অমীমাংসিত পাঁচ মৃত্যু

পৃথিবী নামক এই গ্রহে প্রতিদিন অগুনতি মানুষ মারা যাচ্ছেন বিভিন্ন ভাবে। মৃতদের মধ্যে কেউ মারা যাচ্ছেন স্বাভাবিকভাবে, আবার কেউবা অস্বাভাবিকভাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত মানুষটির মৃত্যুর কারণে জানা সম্ভব হয়। পাশাপাশি থাকা আত্মীয় স্বজন কিংবা ঘটনার আলাতম দেখে অন্যরা নিশ্চিত হতে পারে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে। কিন্তু তাই বলে কি মানুষ সকল মৃত্যুর কারণই জানে? মানুষ যদি দাবি করে থাকে যে, পৃথিবীর সকল রহস্য তার হাতের মুঠোয় তাহলে টম থমসন, ফ্রেডরিক ও জুলিয়াদের মৃত্যুর কারণ কি? আজ অবধি মানুষ রহস্য ভেদ করতে পারেননি এদের মৃত্যুর যথার্থ কারণ। পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও ওই মৃত্যুগুলো রহস্যময়তার চাদরে মোড়া আছে।

টম থমসন
কানাডার চিত্রশিল্পী টম থমসনকে শেষ মাছ ধরতে দেখা গিয়েছিল ১৯১৭ সালের ৮ জুলাই তারিখে। সেই দিন থেকে টানা আটদিন পর ক্যানু লেকের ধারে তার মৃতদেহ ভেসে ওঠে। কিন্তু কি কারণে থমসন মারা গিয়েছিলেন তা আজও কানাডার মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে আছে, কারণ তরুণ চিত্রশিল্পী হিসেবে টম থমসন তৎকালীন সময়ে বেশ বিখ্যাত ছিলেন। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে অনেকেরই ধারণা ছিল থমসন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছে। কিন্তু তার বা পায়ের গোড়ালিতে এক টুকরো বড়শির সুতো ষোলোবার পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সময়ই সুতো পেঁচিয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ডুবলে এরকম নিখুত পেঁচানো অবস্থায় তাকে পাওয়া গেল কিভাবে। আরেকদল গবেষক বলছেন, থমসন নিজে আত্মহত্যা করেছেন। যাই হোক এখন পর্যন্ত কানাডার সরকার ওই মৃত্যু রহস্য ভেদ করতে পারেনি।

ফ্রেড্রিক ম্যাকডোনাল্ড
১৯২৬ সালের ১৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় সাবেক এমপি ফ্রেড্রিক ম্যাকডোনাল্ড হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যান এবং তাকে আর কোনোদিন দেখা যায়নি। একটা আত্মহত্যার চিরকুট পাওয়া গেলেও, তার মৃতদেহ কোথাও পাওয়া যায়নি। ম্যাকডোনাল্ডের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তেমন কোনো নাড়াচাড়া হয়নি তৎকালীন সময়ে। তবে থমাস জন লে নামের এক সংসদ সদস্যের নাম চলে আসে ম্যাকডোনাল্ডের প্রসঙ্গে। জানা যায়, একটা ঘুষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লে ম্যাকডোনাল্ডকে দুই হাজার পাউন্ড ঘুষ প্রদান করতে চেয়েছিল। ওই ঘটনায় ম্যাকডোনাল্ডের সাজা হবার কথা ছিল। ধারণা করা হয়, এই ঘটনার কারণেই হয়তো ম্যাকডোনাল্ড আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন।

জুলিয়া ওয়ালস
ব্রিটিশ অপরাধ বিষয়ক লেখকদের জন্য ১৯৩১ সালের জুলিয়া ওয়ালসের রহস্যজনক মৃত্যুটি বেশ অনেকদিন লেখার খোরাক হিসেবে ছিল। জ্যাক দ্য রিপারের পরিকল্পিত মৃত্যুদন্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয় জুলিয়ার মৃত্যুকে। ১৯৩১ সালের ২০ জানুয়ারি আর এম কোয়ালথ্রো লিভারপুল সেন্ট্রাল দাবা ক্লাবের একজন সদস্যের জন্য একটি বার্তা নিয়ে আসেন। উইলিয়াম ওয়েলস তখন ছিলেন একজন বীমা কোম্পানির দালাল। বার্তায় পাওয়া সংবাদ অনুসারে জায়গামতো যাবার পর ভুল বুঝতে পেরে তিনি বাড়ির দিকে ফিরছিলেন, কিন্তু বাসায় ফিরে তিনি তার স্ত্রী জুলিয়াকে বীভৎস কায়দায় মৃত অবস্থায় পান। ওই হত্যাকান্ডের জন্য উইলিয়ামকে দোষারোপ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে অপর দুই ব্যক্তিকে ওই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আদালতে উঠলেও, হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে পারেনি আদালত।

লায়েতিশিয়া তোরেক্স
সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা। ঘটনাস্থল প্যারিসের চার্লটস স্টেশন। পুরো স্টেশনে মাত্র একজন যাত্রী, যার নাম লায়েতিশিয়া তোরেক্স। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগেই তিনজন লোক হঠাৎ করেই ট্রেনে ওঠেন। কিছুক্ষণ যেতেই লায়েতিশিয়ার ঘাড়ে ইস্পাতের ধারালো ব্লেডের শীতল ছোয়া লাগে। যদিও এটা ধারণা যে ওই তিনজনই তাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু তোরেক্সের জীবনের কিছু রহস্যময়তা তার মৃত্যুকে নতুন দিকে মোড় দেয়। তার সঙ্গে গ্যাব্রিয়েল জ্যানেট নামের একজন দক্ষিণপন্থী সাংবাদিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। যতদুর জানা যায় জ্যানেট একজন অস্ত্র চোরাচালানিও ছিল এবং প্যারিসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। এই দলটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতো তৎকালীন ফ্রান্সের অনেক ধনী।

হ্যারি ওকস
বাহামার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হ্যারি ওকসকে ১৯৪৩ সালের ৮ জুলাই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মাথায় এতো জোরে আঘাত করা হয়েছিল যে তার মাথার খুলি ফেটে গিয়েছিল। পাশে থাকা গ্যাসোলিনের পাইপ খুলে দিয়ে খুনী আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোনো কারণে সেই আগুন লাগেনি। কানাডায় আসার আগে বাহামায় স্বর্ণের ব্যবসা করে বেশ মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেছিলেন ওকস। তৎকালীন সময়ে ইংল্যান্ডের কোনো লর্ডের চেয়েও অধিক ধনী ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু পরবর্তীতে স্থানীয় পুলিশ অনেক তদন্ত করেও খুনীকে ধরতে পারেনি। ওকসের জামাতা থেকে শুরু করে ম্যানেজারকে পর্যন্ত ওই হত্যাকান্ডের জন্য সন্দেহ করা হয়েছিল। কিন্তু এখানেও পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে দোষিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে জানা যায়, কোনো একটি মাফিয়া দলের সঙ্গে কোন্দলের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছিল।



মন্তব্য চালু নেই