়া এডিপির আকারও অস্বাভাবিক বড় যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবিএম মির্জা আজিজুল বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর রাজস্বের টার্গেট ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। যেহেতু সার্বিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থার তেমন উন্নতি আশা করা যাচ্ছে না তাতে এ টার্গেট পূরণ সম্ভব নয়। অন্যদিকে বৈদেশিক সাহায্যের ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকার যে পরিমাণ ধরা হয়েছে সেটি অর্জিত হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যয় মেটানোর আরেকটি উৎস হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণ। এর একটি অংশ আসে ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ থেকে। এ ঋণের বড় অংশ আবার আসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এটা ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে বলা হচ্ছে- তাও অর্জিত হওয়া সম্ভব নয়। কাজেই যদি এসব সূত্র থেকে অর্থায়ন না হয় তাহলে সরকারকে দুটো পন্থার যে কোনো একটি অবলম্বন করতে হবে। একটি হলো- খরচের মাত্রা কমাতে হবে। অন্যটি হলো- ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ বেশি নিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে এটা বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাতে প্রবৃদ্ধি বিঘ্নিত হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও উচ্চাভিলাসী বলে মনে করছেন এ অর্থনীতিবিদ। এতো বড় উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে তিনি সন্দিহান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এডিপির যে প্রস্তাব ছিল তা কিছুটা ঠিক ছিল কিন্তু এর আকার আরো বেড়ে যাওয়ায় এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আমার ধারণা হচ্ছে, এ এডিপির ৫৩ থেকে ৫৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
তার মতে, সবচেয়ে বড় কথা, বাজেটের যে আকার তার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করা যাবে না। ব্যাংকিং খাত থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকার যে ঋণ নেয়া হবে বলা হচ্ছে এতে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে দু’দিক থেকে। একদিকে চাহিদা বেড়ে যাবে অন্যদিকে বেসরকারি খাতের উৎপাদন ও ঋণের প্রবাহ কমে যাবে। কাজেই সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের অনুকূলে থাকবে কি না এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রয়োজন কর্মস্থানের। তাদের কর্মসংস্থান থাকলে পণ্যের মূল্য বাড়লেও তাদের সমস্য হয় না। কিন্তু কর্মসংস্থান না থাকলেই তাদের সমস্যা চর হয়ে দেখা দেবে। এর জন্য কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এবিএম মির্জা আজিজুল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদও একই মত দিয়েছেন। তার মূল্যায়নেও এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাজেটের আকার বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটটি এসেছে বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘বাজেটের একটা ধারাবাহিকতা আছে। বাজেটের টাকা যে বেশি তা কোনো সমস্যা না। কিন্তু বাজেটের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটি অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। আয় যে আকার ধরা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এ কারণে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
এছাড়া, এবারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও পরে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামানো হয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন এই দুই অর্থনীতিবিদ।
মন্তব্য চালু নেই