প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আকুতি

নোয়াখালীতে যৌতুকের বলি ইমাম আক্তার ইমু হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে নোয়াখালীতে যৌতুকের বলি ইমাম আক্তার ইমু হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নোয়াখালী প্রেস ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতের মা রহিমা বেগম। সদর উপজেলার ৮নং এওজবালিয়া ইউনিয়নের চরশুল্লকিয়া গ্রামের দুলাল ব্যাপারী বাড়িতে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও ননদের অত্যাচারে গৃহবধু ইমাম আক্তার ইমু কে হত্যার প্রতিবাদে তার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতের মা রহিমা বেগম।

ইমুর মা জানায়, গত ৪/৫ বৎসর পূর্বে নোয়াখালী সদর উপজেলার ৮নং এওজবালিয়া ইউনিয়নের চর শুল্লকিয়া সাকিনের দুলাল ব্যাপারী বাড়িতে জনৈক নুরুল হুদার ছেলে সুমন এর সাথে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক কাবিন রেজিষ্ট্রি মূলে ইমুর বিবাহ হয়। বিবাহের পর হইতে ইমুর স্বামী সুমন শ্বশুর নূরুল হুদা, শ্বাশুড়ী ছায়েরা খাতুন, নন্নস বিবি নয়ন, লিপি, দেবর সহিদ, স্বপন গণ সহ তাদের পরিবারের লোকজন শ্বাশুড়ী ও স্বামী সুমনের ইন্দনে যৌতুকের দাবীতে ইমুর ওপর শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করিয়া আসিতেছিল। ইমুর মা রহিমা বেগম মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করিয়া কয়েক ধাপে মেয়ের শ্বাশুড়ী, শ্বশুর ও জামাতা সুমনকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে প্রদান করেন। ইমুর গর্ভে ১টি মেয়ে (২ বছর) ও ১টি ছেলে (৯মাস) সন্তান হয়। ইমু তার ১ ছেলে ১ মেয়ের দিকে তাকাইয়া স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, দেবর, ননদের অমানবিক নির্যাতন নিরবে সহ্য করিয়া আসিতেছিল।

২০১৪ইং সালের কোবানের ঈদের সময় যৌতুক লোভী সুমনের ইন্দনে তার মা ছায়েরা খাতুন ইমুকে যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে বলে যে, ২ লাখ টাকা যৌতুক না দিলে ইমুকে হত্যা করিবে বলিয়া হুমকি দেয় এবং সুমনের পরিবারের লোকজন সুমনকে পুনরায় বিয়ে করাইয়া বিদেশ নিবে। ইমাম আক্তার ইমু তার স্বামী, শ্বাশুড়ী, শ্বশুর ও তার পরিবারের দাবীকৃত যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তাকে যৌতুক লোভী পরিবার প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালাইত। উক্ত বিষয়ে ইমু তার মা রহিমা বেগমকে অবহিত করলে তার মা মেয়ের স্বামীর এলাকার কিছু লোকজনকে অবহিত করিয়া কয়েকটি শালিস দরবার করে। তারপরও তারা ক্ষান্ত না হেয়ে ইমুর উপর অমানবিক ও অমানসিক নির্যাতন করে, যাহা স্থানীয় পর্যায়ে বহু লোকজন অবগত আছে।

সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখ দিবাগত রাত ১২.০০ ঘটিকা অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ইং রাত ১২ টার সময় ইমুর জামাতা সুমন তার ব্যবহৃত মোবাইল হইতে ইমুর মা রহিমা বেগমের ব্যবহত মোবাইল ফোনে ফোন করিয়া জানায় যে, তার মেয়ে খুবই অসুস্থ, তাকে দেখে যাওয়ার জন্য। পরে ইমুর মা, ইমুর ভাই ওসমান গনি ও প্রতিবেশী রোজিনা আক্তার লক্ষ্মীপুর হইতে নোয়াখালী সদর উপজেলায় ৮নং এওজবালিয়া ইউনিয়নের চরশুল্লকিয়া গ্রামের দুলাল ব্যাপারী বাড়িতে মেয়ের জামাতা সুমনের বাড়িতে আসিয়া লোকজন মুখে জানতে পারে যে, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ইং তারিখে সকাল ১০ ঘটিকার সময় ইমাম আক্তারকে তাদের দাবীকৃত যৌতুকের টাকা বাড়ি হইতে আনিয়া দিতে বলে।

ইমু রাজি না হওয়ায় তার সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং তাকে হত্যা করিবে মর্মে তার শ্বশুরের পরিবারের লোকজন হুমকি দিয়াছিল। পরের দিনই ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ইং রাত ১০টার সময় ইমুর জামাতা, শ্বাশুড়ী, শ্বশুর ও পরিবারের লোজন পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশে ইমাম আক্তার ইমুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই কল্পনা মতে বাঁপা পিঠার সাথে বিষ (বিষ জাতীয় জিনিস) মিশাইয়া জোর পূর্বক খাওয়ানোর ফলে বিষের ক্রিয়া শুরু হওয়ায় ইমু চিৎকার শুরু করলে চিৎকার বন্ধ করার জন্য ইমুকে মারধর সহ গলা ও দুই ঠোঁট চিপিয়া ধরিয়া শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করে।

উক্ত বিষয়ে ইমুর মা রহিমা বেগম অবগত হইয়া আত্মীয়স্বজনকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করলে সুধারাম মডেল থানা, নোয়াখালীতে যাইয়া উক্ত বিষয়ে হত্যা মামলার এজাহার দিলে থানার লোকজন হত্যা মামলা না নিয়ে প্রাথমিক ভাবে অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। এসআই সুকান্ত চৌধুরী, সুধারাম থানা, নোয়াখালী ইমুর আত্মীয়স্বজনসহ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ইং রাত ০৯.১৫টার সময় ইমুর জামাতা সুমনের বাড়িতে যাইয়া ইমাম আক্তার ইমু এর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। রোজিনা আক্তার ও রহিম বেগম ইমুর শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন- গলার দুই পার্শ্বে, দুই ঠোঁটে, বুকের উপর, কোমরে জখমের চিহ্ন দেখিতে পাই। রহিমা বেগম ও রোজিনা পুলিশ অফিসার এসআই সুকান্তকে জখম গুলি হাত দিয়া দেখাই। পুলিশ অফিসার ঐ খানে রোজিনা আক্তার, ইমুর ভাই ওসমান গনিসহ কতেক লোকের স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে ইমুর পোস্ট মরটেম করানোর জন্য সদর হাসপাতাল, নোয়াখালীতে প্রেরণ করেন। ইমুর পোস্ট মর্টেম শেষে লাশ তার মায়ের নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হল, ইমুকে যদি তার স্বামী, শ্বাশুড়ী, শ্বশুর, দেবর, ননদ হত্যা না করিত, তাহলে কেউ না কেউ ইমুর লাশের সহিত হাসপাতালে আসিত। কিন্তু হাসপাতাল আনা দূরে কথা, ইমুকে দাফন করার জন্য কেউ আসে নাই।

গত ২২ জানুয়ারি বিকাল বেলায় এবং ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ইং সন্ধ্যার সময় ইমাম আক্তর ইমু এর খুনী সুমন ও তার পরিবারের লোকজন খুনী সুমনের মোবাইল হইতে রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফোন করিয়া হুমকি ধমক দিয়া বলে যে, উক্ত বিষয়ে মামলা করিলে ইমুর মত যে কোন পন্থায় তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়াইয়া হয়রানির শিকার করিবে।

সর্বশেষ ইমুর হত্যা সম্পর্কে সুরুত হাল রিপোর্ট সংগ্রহ করিয়া দেখা যায় যে, এসআই সুকান্ত চৌধুরী, সুধারাম মডেল থানা, নোয়াখালী সুরত হালে ইমুর শরীরের কোন জখম উল্লেখ করে নাই এবং ইমুর মৃত্যুর প্রাথমিক কোন কারণ নিশ্চিত করিতে পারে নাই বলিয়া উল্লেখ করেন, যাহা ইমুর মা রহিমা বেগম বহু বিজ্ঞ আইনজীবীদের সহিত আলোচনা করিয়া জানিতে পারে বলে জানায়। ইমুর মা রহিমা বেগমের সন্দেহ হইতেছে যে, তাহার বাড়ি অন্য জেলায় হওয়ায় কুখ্যাত খুনী, নারী নির্যাতনকারী, যৌতুক লোভীদেরকে বাঁচানোর জন্য এসআই সুকান্ত চৌধুরী সুরতহাল রিপোর্টে কোন জখম উল্লেখ করে নাই। শুধু মুখে, নাকে লালা নির্গতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাহা মূলত যৌতুকের টাকার দাবীতে আগের দিন নির্যাতন এবং পরের দিন বাঁপা পিঠার সাথে বিষ বা বিষ জাতীয় দ্রব্য মিশাইয়া খাওয়ানোর ফলে বিষ ক্রিয়া আরম্ভ হইলে চিৎকার দিলে খুনি সুমন ও তার পরিবারের লোকজন একই উদ্দেশ্যে হত্যার পরিকল্পনা করিয়া মারধর করত: আমার মেয়েকে হত্যা করিয়াছিল বলে রহিমা বেগম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান।



মন্তব্য চালু নেই