‘৪০ হাজার কোটি টাকার সভরেন বন্ড ছাড়া হবে’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সভরেন বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই বন্ড ছাড়া হবে। এজন্য প্রথমে সভরেন ওয়েলথ ফান্ড গঠন করা হবে সেখান থেকেই সভরেন বন্ডের অর্থ যোগান দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীসহ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই)একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। এরপর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে ৩২.৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। সেখান থেকে এ বন্ড ছাড়া হবে। পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য বড় প্রকল্পে এ বন্ড থেকে অর্থ যোগান দেওয়া হবে। তবে ৫০০ কোটি ডলারের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করা হলেও প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি ডলারের বন্ড ছাড়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বন্ডের সুদের হার কত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে, মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিদেশ থেকে আমরা যে নমনীয় সুদে ঋণ নিই, তা থেকে সুদের হার বেশি হবে।’

মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা যে টাকা নিই, তাতে অনেক সময় অসুবিধা তৈরি হয়। তাই বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে যে ঋণ নেওয়া হয় তার জন্যও সুদ দিতে হয়। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সে অর্থের জন্য যে সুদ দেওয়া হবে তা দেশেই থেকে যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, বন্ড ছাড়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-কে দয়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে বন্ড ছাড়ার বিষয়ে প্রতিবেদনটি পাওয়া গেছে। সেটি এখনো দেখা হয়নি। বন্ড ছাড়ার আগে তা কেবিনেট বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যতটা সম্ভব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করে জাতীয় সংসদে আগামী অধিবেশনে আইন প্রণয়নের জন্য একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।

বন্ড ইস্যুর জন্য আলাদা কোনো সংস্থা গঠন করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই একটি সংস্থার অধীনে এ কাজটি করতে হবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি সংস্থা গঠন করা হবে। এতে ২/৩ মাস সময় লাগতে পারে।

তিনি বলেন, সভরেন বন্ড সাধারণত সম্পদশালী দেশগুলো করে থাকে। আমাদের দেশে এমন উদ্যোগ এটাই প্রথম। আমাদের আর্থিক অবস্থা অন্যান্য দেশের মতো সমৃদ্ধিশালী না হলেও আমাদের মানবসম্পদ রয়েছে। তারাই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে মুখ্য ভূমিকা পারন করছে। মানবসম্পদই আমাদের বড় সম্পদ।

গ্রামীণফোনের সিইও’র সাক্ষাৎ : এর আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার বি. ফারবার্গ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলে দেখা করতে এলেও সেটা আর সৌজন্য সাক্ষাৎ থাকে না। তারা নানা সমস্যা তুলে ধরেন। বিশেষ করে তারা অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে নাকি উচ্চহারে কর আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে তারা ৪৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। অন্যরা সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। এমনটা হলে এক্ষেত্রে কিছুটা বৈসাদৃশ্য রয়েছে মনে হয়। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তারা একটি আদেশের অধীনে ব্যবসা করছে। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এনবিআর নির্দেশনা দিয়েছে তাদেরকে লিগ্যাল সার্ভিস এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রার্ড কর্মকর্তা নিতে হবে। যা তাদের জন্য খুব দুরূহ বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তারা বলেছেন, তরঙ্গ নিলামের সময়ই ভ্যাট কেটে রাখা হয়। আবার যে প্রতিষ্ঠান নিলামে তরঙ্গ কিনল তার ওপর আবার ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। তরঙ্গের জন্য কোম্পানিগুলো যে টাকা দেয় তা সরকারি কোষাগারেই যায়। এর ওপর আবার ট্যাক্স কেন বসানো হলো। বিষয়টি কীভাবে এলো তা দেখতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই