অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ভাষার বৈকল্য কাটিয়ে উঠার টিপস

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের কথা বলতে সমস্যা হয়। তাদের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য মধ্যবর্তিতা বা থেরাপির প্রয়োজন হয়। মুখ, গলা বা জিহবার পেশীর বিকাশের ঘাটতির ফলেই ভাষার বৈকল্য সৃষ্টি হয়। শিশু তথ্য প্রক্রিয়া এবং তার চারপাশে উচ্চারিত ভাষা বুঝতে সক্ষম হয়না বলে তার বক্তব্য প্রভাবিত হয়। অটিজমের ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ যার জন্য শিশুর শব্দগত ও শব্দহীন যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। যদি একবার সাইকোলজিস্টের মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা হয় তাহলে পিতামাতার উচিৎ একজন পেশাদার চিকিৎসকের সাহায্য নেয়া। অটিজম আক্রান্ত শিশুর ভাষার বৈকল্য ঠিক করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জেনে নিই চলুন।

১। শিশুর কথা বলার শিল্প শেখা ও বোঝার জন্য স্পিচ জেনারেটিং ডিভাইস বা পিকচার কিউ সাহায্য করতে পারে। এগুলো ব্যবহারের ফলে শিশুর বাকশক্তির উন্নতি হতে পারে। ছবি ও শব্দের সমন্বয়ের ফলে শিশু বুঝতে পারে সহজে, শিখতে ও কথা বলতেও সাহায্য করে এগুলো।

২। শিশুর বাকশক্তির সমস্যা দূর করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে গেসচার কিউ বা অঙ্গভঙ্গির ইঙ্গিত। থেরাপিস্ট বা পিতামাতা কোন বর্ণ বলার সময় মুখে আঙ্গুল স্পর্শ করেন যেমন- আপনি যদি আপনার তর্জনী আঙ্গুলটি আপনার ঠোঁটের সামনে রাখেন এবং কোন বর্ণ বলার সময় নাড়েন তাহলে এই ইঙ্গিতটির ফলে শিশু মনোযোগ দেবে এবং বুঝতে পারবে কীভাবে ঠোঁটের মাধ্যমে শব্দ গঠিত হয়। এটি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বোঝানোর জন্য একটি ভালো উপায়। সে যেন আপনার প্রতি মনোযোগী হয় এবং আপনাকে অনুকরণ করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দভান্ডার দিয়ে শুরু করাটাই জরুরী। এক্ষেত্রে পরিবার ও চিকিৎসক মিলে ১০-২০ টি শব্দ নির্বাচন করবেন। দৈনিক ব্যবহারের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় শব্দ যেমন- মা, বাবা, খাওয়া, যাওয়া, খেলা ইত্যাদি নির্বাচন করুন। শিশুকে এই শব্দগুলোকে অনুসরণ করতে হবে। এজন্য ঘরে আপনার সন্তানের সামনে এই শব্দগুলো ব্যবহার করুন।

প্রথমে কোন শব্দ বলার ক্ষেত্রে শিশুর আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আস্তে আস্তে সে নিজেই এগুলো বলতে সক্ষম হবে। এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকলে সে বাক্যও বলতে পারবে। এটি শুনতে সহজ মনে হলেও একজন প্রশিক্ষিত স্পীচ থেরাপিস্টের সাহায্যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে। আপনার অটিস্টিক সন্তানের ভাষার বিকাশের জন্য আপনি ঘরে যে জিনিসগুলো করতে পারেন তা হল :

– আপনার সন্তান যে জিনিসটি চাচ্ছে তা আপনার মুখের কাছে নিয়ে এর নাম উচ্চারন করুন যেমন- আপনার সন্তান হয়তো টেডি বিয়ার চাচ্ছে। আপনি টেডি বিয়ারটির নাম বার বার বলুন এবং টেডি বিয়ারটি তাকে দিয়ে তাকেও এর নামটি বলার জন্য উৎসাহিত করুন। এই কৌশলটির ফলে শিশু আপনার ঠোঁটের নড়াচড়ার প্রতি মনোযোগী হবে এবং সে যে জিনিসটি চাচ্ছে তার প্রতি ও উৎসাহিত হবে।

– আপনার শিশুকে যেকোন দুটি জিনিস থেকে একটি বেঁছে নেয়ার অফার দিন যেমন- টেডি বিয়ার ও খেলনা ট্রেনের মধ্যে কোনটি সে চায় তা তাকে বেঁছে নিতে দিন। প্রশ্ন করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে যেকোন একটিকে বেঁছে নেয়।

– আরেকটি সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, আর তাহল একটি কাগজ গোলাকার করে ভাঁজ করে নিয়ে মুখে লাগিয়ে কথা বলুন। এর ফলে আপনার কণ্ঠস্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন শোনাবে। এর ফলে আপনার শিশুর মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা লক্ষ করুন। তার যেকোন অর্জনের বিষয়ে প্রশংসা করুন।

– শব্দের শুরু বা শেষের উপর জোর দিন। শিশুর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করুন এবং তাকে অনুকরণ করতে উৎসাহিত করুন।



মন্তব্য চালু নেই