অবৈধ সরকারের বাজেট পাসের অধিকার নেই : খালেদা জিয়া

‘বর্তমান সংসদে জনপ্রতিধি নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অবৈধ সরকারের বাজেট পাস করার অধিকার নেই। এই বাজেট গণ্য হবে না। এরজন্য আজ না হয় কয়েকদিন পর জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এই সংসদে জনপ্রতিনিধি নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে জনগণ যায়নি, কুকুর বসা ছিল।’

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আইনজীবীদের সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি এবং বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।

এ সমাবেশ সুপ্রিমকোর্ট চত্ত্বরে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পুলিশী বাধার কারণে প্রেসক্লাবে তা স্থানান্তর করা হয়। বেলা সোয়া ১২টার দিকে বেগম খালেদা জিয়া প্রেসক্লাবে এসে পৌঁছান। নির্ধারিত জায়গায় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় স্বল্প সংখ্যক আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘যেভাবে গুম, খুন হচ্ছে আমি বলেছি, আমি মানুষের পাশে আছি, এজন্য তারা আমার পেছনে লেগেছে। আওয়ামী লীগ নানাভাবে মামলা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে যাতে আমাকে আটকানো যায়। আমি কিছুর ভয় পাই না।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার ৪টা মামলা আছে, আপনার ১৫টি চালু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে আপনারটা খালাস হবে? বলেছিলেন, প্রত্যেকের মামলা প্রত্যাহার হবে। আমাদের একটি মামলাও প্রত্যাহার হয়নি।’

নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর এবং ফেনীর ঘটনায় অবিলম্বে সকল দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘টেলিফোন কথোপকথনে সব ফাঁস হয়ে গেছে। ফেনীতে দুই হাজারী পরস্পরকে দোষারোপ করছে। কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গ্রেপ্তারকৃত র‌্যাব সদস্যদের জামাই আদরে রাখা হয়েছে। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসা করলে সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এখনো অনেকে ভাবে বিএনপি কেন কর্মসূচি দেয় না, দিবো সময় মতো দিবো। কারণ এরা জনগণের কাছে পঁচে গেছে। জনগণের কাছে দুই পয়সার দাম নেই। আমরা সুযোগ দিয়েছি। জনগণের কাছে আরেকটু পচুক, আরেকটু গলুক, এদের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এদেরকে আরেকটু পঁচতে দিতে হবে। মানুষের একটু কষ্ট হবে। সবাই যখন বেরিয়ে আসবে। তখন তারা অবৈধ অস্ত্র রেখে এসে আপনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। যারা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে অপকর্ম করছে তারা মাফ পাবে, কিন্তু যারা করাচ্ছেন তারা মাফ পাবেন না।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ অনেক আইনজীবীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। মানুষ যেমন র‌্যাবের নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়। এই সরকার বিএনপির জনসভার কথা শুনলে আতঙ্কিত হয়। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’

র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের কারণে সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এরা আর বিদেশ যেতে পারবে না। আমরা নিজেরাই বলবো র‌্যাব বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের মানুষ খুন, গুম করছে।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন ২০ বছর ৪০ বছরে যদি বিচার হতে পারে। তাহলে আপনাদের আমলের এই কাজের জন্য ২০ বছর পরেও বিচার হতে পারে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরাতো এখনো আন্দোলন শুরুই করিনি। শুধু মাত্র শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি। আপনারা এতো টাকা বানিয়েছেন। তা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেরা মারামারি করছেন। আল্লাহর একটা বিচার আছে।’

তিনি বলেন, ‘ভয়ে আজকে সরকার জাতীয়তাবাদী দলকে সমাবেশ করতে দেয় না। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। আইনজীবী নেতাদের সুপ্রিম কোর্টের সমাবেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। গেটে তালা দিয়েছে। এর আগে ২২ তারিখেও সমাবেশ করতে দেয়নি। আমাদের কাছে বৈধ অনুমতি ছিল। তারা এতো দুর্বল, তারা মানুষকে ভয় পায়।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘পুলিশের বন্দুকের জোরে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে। র‌্যাব যারা টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করে। তাদের দিয়ে এই সব করানো হচ্ছে। তাদের ওপর ভরসা করে টিকে আছে। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যেভাবে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়েছে। এই আওয়ামী লীগের জন্যই র‌্যাব গঠন করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘অতি বাড়াবাড়ি ভালো নয়, কথায় আছে অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে, অতি ছোট হলে ছাগলে খেয়ে ফেলবে। আপনাদের ছাগলে খেয়ে ফেলবে।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতেন্ত্রর কথা বলা হয়, কিসের গণতন্ত্র ? কোথায় গণতন্ত্র ? আইনের শাসন, কোথায় আইনের শাসন ? কোথায় সুশাসন ? মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিচার বিভাগ দুই রকমের। সরকারি দলের জন্য একরকম। আর সাধারণ মানুষের জন্য একরকম। সরকারি দলের লোকজন খুন করলেও তারা পার পাচ্ছে। আমরা আইনের শাসন চাই, সুশাসন চাই। উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলাম, তারা তা তড়িঘড়ি করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেলেছে। অবৈধ মন্ত্রীরা বলে, নীতিমালার দরকার নেই। নীতিমালা বঙ্গোপসাগরে ফেলে তাদের মন মতো লোককে কাজ দেবে। এটা কি মামার বাড়ি পেয়েছেন নাকি শ্বশুড় বাড়ি পেয়েছেন। এটা একটা দেশ।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘ওই মন্ত্রী যে কথাগুলো বললো কাগজে এসেছে। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো। তারা এতো বেশি অপকর্ম করছে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহস নেই।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আজ বনে জঙ্গলে লাশ আর লাশ। হাসিনার আমলে এসব হচ্ছে। হাসিনাকে জবাব দিহি করতে হবে। আইনের আওতায় আসতে হবে। তখন এই কোর্টে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। এই সব বাদ দিয়ে আমরা গণতেন্ত্রর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আইনের শাসন, সুশাসনে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জনগণ আজকে অস্থির হয়ে গেছে। তারা চায় এই অবৈধ সরকারকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশ শুধুমাত্র খুন, গুম, হত্যা অপহরণ দিয়ে চিহ্নিত। দেশের মানুষ পুরো আতঙ্কিত। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। মায়ের চোখের পানি বিফলে যাবে না। মায়ের চোখের পানির জন্য একদিন না একদিন আপনাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) ভুগতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারকে বলতে চাই অপহরণের শিকার হয়ে যারা এখনো বেঁচে আছে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিন। রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তার বন্ধ করুণ। কাউকে গ্রেপ্তার করলে লিখিতভাবে জানাতে হবে তাদের স্বজনদের। যারা অতি উৎসাহি হয়ে এসব করছেন তারা নিজেরা এর দায় এড়াতে পারবে না।’

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশি দেরি হলে পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যাবে। সকলের আয়ত্বের বাইরে চলে যাবে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।



মন্তব্য চালু নেই