ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে রাতের ঘুষ সকালে ফেরত

অবশেষে ক্লোজড হলো সেই দুই দারোগা

জাহাঙ্গীর আলম লিটন, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) থেকে: অবশেষে ক্লোজড করা হলো আলোচিত-সমালোচিত সেই দুই দারোগাকে। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে বৃহষ্পতিবার রাতে নিরীহ এক পরিবারের কাছ থেকে ঘুষের টাকা আদায়ের ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তাদেরকে কলারোয়া থানা থেকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে তাৎক্ষনিক ক্লোজড করা হয়েছে।

ক্লোজড হওয়া ওই দুই দারোগা হলেন- কলারোয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই আনোয়ার ও এ.এস.আই সাঈদ।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় উপরের মহলের চাপে শুক্রবার সকালে সেই ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়ে হুমকি দেয়ায় নিরীহ ওই পরিবারটি সংবাদ সম্মেলন ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন।

এ ঘটনার পরে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সরেজমিন তদন্তে ওই দুই দারোগার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় শনিবার রাতেই তাদেরকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে তাৎক্ষনিক ক্লোজড করা হয় বলে জানা গেছে।

ক্লোজড করার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক।

ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে ঘুষের টাকা আদায় ও ফেরতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় ভূক্তভোগিদের করা সংবাদ সম্মেলনের খবর ‘রাতে টাকা নিয়ে সকালে ফেরত!’ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এর পরেই সরেজমিন তদন্ত শেষে ওই দুই দারোগাকে ক্লোজড করা হলো।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে কলারোয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই আনোয়ার ও এ.এস.আই সাঈদ উপজেলার পাটুলিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র উচিয়ে তাকে আটক ও ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করে। এসময় বি-ভাইরাস আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য রাখা ২৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয় সাত্তারের স্ত্রী হালিমা খাতুন। ওই টাকায় সন্তুষ্ট না হয়ে পরদিন সকাল ১০টা মধ্যে আরো ২০ হাজার টাকা থানায় পৌছে দেয়ার হুমকি দিয়ে এ.এস.আই সাঈদ তার মোবাইল ফোন নং-০১৭৯৯-১০০৬১২ দিয়ে আসে।

এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী হালিমা খাতুন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করে কলারোয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরেজমিনে তদন্তে যান। ওই দুই দারোগার অপকর্ম প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় ওই রাতেই তাদেরকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।

এ ব্যাপারে রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক সাংবাদিকদের জানান, শনিবার আমি নিজেই সরেজমিনে তদন্ত করেছি। প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় ওই দুই দারোগাকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

এদিকে, প্রায় প্রতি রাতেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিরীহ মানুষদের অনৈতিক ভাবে আটক, আটকের ভয় ও ক্রস ফায়ারের হুমকি দেয়ার অভিযোগ-অনুযোগ শোনা যাচ্ছে। একটু ধনী কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত সাধারণ পরিবার গুলো এ থেকে যেন রেহায়-ই পাচ্ছে না। ভয়, হুমকি ও নাজেহালের আশংকায় কতিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না তারা। কতিপয় অসাধু পুলিশের সাথে যোগ হচ্ছে কতিপয় দূর্ণীতিগ্রস্থ নেতা বা জনপ্রতিনিধিরাও। বিবেকের তাড়নায় সাহস করে এর প্রতিকার চেয়েও প্রতিকার না পেয়ে উপরন্তু হুমকি-ধামকির স্বীকার হচ্ছেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের দাড়কি-হিজলদী গ্রামের কয়েক ব্যক্তিকে তাদের বাড়ি থেকে গভীর রাতে আটক করে রাস্তায় এনে ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটেছিল এস.আই আনোয়ার, এ.এস.আই সাঈদসহ কতিপয় অসাধু দারোগার বিরুদ্ধে। পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর বের হলেও চন্দনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি ওই ঘটনা সত্য নয় বলে প্রতিবাদ লিপি দেন। ফলে সত্য ঘটনাটি আলোর মুখ দেখেনি, পরিত্রাণ পাননি সাধারণ মানুষও। তবে পাটুলিয়ার এ ঘটনার পরে আশার সঞ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সকলের একটাই ভাষ্য- আসল অপরাধীরা শাস্তি পাক, তবে টাকা নেয়ার ধান্দা বন্ধ হোক।



মন্তব্য চালু নেই