অপহরণের বর্ণনা এবি সিদ্দিকের মুখে
নারায়ণগঞ্জের নিজ কর্মস্থল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গত বুধবার অপহৃত হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলার) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর। একদিন পর তাকে মিরপুরে রেখে যায় অপহরণকারীরা। আর সেই অপহরণের বর্ণনা নিজ কণ্ঠে দিয়েছেন এবি সিদ্দিক। তবে কী কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে তা এখনো রহস্য।
অপহরণের বর্ণনায় এবি সিদ্দিক বলেন, আমার গড়িটিকে যখন তারা ধাক্কা দিল তখন আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। তখন ওই গাড়িটি থেকেও ৫-৬ জন নেমে আসে। আমি তখন ধারণা করলাম তারা হয়তো আমায় মারবে। কিন্তু না তারা সেটা করলো না, আমি তাদের কাছে আমার গাড়িকে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চাইতে চাইতেই তারা আমায় টেনে গাড়িতে তুলে ফেললো।
সেখানে প্রথমে আমার হাত-পা বেঁধে একটা কাপড় দিয়ে আমার চোখ বাঁধা হয়। পরে আরেকটি মস্কের মধ্যে আমার মাথা ঢুকিয়ে দেয় তারা। এরপর আমাকে গাড়িতে শুয়ায়ে রাখে। পরে তারা আমায় একটা বড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে যেতে তিন ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। পথে দু’টি ফেরি পার হয়েছিলাম। এর মাঝে তারা একবার থামলো এবং গাড়ি পরিবর্তন করলো।
আমাকে যে বাসায় রাখা হয়েছিল তারা অবশ্য আমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি।
প্রথম দিনের রাত ১০টার দিকে সেখানে একজন বড়ভাই কিংবা গুরু টাইপের কেউ আসে। তিনি আমার কাছে জানতে চান, আমার নাম কী, আমি কী করি, কতো টাকা বেতন পাই? আমি তখন তাকে বলি যে ভাই আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেন দেখি বাসা থেকে আমি টাকা নিয়ে দিতে পারি কি না। তখন তিনি বললেন ঠিক আছে আমি কাল সকালে তোকে সেটা জানাবো। তিনি আমাকে বলেন, ‘তুই এতো বড় এমন কী ব্যক্তি যে মিডিয়াতে তোর খবর?
সকালে ঘুম থেকে উঠি নাস্তা করি, দুপুরের খাবারও খাই। পরে আবার রাত ১০টা দশের দিকে সেই ভাই এলো। তিনি বললেন, ‘তোকে মেরে ফেললেও আমার লস, বাঁচিয়ে রাখলেও আমার লস। তোকে মেরে ফেললে তো আমি টাকা পাবো না। তার চেয়ে তোকে ছেড়েই দেই।’
আমাকে রাত সোয়া ১০টার দিকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে তারা রওনা হলো। পরে মিরপুরের আনসার ক্যাম্পের সামনে তারা আমায় নামিয়ে দেয়। সাথে কিছু টাকাও দিয়েছিল বাসায় যাওয়ার খরচ হিসেবে। আমি তখন ওখান থেকে একটি রিকশা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে আসি। পরে সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে রওনা হই সেন্ট্রাল রোডের বাসার দিকে। পথে যেতে যেতে হঠাৎ ধানমণ্ডি মাঠের পাশে চেকপোস্টে পুলিশ সিএনজি থামায়। আমার গায়ে ছেঁড়া জামা। পায়ে কিছুই ছিল না।
আমি চেকপোস্টের পুলিশদের আমার পরিচয় দিয়ে বলি। কিন্তু তারা আমায় চিনতে পারে না। তবে তাদের মধ্যকার এক কনস্টেবল আমায় চিনতে পেরে অফিসারের কাছে ফোন দিয়ে জানায়। সেখান থেকে আমাকে ধানমণ্ডি থানায় নিয়ে যায়।
চোখ বাঁধা অবস্থায় সময় জানতে পারলেন কী করে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে যেখানে রাখা হয়েছিল তার পাশেই একটি মসজিদ ছিল মনে হয়। আযান শুনে এবং সেখানে থাকা লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করে সময় জানতে পারি।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় আবু বকর সিদ্দিক তার প্রাইভেটকারে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। ফতুল্লার ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে আসা মাত্র পেছন দিক থেকে একটি নীল রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস দিয়ে তার গাড়িতে ধাক্কা দেয়া হয়। এ সময় গাড়ি থামিয়ে আবু বকর ও তার গাড়িচালক নেমে এলে ওই গাড়ি থেকে ৭ থেকে ৮ জন যুবক লাঠিসোটা ও অস্ত্রের মুখে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
মন্তব্য চালু নেই