বন্ধ গণমাধ্যম ‍খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার ব্যাপারে এখনও সরকার সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।’

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউতে এক অনুষ্ঠানে ডিআরইউর সভাপতি শাহেদ চৌধুরীর এক দাবির প্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি বন্ধ মিডিয়াগুলো খুলে দেয়া হোক। কারণ ডিআরইউর অনেক অনেক সদস্য এসব মিডিয়াতে কাজ করতেন।’ পাশাপাশি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এমনিতেই মিডিয়াগুলো বন্ধ করেনি। তারা যেভাবে আইন অমান্য করেছে তাতে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা কেবল লাইসেন্সগুলো স্থগিত করেছি। এজন্য আমাদের ধন্যবাদ জানানো দরকার।’

প্রসঙ্গত, তথ্য ও প্রযুক্তি আইন অমান্য করার অভিযোগে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা স্থগিত রেখেছে। একই সঙ্গে বন্ধ রেখেছে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার।

সাগর-রুনী হত্যার বিচারের ব্যাপারে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি নিজেও মর্মাহত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন খুনিদের যত দ্রুত সম্ভব বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন।’

সাংবাদিকদের খাপ খোলা তলোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতার খেলাতে রাজনীতিকদের অনেক দুর্বলতা থাকবে। কিন্তু সাংবাদিকদের সজাগ থাকতে হবে। আপনারা (সাংবাদিকেরা) সরকারে বেশি বেশি সমালোচনা করুন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে প্রতিবেদন করুন। আমি আপনাদের পাশে আছি। আমার দরজা আপনাদের জন্য সব সময় খোলা। আমি মনে করি সমালোচনা হলে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পাবো।’

কোনো মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে প্রতিবেদন করা হলে তা না ছাপার জন্য সংবাদপত্রের সম্পাদকদের কাছে অনুরোধ আসে-ডিআরইউর সভাপতির এমন মন্তব্যের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সম্পাদকরা কেন কারো অনুরোধ শুনবেন? আমি চাই তারা মেরুদণ্ড সোজা করে চলুক।’

তথ্য অধিকার আইনকে জীবন্ত ও কার্যকর রাখতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি সাধারণ জনগণের জন্য করা হলেও তাদের চেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা এটা বেশি প্রয়োগ করতে পারেন, ব্যবহার করতে পারেন। তারা যতবেশি এই আইন চর্চা করবেন ততবেশি এটা জীবন্ত থাকবে।’

বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে ইনু বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট যা করেছে তা নিছক সন্ত্রাসবাদ। এটা গণআন্দোলনের কোনো সংজ্ঞাতেই পড়ে না। নির্বাচনের পর বিগত ১০ মাসেও এ ধরনের সন্ত্রাসবাদ চাপিয়ে দেয়া পায়তারা করছেন বেগম খালেদা জিয়া।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কাপ-পিরিচ, গরু চুরির মামলাও হয়েছে। কিন্তু এতিমদের টাকা চুরির মামলা কি এক হল? এটা চুরির মামলা, দুর্নীতির মামলা।’

একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহারে আমরা শঙ্কিত। এ আইনের মাধ্যমে অর্ধডজন সাংবাদিক কারাগারে ও মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তথ্য-প্রযুক্তি আইন যাতে অবাধে সাংবাদিকদের উপর প্রয়োগ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।’

জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে বা চলার পথে পায়ে বিঁধলে আমাদের লিখিত দেন। আমি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবো।’

রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘যে চুরি করে, সে আবার সিনা টান করে রাজনীতিও করে। চুরির মামলার হাজিরা দিয়ে বের হয় ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে। কতটা লজ্জাজনক! এই অবস্থায় আপনাদের (সাংবাদিক) কাজ করা কঠিন।’’

প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৯৫০ জন সাংবাদিক

ডিআরইউর উদ্যোগে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ওপর গত দুই বছরে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৯৫০ জন সাংবাদিক। যাদের সবাই দেশের কোনো না কোনো গণমাধ্যমে কাজ করছেন। তথ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য কমিশনের সরাসরি সহযোগিতায় এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আইনটি নানা দিক, প্রয়োগ ক্ষেত্র, সমস্যা, ব্যবহারের সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কর্মশালায় নিজেদের কর্মজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন সাংবাদিকেরা। আগামীতেও এ ধরনের কর্মশালা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন ডিআরইউ’র নেতারা।

কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ’র সভাপতি শাহেদ চৌধুরী। এতে আরও বক্তৃতা করেন, প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক, তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার, ডিআরইউ’র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, দপ্তর সম্পাদক শেখ জামাল হোসেন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই