অবরোধ প্রত্যাহারের সুযোগ খুঁজছে বিএনপি!

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে তাগিদ দিচ্ছে বিএনপি তার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। দলটি মনে করছে সহিংসতার জন্য ঢালাওভাবে বিএনপির দায় না থাকলেও তাদের কর্মসূচি চলাকালেই ঘটছে এসব ঘটনা। আবার ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপি জোটকে দায়ী করে বলছেন- সহিংসতা বন্ধ না হলে সংলাপ হবে না।
এদিকে সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপের তাগিদ দিচ্ছে জাতিসংঘও। বিএনপি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। তাই নিজেদের দেয়া হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য ইস্যু বা সুযোগ খুঁজছে দলটি। এমন বিষয়টিই উঠে এসেছে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।
‘আপনাদের কর্মসূচি চলাকালে সহিসংতা হচ্ছে। তো আপনারা কি সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিতের চিন্তা করবেন কি না জানতে চাইলে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনার পয়েন্ট ঠিকই আছে যে, সহিংসতা হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা আমরা কেউই চাই না। বিএনপিও চায় না। আমরা মনে করি জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে এবং অঙ্গার হয়ে একেকটা জীবন শেষ হচ্ছে। এটা আমরা কামনা করি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এখানে সরকার এবং বিএনপি সবাইকে বুঝতে হবে। ব্লেইম গেইম করে লাভ নেই। শান্তির পথে আসতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।’
মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয়লাভ করলে অবরোধ থাকবে না। তারা যদি বিশ্বকাপ জয় করে আসে তাহলে জাতির অনেক বড় একটা অর্জন হবে। দুই নেত্রী অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের কথা শুনবে। তখন তারাই পারবে দুই দল বা দুই পার্টি বা দুই মহিলাকে একসঙ্গে বসাতে। আর যখন সংলাপের উদ্যোগ হবে তখন আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে দুই-এক সপ্তাহের জন্য বিএনপি জোট তাদের চলমান অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহারের চিন্তা করতে পারে কি-না এমন প্রশ্নে দলটির সহ-সভাপতি বেগম সেলিমা রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘গতকাল বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। আর এ সহিংসতা সরকার করছে। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকানো।’
তিনি বলেন, ‘শোনেন আপনি যে সাময়িকভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলছেন- তাতে যে সরকার আর সহিংসতা করবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে? তাই যতোক্ষণ পর্যন্ত সরকার ইতিবাচক কিছু না করবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলনে থাকবো।’
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অসুস্থ হওয়ার খবরে নয়াপল্টনের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে বাধা দিলে অদ্যাবধি তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ওইদিন থেকে তার সঙ্গে রয়েছেন বেশকিছু নেতানেত্রী, কর্মকর্তা, স্টাফ ও তার নিরাপত্তারক্ষী।
যদিও একদিন পর ৫ জানুয়ারি ঘোষিত কর্মসূচি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’র সমাবেশে যোগ দিতে বিকেল ৩টার দিকে খালেদা জিয়া কার্যালয়ের নিচে নামেন। এরপর তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকেই তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে হরতাল কর্মসূচিও। এসব কর্মসূচির কারণে সারাদেশ আজ হয়ে উঠেছে সহিংস। বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছে শতাধিক লোক। অনেকে আবার মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বিরোধী অনেক নেতাকর্মীও।



মন্তব্য চালু নেই