‘এখন কামকাজ পারি না, তাই চিকিৎসা খরচও জোটে না’
আজ ২৪ এপ্রিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটে এই দিনে।সাভার বাজার স্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা ৫টি পোশাক কারখানা ও কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়ে মুহূর্তের মধ্য আজকের এই দিনে ধ্বসে পড়ে।সরকারী হিসাব অনুযায়ী ধ্বসস্তুপে নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান প্রায় ১১’শ ৩৪ জন শ্রমিক আর আহত হয় আরও দুই হাজার চার’শ আটত্রিশ জন শ্রমিক।ভবন ধ্বসের ৪ বছর পার হলেও এখনও অনেক আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ।এছাড়া আহত অনেক শ্রমিক আর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পেরে আজও ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনে, কেউ কেউ আবার হয়ে গেছে প্রতিবন্ধি। সাভার থেকে আরো বিস্তারিত জানাচ্ছেন আওয়ার নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক টিপু সুলতান (রবিন)।
রেহেনা আক্তার; রানাপ্লাজার ৮ তলার নিউওয়েব স্টাইল লিমিটেডএ কিউসি হিসেবে কাজ করতেন পোশাক কর্মি রেহেনা আক্তার ।পাশের এটি দেয়াল তার বামপায়ের উপরে পড়ে।ঘটনার দিন সন্ধ্যায়র উদ্ধার হলেও হারিয়েছেন পা। চিকিৎসকরা ঘটনার পরেরদিনই কেটে ফেলে পা। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসাও করতে পারছেন না তিনি। এর মধ্যে মাথা, সহ শরীরের নানা অঙ্গে সমস্যায় ভূগছেন তিনি।কর্ম অক্ষম রেহেনা আওয়ার নিউজকে বলেন এখন আর কাজকাম করতে পারি না, নিত্য নতুন রোগ হইতাছে আমার স্বামী যা রোজগার করে তাতে চিকিৎসার খরচ ও জোটে না। ক্ষতিপূরন পেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠবেন এমন আশা এখনও তার।
রেহেনা আক্তার
রানাপ্লাজার সাত তলায় নিউওয়বে স্টাইল লিমিটেডএ সইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন উজ্জল দাস। ভবন ধসে পড়ার সাত ঘন্টা পর উদ্ধার হন তিনি।শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হলেও বাহির দেখে বোঝার উপায় নেই। সে আঘাত চার বছর পরেও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।সহায়তা হিসেবে মানুষের কাছ থেকে কিছু টাকা পেলেও সে টাকায় নিজের চিকিৎসাও শেষ করতে পারেননি তিনি।শ্রী উজ্জল দাস জানান সাড়ে তিন লক্ষটাকা পেয়েছে সে কিন্তু অন্য যাদের শরীরে এটা সেলাইও পড়েনি তারাও ১০-১২ লাখ টাকা পেয়েছে,এরই মধ্য নানান রোগ বালাই ভড় করেছে তার দেহে,সাভারের রাজার বাড়ী এলাকায় ছোট একটি মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান করে তার চিকিৎসা করার মত টাকা টুকুও আয় হয়না,তার উপর নির্ভর করে তার সংসার। সহায়তার আশ্বাস নয় জীবনের বাকি সময়টুকু শান্তিতে বেঁচে থাকতে ন্যায্য ক্ষতিপূরনের সাথে চিকিৎসা সেবার দাবী জানান তিনি।
উজ্জল দাস
রানা প্লাজায় নয়, পাশের ভবনে একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন সাদ্দাম হোসেন। রানা প্লাজা ধ্বসে পড়েছিল সে ভবনটির উপর। সেখানেও মারা গিয়েছিলেন কয়েকজন। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু কেটে ফেলতে হয়েছে তার একটি হাত,শুধু হতেই নয় পয়েও রয়েছে বড় ক্ষত। চার বছর পারহলেও এখনো তিনি সাভারের পক্ষাঘাত পূনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতিমাসেই চিকিৎসা নিতে যান।আওয়ার নিউজকে সাদ্দাম হোসেন জানান পড়াশোনা করার পাশাপাশি ছোট্ট একটি চাকুরি করতো সে।এই চাকুরি করার কারনেই তার আজ এই করুন অবস্থা,আজ তিনি তার হাতের পাশা,পাশি অন্যন্য ক্ষত স্থানে নতুন করে সমস্য দেখা দেওয়ায় হতাশ।যতটুকু সহায্যপেয়েছেন তা চিকিৎসার জন্য আগেই খরচ হয়েছে,এখন নতুনকরে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন আরও টাকা, কিন্তু সাদ্দাম হোসেন টাকা চায়না ,চায় তার প্রাপ্য ক্ষতিপূরন যা তিনি এখনও পাননি।তার এখন এটাই চাওয়া সংশিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন যেন বিনামূল্যে চিকিৎসাটুকু করাতে পারেন এমন একটি ব্যবস্থা যেন করা হয় তাতেকরে শুধু সাদ্দাম হোসেন ই নন তার মত সকল আহত ও প্রতিবন্ধি শ্রমিকরা যেন চিকিৎসা অভাবে মারা না যায়।
অন্যদিকে রানাপ্লাজা ধ্বসের চার বছর পারহয়ে গেলেও এখনও ভবন মালিক, র্গামেন্টর্স মালিক সহ ভবন ধ্বসের সাথে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন আওয়ার নিউজকে বলেন আজ চার বছর পার হলেও যারা এই ভবন ধ্বসের সাথে জড়িত তাদের বিচার হচ্ছে না।যারা আহত শ্রমিক তাদের ন্যয্য ক্ষতি পূরণ পাচ্ছে না।অনেক শ্রমিক চিকিৎসা করাতে পাছেনা,যারা কাজ করতে যাচ্ছে সাধারণ শ্রমিকদের তুলনায় কাজ না করতে পারায় তাদের কাজ থেকে বের করে দেওয়ার ও অভিযোগ করেন তিনি।এ সমস্ত অনিয়মকে সরকারের অমনযোগীভাব কে দায়ী করে তিনি বলেন দায়ী আসামীদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।আহত,ওপ্রতিবন্ধি শ্রমিকদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও পূর্ণবাসন সহ অবিলম্মে নিহত আহত শ্রমিকদের ক্ষতি পূরণ প্রদানের দাবী জানান শ্রমিক নেতা সুজন।
পরিশেষে, ভবন ধ্বসের চার বছরে এসে হতভাগা শ্রমিকদের এখন একটাই প্রাণের দাবি আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ সরকার বা বিজেএমই’র পক্ষ থেকে যেন তাদের জন্য পূর্ণবাসনসহ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে ভবন ধ্বসের ঘটনায় প্রধান আসামী ভবন মালিকসহ সকল দোষীদের অবিলম্বে বিচারের মুখো মুখী করা হোক।
মন্তব্য চালু নেই