ভারত-মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্ত

ভূমি জটিলতায় বান্দরবানে বিজিবি কার্যালয় স্থাপন অনিশ্চিত

বান্দরবান জেলায় বিজিবির সেক্টর কার্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি অনুমোদন হলেও ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা ও পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিরোধীতার মুখে প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।
শহরের কাছে ময়নাতলী ব্রিজ এলাকার তারাছা মৌজায় বিজিবির সেক্টর কার্যালয়ের জন্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ২৫ একর জায়গা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ওই জমির অনেক অংশ বৌদ্ধ ধর্মগুরু উচহ্লা ভান্তে দাবি করায় ও জনসংহতি সমিতি ইউপিডিএফের বিরোধিতার মুখে সেক্টর কার্যালয় স্থাপন করা যাচ্ছে না। ফলে বান্দরবান সেক্টরের দাপ্তরিক কাজ চালাতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে বিজিবিকে।
বর্তমানে বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে সাতকানিয়ার ব্য়াতুল ইজ্জত বিজিবির টেনিং সেন্টার স্কুলের একটি পুরনো ভবনে বিজিবির সেক্টরের কাজ চলছে।
এদিকে বান্দরবানের রুমা থেকে আলীকদম পর্যন্ত প্রায় ১৪২ কিলোমিটার মায়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত পরে রয়েছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ৪৪ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমান্তে থানছির বড় মদক ক্যাম্প ছাড়া অন্য কোনো ক্যাম্প না থাকায় পুরো সীমান্তই অরক্ষিত। এসব সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারের পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা, অস্ত্র ব্যবসা ও মায়ানমার থেকে লোকজনদের অবাধে যাতায়াত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় বান্দরবানে বিজিবির সেক্টর কার্যালয় স্থাপন অনিশ্চিত হয়ে পরায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তারাছা মৌজায় বিজিবির সেক্টর কার্যালয় স্থাপনের জন্য অনুমোদন দেয়। এর আগে চাইঙ্গা এলাকায় বিজিবির সেক্টর কার্যালয়ের জন্য জায়গা দেখা হলেও স্থানীয়রা বিরোধিতা করায় সেখান থেকে সরে আসে বিজিবি। পরে তারাছা মৌজার জায়গাটি সেক্টর কার্যালয়ের জন্য উপযোগী হওয়ায় সেখানে বিজিবি স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করলে বাধা দেন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা উচহ্লা ভান্তে ও তার শিষ্যরা। একই সঙ্গে জনসংহতি সমিতি ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোও বিরোধিতা করে।
বিজিবির সেক্টর কার্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে সংগঠনগুলো মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিলও করে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে বৌদ্ধ ধর্ম গুরুরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে।
স্থানীয় পাহাড়ি নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কাছেও অভিযোগ প্রদান করে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কমিশন সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছে।
বান্দরবান রোয়াংছড়ি সড়কের ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের উপর উচহ্লা ভান্তে রামজাদী তৈরি করেছেন। সেক্টর কার্যালয়ের জন্য অনুমোদনকৃত ২৫ একর জমি রামজাদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় হওয়ায় এই রামজাদীর সূত্র ধরেই বিজিবি সেক্টর কার্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করছেন ভান্তে।
উচহ্লা ভান্তের অভিযোগ, রামজাদীর পাশে সেক্টর কার্যালয় হলে সেখানে ধর্মীয় পরিবেশ নষ্ট হবে। এছাড়া সেক্টর কার্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে তার বাবার নামের ৬ একরেও বেশি জায়গা রয়েছে বলে দাবি করেন ভান্তে।
অন্যদিকে, ইউপিডিএফের জেলা সমন্বয়ক ছোটন কান্তি তংচঙ্গা জানান, এমনিতে বান্দরবান ভূমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তার উপর সেক্টর কার্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সাইফুল ইসলাম জানান, বান্দরবান সেক্টরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর হয়েছে। কিন্তু ভূমি সমস্যার কারণে বান্দরবানে স্থাপনার কাজ শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি তারাছা মৌজায় ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়া হলেও একটি চক্রের বিরোধিতায় সেখানেও কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, অধিগ্রহণকৃত জায়গার মধ্যে ভান্তের জায়গা রয়েছে বলে দাবি করা হলেও এর স্বপক্ষে কোনো নথিপত্র নেই। বিরোধপূর্ণ জায়গাটি খ্রিস্টান মিশনারীর। কিন্তু এরপরও ওই এলাকায় বিজিবি সেক্টর কার্যালয় স্থাপন করতে দেয়া হচ্ছে না। মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সমস্যা চলায় খুব শিগগিরই বান্দরবানে সেক্টরের কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই