অন্ধত্ব দমাতে পারেনি ৪র্থ শ্রেণির সাথীকে, ফারজানার সাহায্যে দিচ্ছে পিএসসি পরীক্ষা

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ফারহানা আক্তার। আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেবে সে। কিন্তু এক বছর আগেই শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর শ্রুতলেখক হিসেবে এবার সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে সে। অবশ্য ফারহানা একা নয়, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া চট্টগ্রাম নগরের ১০ শিক্ষার্থী এ বছর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সবার পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে নয়জন এবং হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শ্রুতলেখক হয়েছে নাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়জন এবং হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো এই ১০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বলে মনে করেন সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ভয় অনেকটাই কেটে যাবে।

ফারহানার মা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়েকে শ্রুতলেখক হিসেবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর হয়ে পরীক্ষা দিতে বলেছি। ওদেরও একটু সাহায্য হলো আর আমার মেয়েরও পরীক্ষার ভয় কাটবে বলে আমার মনে হয়।’

গত মঙ্গলবার হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর আসন পড়েছে একই কক্ষে। প্রতি পরীক্ষার্থীর পাশে একজন শ্রুতলেখক। প্রথমে শ্রুতলেখক প্রশ্ন পরীক্ষার্থীকে (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী) শোনাচ্ছে। প্রশ্ন শুনে উত্তর বলে যাচ্ছে পরীক্ষার্থী।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শেখ নাঈম হাসান বলে, ‘ওরা (শ্রুতলেখক) আমাদের জন্য কষ্ট করছে। আমরা প্রশ্ন না বুঝলে আবার শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়ে দেয়।’

শ্রুতলেখক ফারহানা জানায়, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে তার ভালো লাগছে। পরীক্ষা নিয়েও ভয় কেটে গেছে। প্রায় একই কথা বলল আরেক শ্রুতলেখক মো. মহিউদ্দিন।

যে ১০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবার সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের আটজনই জন্মান্ধ। বাকি দুজনের মধ্যে সাফাত সরওয়ার নামের একজন আট মাস বয়সে খাট থেকে পড়ে দৃষ্টিশক্তি হারায়। অপরজন কাজী মুনতাসির। ছয় মাস বয়সে তার হাম হয়। এরপর দৃষ্টিশক্তি চলে যায়।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করে। কিন্তু পরীক্ষা দিতে হয় প্রচলিত নিয়মে, খাতায় উত্তর লিখে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী আজাদ হোসেন বলে, ‘প্রতিবার শ্রুতলেখক পেতে সমস্যা হয়। এবার পাওয়া গেছে। আমরা বললেও অনেক সময় অনেকে ঠিকভাবে লিখতে পারে না। তাই ব্রেইল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’

ছেলেমেয়েরা যখন কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছিল তখন বাইরে অপেক্ষা করছিল অভিভাবকেরা। পরীক্ষার্থী সাফাতের মা কোহিনুর বেগম বলেন, তাঁর ছেলে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ে। পরীক্ষাও ব্রেইল অথবা কম্পিউটার পদ্ধতিতে হলে ভালো হতো। -প্রথম আলো।



মন্তব্য চালু নেই