অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম ।। উখিয়ার হাটবাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

কক্সবাজারের উখিয়া সদর দারোগা বাজারের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাজার সংস্কারের জন্য বিগত অর্থ বছরে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্ধে কার্যক্রম শুরু করার পথিমধ্যে ঠিকাদার উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাজারের আরো বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার ইজারাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায়ের ঘটনা নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এনিয়ে ব্যবসায়ীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ করেছে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের ব্যস্ততম এ বাজারটির উন্নয়নের জন্য ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্ধ দিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে উধাও হয়ে যায়। ফলে বাজারে ক্রেতা-বিক্রোদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা, মলমূত্র সহ কাঁদায় একাকার হয়ে পড়া ঐ বাজারে ইজারাদার নিয়োগকৃত কতিপয় টোল আদায়কারী জোর পূর্বক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টোল আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৮/২০ জন ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করে আব্দুল গফুর, মনু সওদাগর জানান, ইজারাদার টোল আদায়ের সাইনবোর্ড না টাঙ্গিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ইচ্ছামত টোল আদায় করছে। তাদের কথা মত টোল পরিশোধ না করলে ব্যবসায়ীদের নাজেহাল করা হচ্ছে। ডেইলপাড়া গ্রামের বিক্রেতা আমির শরীফ জানান, সে বাজারে ৩শ’ টাকায় একটি মুরগি বিক্রি করে ৫০ টাকা হাছিল দিতে হয়েছে। একই ভাবে টাইপালং গ্রামের মনির আহমদ জানান, বাজারে ১শ’ বিরা পান বিক্রি করে ১শত টাকা হাছিল দিতে হয়েছে। এভাবে অসংখ্য ক্রেতা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, উক্ত বাজারটি ৩৮ লক্ষ টাকায় ইজারা নেওয়া হলেও দফায় দফায় উপ-ইজারা দেওয়ার কারণে এ বাজারের নিলামদার সর্বোচ্চ ৮০ লক্ষ টাকায় উপনীত হয়েছে। ওইসব টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্টরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টোল আদায় করে যাচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে বাজার ইজারাদার মামুন চৌধুরীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, অতিরিক্ত টোল আদায়ের ঘটনাটি সত্য নয়। বাজারের সংস্কার কাজ কবে সম্পন্ন হবে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজ জানান, অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগটি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ আলোর মূখ দেখছে!

দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ বাস্তবায়নে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ২০১৪ সালে গৃহীত প্রকল্পে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্ধে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েল মিটারগেজের উন্নিত করা হয়েছে। এতে ব্যয় বরাদ্ধ বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকাতে উন্নীত করা হয়েছে। কাঙ্খিত এ রেলপথ নিমার্ণ হলে পর্যটন জেলা হিসেবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। এছাড়া রেলপথে বছরে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সফর করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বলছেন ডুয়েল মিটারগেজে রেলপথ বাস্তবায়নে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া রামু ও ঘুমধুম পর্যন্ত দীর্ঘ ১২৮ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০১ সালে কানাডিয়ান একটি কোম্পানী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে রেলপথ বাস্তবায়নের উপর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে ডিপিপি (প্রকল্প প্রোপাফাইল) তৈরি করে। পরে ২০১২ সালে নম্বেভর থেকে ২০১৩ সালের পুরো বছর পর হয় এশিয়ান ডেভেলপম্যান্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আঞ্চলিক সহযোগীতা প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে প্রস্তাবিত রেলপথের ডিজাইন সহ আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সে সময়ে একাধারে প্রায় দেড় বছর ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির পাশাপাশি প্রস্তাবিত রেললাইনের নতুন ডিজাইন অবকাঠামো তৈরি করে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও প্রকল্পের বর্তমান অর্থায়ন ও মিটারগেজের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ডুয়েল মিটারগেজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ প্রকল্পের কালক্ষেপন ও ব্যয়বৃদ্ধি আরো বেড়ে যায়।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১১ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনীতি পরিষদে নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৮৬৫ কোটি টাকায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পে দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৯টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন, ৪টি বড় ও ৪৭টি ছোট ব্রীজ, ১৪৯টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নিমার্ণ এবং ঘন্টায় ১শ’ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা ও সংযোজন করার কথা রয়েছে। আর এ নতুন রেলপথটি তৈরি করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উভয় দিকে প্রায় ১৪শ’ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে। ওই বছরে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে ১২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪শ’ কোটি টাকা। পরে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বাড়িয়ে দেড় হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে। ওই সময় পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১৮৫৩ কোটি টাকা ধরা হলেও ২০১৩ সালে এসে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে এসে দাঁড়ায়। বর্তমানে মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ) উন্নীত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় তিনগুন বেড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটিতে দাঁড়ায়।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে ১২৮ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা (৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার) ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগীতা (সাসেক) রেলপথ সংযোগ স্থাপন কর্মসূচীর আওতায় এ প্রকল্প অর্থায়ন করবে এডিবি। সম্প্রতি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়কে পাঠানো এক পরিপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই সংস্থাটি।
এদিকে এ প্রকল্পের নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী স্কুল, মসজিদ ও কবরস্থানের অবস্থান ঠিক রেখে রেলপথের কিছুটা দিক পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে ৩ হাজার ৫শ’ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়া প্রকল্পটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে রেলপথটি নিমার্ণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর প্রকৌশলী সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে মিটারগেজ পদ্ধতির পরিবর্তে ডুয়েলগেজ অর্থাৎ এ প্রকল্পে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুটো লাইনে যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, চায়নার একটি কোম্পানীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরও হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই কোম্পানীটি তাদের আনুষ্ঠানিক সার্ভে সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে বর্তমানে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরেও ব্যয় হতে পারে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন জানান, ১২৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ বাস্তবায়নের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন বাস্তবায়ন হলে পর্যটন ও অর্থনৈতিক খাতে কক্সবাজার দেশের অন্যতম অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

উখিয়া সীমান্তে বিজিপি’র গুলিতে জেলে আহত

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপারে উৎপেতে থাকা মিয়ানমারের বিজিপি’র গুলিতে এক জেলে গুরতর আহত হয়েছে। তাকে আশংকা জনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এনিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পালংখালী বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ঘুমধুম বেতবুনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ হোছন মিস্ত্রির ছেলে রকিব উল্লাহ (৪০) প্রতিদিনের মতো সীমান্তের নাফনদীতে মাছ ধরার এক পর্যায়ে জিরো পয়েন্টের ৪০ মিটার অতিক্রম করলে মিয়ানমার বিজিপি’র সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করে পালিয়ে যায়। পালংখালী বিজিবি’র নায়েব সুবেদার জিন্নাত আলী জানান, তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তে বিজিপিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। কক্সবাজার ১৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম এঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই