চলছে ইরি মওসুম, এগুচ্ছে না কাজ

ভেস্তে যেতে পারে সরকারের বিদ্যুৎ পরিকল্পনা

ধীর গতিতে এগুচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রম। সময়মতো অর্থ ছাড় হলেও উন্নয়ন কাজ চলছে ঢিমে তালে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সময় মতো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। তার মানে এবারের ইরি-বোরো মওসুম চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে।

চলতি অর্থবছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। আবার কাজ শুরু হলেও লক্ষ্যমাত্রার আশেপাশেও নেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও সংস্থাগুলো। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৩৩ শতাংশ, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘শুরু থেকে এডিপি বাস্তবায়ন ঠিকমতো না এগুলে বছরের শেষে চাপ বাড়ে। এ সময় তাড়াহুড়ো করে কাজ সমাপ্তের চেষ্টা করা হয়। এতে কাজ মানসম্পন্ন হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কাজ শেষ না হলে তা টেনে পরের বছরের জন্য রেখে দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় লাগে, খরচও বাড়ে। যা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়।’

তবে কার্যক্রমের এমন ধীরগতির জন্য বিদ্যুৎবিভাগ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হরতাল অবরোধ থাকলে প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। বিশেষ করে প্রকল্পের বিদেশি প্রকৌশলীরা অস্থির পরিস্থিতিতে কাজ করতে চান না। এতে কাজ পিছিয়ে যায়।

সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৬৭টি প্রকল্প রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ হলো ৯ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। বরাদ্দের বিপরীতে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ । খুলনা ও কুমিল্লায় বিদ্যুতের প্রিপেউড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি। ঢাকা,চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহিতে পল্লীবিদ্যুতের সম্প্রসারণ কার্যত্রক্রম লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

বেসরকারি খাতের সামিট গ্রুপের ব্যর্থতার পর পিডিবি নিজেই বিবিয়ানায় একটি ৪০০ মেগাওয়াটের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত সাত কোটি টাকা ছাড় করা হলেও এক টাকাও খরচ হয়নি।

শাহজিবাজার ৩৫ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হলেও কোনো টাকা ছাড় হয়নি। এছাড়া বাঘাবাড়ি ১০০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট এবং চাপাঁইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পর অবস্থাও একই পর্যায়ে রয়েছে। শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া একটি ২৭৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলা হলেও এখনও কোনো টাকা খরচ হয়নি । এমনকি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।

গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১১ কেভি (কিলোভোল্ট) সুইচিং স্টেশন নির্মাণের একটি প্রকল্প থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

সিটি করপোরেশনগুলোর রাস্তা সৌরবিদ্যুৎ দ্বারা আলোকিত করার একটি প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ শতাংশ। এছাড়া এরমধ্যেই অনেক বাল্ব অকেজো হয়ে গেছে।



মন্তব্য চালু নেই