অদ্ভুত গ্রাম: যেখানে মানুষ ও কুমির একে অপরের বন্ধু (ভিডিও)

কুমিরের সাথে কি মানুষের বন্ধুত্ব হতে পারে? কখনোই তা সম্ভব নয়। কারণ প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে বুদ্ধিবৃত্তিতে খুবই আদিম প্রকৃতির হওয়ায় কুমির সাধারণত শুধু বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, আক্রমণ বা আত্মরক্ষার জন্য সহজাত প্রতিক্রিয়া দেখায়। আলাদা একটি প্রজাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক তৈরি করা কুমিরের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব প্রাণিবিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছরের পর বছর মানুষ ও কুমির একে অপরের সাথে মিলেমিশে বাস করছে। ভুল করেও কোনোদিন কোনো কুমির মানুষকে আক্রমণ করে নি এবং মানুষও কোনোদিন কুমির হত্যা করে নি। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস করুন বা নাই করুন ঘটনা সত্য।

যেখানে ঘটছে বিরল এই ঘটনাটি:

আফ্রিকা মহাদেশের ঘানার ছোট্ট একটি গ্রামে ঘটে চলেছে বিরল এই ঘটনা। গ্রামটির নাম ‘পাগার’। এখানকার অধিবাসীরা বছরের পর বছর ধরে কুমিরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে চলেছে। মানুষের পাশাপাশি গ্রামটিতে রয়েছে প্রায় শ খানেক কুমির।

মানুষ ও কুমিরের মধ্যে বিরল এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে প্রাণিবিজ্ঞানীরাও হতবাক। যা তাদের কাছে খুবই রহস্যের একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত। স্থানীয়দের মতে, তারা বিশ্বাস করেন প্রতিটি গ্রামবাসীর আত্মার সাথে এক একটি কুমিরের সম্পর্ক রয়েছে। এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আরও রহস্যের জন্ম দেয়। যেমন – স্থানীয় একজন সুপরিচিত ব্যক্তির মৃত্যু ও একটি কুমিরের মৃত্যু একই সময়ে হয়েছিল। গ্রামবাসী বিশ্বাস করে যে, কুমিরগুলো তাদের গ্রামের মৃত আত্মীয়স্বজনেরই আত্মা।

এই গ্রামটি কিন্তু নদী-নালা বেষ্টিত নয়। চারিদিকে স্থলপথ বেষ্টিত এই গ্রামটি। এখানকার একটি পুকুরেই কুমিরগুলোর বসবাস।

crocodile

শুরুর ঘটনা:

এই ঘটনার শুরুর দিকে চোখ ফেরালে আরও আশ্চর্য হতে হয়। তবে আজ থেকে কত বছর আগে কুমিরগুলো এই গ্রামে এসেছে সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য কারো জানা নেই। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে এই অঞ্চলে প্রথম যে মানুষটি বসবাস করতে এসেছিল সেই মানুষটির দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়ে প্রাণ প্রায় যায় যায় অবস্থা। এমন সময় একটি কুমিরকে অনুসরণ করে সেই লোকটি পুকুরের সন্ধান পায় এবং প্রাণে বেঁচে যায়। প্রতিদানে তিনি এ অঞ্চলের কুমিরগুলোকে পবিত্র ঘোষণা করেছিলেন এবং নিজের লোকজনের কাছে এই প্রাণীকে একটি বিশেষ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। এখনো পাগারে কুমির হত্যা করা বা তাদের আঘাত করা ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। কিংবদন্তি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এ অঞ্চলে কুমিরের বসবাস মানুষের বসবাস শুরু হওয়ার আগে থেকেই।

পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠা:

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পাগারের এই বিচিত্র কুমিরের কথা জানতে পেরে দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতি বছর এই গ্রামে আসেন। বলা চলে এটি এখন ঘানার অন্যতম একটি পর্যটন অঞ্চল। প্রতিদিনই বেশ কিছু পর্যটক এখানে আসেন। তাদের জন্য প্রতিদিন কুমিরের পুকুরে কুমির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। একজন প্রদর্শক বাঁশি বাজান কুমিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। তারপর জীবন্ত মুরগি ছানা দোলাতে থাকেন, যাতে কুমির পানির ওপরে বেরিয়ে আসে। প্রদর্শক কুমিরকে খাওয়ানোর পর শুরু হয় সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার, ইচ্ছুক পর্যটকরা এ সময় কুমিরের শরীর ছুঁতে পারেন, আদর করতে পারেন, এমনকি অনেকে পিঠে চড়েও বসেন।

-crocodile

প্রাণিবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা:

কুমিরের এই অদ্ভুত আচরণ প্রাণিবিজ্ঞানীদের বুড়ো আঙুল দেখালেও প্রাণিবিজ্ঞানীরা কিন্তু বসে নেই। তারাও এই রহস্যময় ও অদ্ভুত আচররেণর কারণ বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। তাদের মতে, কুমির আর মানুষের এই সুসম্পর্কের একটা কারণ হতে পারে খাবারের প্রাচুর্য। এমনিতেই পাগারের পুকুরগুলো ব্যাঙ আর মাছে পূর্ণ, তার ওপর গ্রামবাসীর নিয়মিত পরিবেশিত মুরগিছানা তো খাবার হিসেবে পাচ্ছেই কুমিরগুলো। কুমির দেখতে আসা পর্যটকরা গ্রামবাসীর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

ভাবতে অবাক লাগে। চিরকাল যেই কুমির মানুষের রক্তের গন্ধ পেলেই তেরে ছুটে আসে, মুহুর্তের মধ্যেই ছিন্নভিন্ন করে ফেলে মানব শরীর, সেই কুমির কিনা মানুষকে এতো কাছে পেয়েও চুপচাপ বসে আছে!

ভিডিও:



মন্তব্য চালু নেই