ঝিনাইদহে স্বামীকে বেধে রেখে ধর্ষনের শিকার গৃহবধূর খোঁজ মিলছে না

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে ৬ যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর সোমবার স্বামী পরিচয়দানকারী রাজন হোসেন থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ গা-করেনি। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে পুলিশ জহুরুল ও পায়েল নামে দুই জনকে আটক করেছে। রোববার দিবাগত রাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার পাইকপাড়ার কাছে ফয়লা গোরস্থান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে গৃহবধূ আরজিনা খাতুন। এদিকে পুলিশি সহযোগিতা না পেয়ে স্বামী রাজন স্থানীয় সংসদ সদস্যে আনোয়ারুল আজিম আনারের দ্বারস্থ হন। এমপির নির্দেশে পুলিশ তৎপর হয়ে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করে।

পুলিশ ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, ধর্ষিত গৃহবধূ আরজিনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে। তার স্বামী রাজন হোসেনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলয়। রাজন তার স্ত্রীকে নিয়ে ঈদ করতে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। চুয়াডাঙ্গার বাড়িতে ফেরার উদ্দেশে রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ওই দম্পতি কালীগঞ্জ বাসটারমিনালে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এসময় কালীগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে শিপলু তাদের বাড়িতে রাত যাপনের প্রস্তাব দেয়। রাজন বলেন, এই প্রস্তাবে প্রথমে রাজি না হলেও উপান্তর না পেয়ে এক পর্যায়ে স্ত্রীকে নিয়ে শিপলুর সঙ্গে তাদের বাড়িতে যাই। এরপর রাত দুইটার দিকে শিপলুর আপন বড় ভাই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গড়েলা গ্রামের আব্দুল আলিম একজোট হয়ে প্রথমে দু’জনের কাছে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা, গলায় ও হাতে থাকা সোনার চেইন এবং রিং খুলে নেয়। এরপর পাশের একটি বাগানে নিয়ে অস্ত্রের মুখে রাজনকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে ওই ছয় যুবক সটকে পড়ে। রাজন বলেন, ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমি হাতের বাঁধন খুলতে সক্ষম হই। পরে স্থানীয় মসজিদে এসে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ঘটনাটি খুলে বলি। এসময় তারা আমাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আমার স্ত্রীকে খোঁ করতে থাকি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত স্ত্রীকে কোথাও খুজে পায়নি।

রাজন বলেন, মসজিদে আসা মুসল্লীদের পরামর্শে আমি কালীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি জানালে তারা আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়ে বলেন, ‘সবাই এখন ঘুমাচ্ছে, পরে আসেন। উপায়ন্তর না পেয়ে রাজন গোরস্থানপাড়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মন্টুর সহযোগিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের কাছে এসে ঘটনা জানান। তিনি পুলিশকে খবর দেন এবং দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে বলেন। কালীগঞ্জ থানার এএসআই আব্দুল গাফফার হোসেন দাবি করেন, ‘রাতে কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।

থানার গেটে সেন্ট্র্রি ডিউটিতে থাকা কনস্টেবল আব্দুর রাজ্জাক সকালে জানিয়েছিল, এক যুবক ভোরে এসে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের কথা বলেছিল। কিন্তু অপেক্ষা করার কথা বলতেই নাকি সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। একারণে পাগল মনে করে ভোরে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।’ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, ‘সকালে আমি ঘটনা জানার সাথে সাথে কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে দ্রুত আসামি আটক ও ধর্ষিতাকে উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনা জানার সাথে সাথে ধর্ষিতা গৃহবধূকে উদ্ধার ও ধর্ষণ কারীদের আটকের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জহুরুল ও পায়েল নামে দুইজনকে পুলিশ আটক করেছে। এদিকে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সোমবার রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ও আরজিনা খাতুন কে উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ ধারনা করছে আরজিনাকে ধর্ষনের পর হত্যা করে হতে পারে। ওসি আরো জানান, ধর্ষণকারীরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী এবং চুরি-ছিনতাইয়েরা সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই