মার্কেট-ফুটপাতে বৈশাখী আমেজ

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আগামী শুক্রবার ১৪ এপ্রিল উদযাপিত হতে যাচ্ছে এই প্রাণের উৎসব। ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি বরণ করবে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে। এই উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে রাজধানীতে।

বৈশাখকে সামনে রেখে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে শুরু করে রাজধানীর অভিজাত দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। কেনাকাটায় ধুম লেগেছে ছোট-বড় বিপণিবিতানগুলোতেও। পরিবার পরিজনসহ নানা রঙের নতুন পোশাকে নিজেকে সাজাতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতার। সর্বত্রই এখন বৈশাখী আমেজ।

নববর্ষ বরণে এখন শুধু পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বাঙালি, এ সময় পুরো দেশ রঙিন সাজে সেজে ওঠার প্রস্তুতি নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন পোশাক কেনাকাটায় নগরবাসী এখন ব্যস্ত। ছোট-বড় সকলেরই পছন্দ এসে মিলে যায় বৈশাখ বরণে। নববর্ষের সাজে বাঙালির চিরায়ত সাজ থাকলেও প্রতি বছর স্টাইলে খানিকটা পরিবর্তন আসে। আর এই সুযোগে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাহারি ডিজাইনের বৈশাখী পণ্য সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরাও।

সকলেরই পছন্দ লাল-সাদা রঙের পোশাক। তবে এবার লাল-সাদার পাশাপাশি মেজেন্ডা, মেরুন, কমলা, অফ হোয়াইট ও উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে পোশাকগুলোকে দেওয়া হয়েছে উৎসবের আমেজ। ক্রেতারাও ভিন্ন রঙের পোশাকে বৈশাখ বরণ করতে স্বাচ্ছ্যন্দেই আকৃষ্ট হচ্ছেন লাল-সাদাসহ বাহারি রঙের পোশাক কিনতে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা লাল-সাদার কম্বিনেশনে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি নিয়ে এসেছেন। এখানে কাতান, তাঁত, টাঙ্গাইল ও বুটিকস, সিল্ক, জামদানি, কোটাসহ নানা ধরনের বৈশাখের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। শাড়িগুলো মিলবে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

কয়েকটি শপিংমলে দেখা যায়, পাঞ্জাবি, শাড়ি, কুর্তা, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া ও ছোটদের বাহারি রঙের পোশাকে সাজানো সব দোকান। সেই সঙ্গে রয়েছে লোকজ ঐহিত্যের ছাপ। তরুণীরা শাড়ি এবং সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন গহনা। পোশাকের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, ঢোল, মুখোশ ইত্যাদি। শপিংমল কিংবা মার্কেটের পাশাপাশি এসব দেশজ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে মেলা ও ফুটপাতে।

পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে লোকে যে কেবল নতুন কাপড়ই কিনছেন তা নয়, মুঠোফোনসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিকস সামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে। এমনকি ঘরবাড়ি সাজানোর জন্যও অনেকে কেনাকাটা করছেন। ফলে বেচাকেনা জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলোতে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবার পহেলা বৈশাখে লাল-সাদার কদর বেশি থাকে। তবে ফ্যাশনের পরিবর্তন ও ভিন্ন দেখার চিন্তাভাবনা থেকে তরুণীরা বর্তমানে বিভিন্ন রঙের পোশাককেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বৈশাখের কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে আসা রাইসা রফিক নামের বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈশাখ মানেই যেন নিজস্ব কোনো ফ্যাশন। সাদা এবং লালের আধিক্য রেখে যে কোনো পোশাকই ভাল লাগে।’ শাড়ির সঙ্গে কিছু অলংকার মিলিয়ে কেনার জন্য তিনি এসেছেন নিউমার্কেটে, এরপর লেইজ কিনতে যাবেন চন্দ্রিমায়। সব মিলিয়ে বৈশাখী উৎসবের আমেজ তিনি এখন থেকেই পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন।

শ্যামলী থেকে আসা আশালতা বলেন, ‘প্রতি পহেলা বৈশাখেই আমি শাড়ি পরি। এবারো পরবো লাল-সাদা শাড়ি। সঙ্গে কাঁচের চুড়ি। কালেকশন দেখতে এসেছি, ভালই লাগছে। অনেক কালেকশন দেখছি মার্কেটে।’

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ির ব্যবসায়ী শিপন হোসেন বলেন, ‘এপ্রিলের প্রথম থেকে বৈশাখের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। বেচা-কেনা খারাপ না। শাড়ি তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিক্রি চলবে।’ গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি ভাল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই