‘কাশিমপুরে হামলা করতে চেয়েছিল আনসারুল্লাহ’

আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মাওলানা জসীম উদ্দীন রাহমানীসহ অন্য বন্দী নেতাদের আদালতে হাজিরা দেয়ার সময়ে ছিনিয়ে নেয়া ও কাশিমপুর কারাগারে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন গাজীপুরের প্রধান সমন্বয়ক রাশিদুল ইসলাম স্বপন। সেই সঙ্গে ব্লগারদের হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে উত্তরায় র‌্যাবের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।

এর আগে র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুইজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাশেদুল ইসলাম ওরফে স্বপন (২৪) এবং বিপ্লব হোসেন ওরফে হুজাইফা। শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে নিষিদ্ধ বই এবং দুইটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ এ অধিনায়ক বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের জানা যায় তারা একিউ আইএস এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কাশিমপুর কারাগারে হামলা করে জসীম উদ্দীন রাহমানীকে মুক্ত করা। এজন্য তারা কাশিমপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করছিল এবং সুযোগ পেলে হামলা করবে বলে অপেক্ষায় ছিল। বিকল্প হিসেবে তারা রাহমানী এবং অন্যান্য এবিটি নেতাকে আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় রাস্তায় হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও করেছিল। এছাড়াও টার্গেট কিলিংয়ের জন্য তারা বিভিন্ন আলোচিত ব¬গার এবং নাস্তিকদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। এই কাজগুলো সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে করার জন্য তারা অন্যান্য জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে একত্রিত হয়ে কাজ করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। তারা নিয়মিত মিটিং করত এবং সাংগঠনিক বিষয়ে পরামর্শ করত। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের আদর্শিক নেতা হিসেবে জসিমউদ্দিন রাহমানী এবং তামিম আল-আদনানির নাম জানা যায়, যিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

প্রসঙ্গত, তাদের প্রধান ও মুখ্য পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ লাখ লোককে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য করে দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিপদগামী মানুষ জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। তারা নানা জায়গায় নানা আস্তানা গড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে তাদের মতাদর্শের লোকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের ট্যাংরাকুড়ার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল এলাকায় এবং ধুনট উপজেলার নিমগাছী এলাকায় সন্দেহভাজন কথিত জঙ্গি আস্তানা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা গ্রেপ্তারকৃত রাশেদুল ইসলাম স্বপননের বরাত দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে জসিমউদ্দীন রাহমানীর একটি বক্তৃতা ইন্টারনেটে শোনার পর সে তাদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় আবদুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আবদুল কুদ্দুস তাকে বিভিন্ন সাংগঠনিক বই পড়ার জন্য বলে। পরবর্তী সময়ে সে কিছু সাংগঠনিক বই সংগ্রহ করে পড়াশোনা করে এবং অন্যদের এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা শুরু করে। এরপর আবদুল কুদ্দুস বেশ কিছু দিন পর আব্বাস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে স্বপন জানতে পারে আব্বাস ঢাকা বিভাগের আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অন্যতম সমন্বয়ক এবং সে বিভিন্ন স্লিপার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। ২০১৫ সালের কোনো এক সময় স্বপন এবং আরও কয়েকজন এই আব্বাসের মাধ্যমে আল-কায়দার আইমান আল জাওয়াহিরির নামে বায়াত নেন। ধীরে ধীরে স্বপন গাজীপুর এবং আশে পাশের এলাকা থেকে কর্মী সংগ্রহ শুরু করে এবং এই এলাকার সংগঠকের দায়িত্ব পায়। ধৃত স্বপনের কয়েক জন অনুসারী হিসেবে আবদুল করিম ওরফে রাসেল, মানিক ওরফে জুয়েল এবং বিপ্লব হোসেন ওরফে হুযাইফাসহ আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়।

তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ আরও বলেন, তারা বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে কাজ করতো। নিরাপত্তার স্বার্থে এক গ্রুপের সদস্যদের অন্য গ্রুপের সদস্যরা চিনতো না। যোগাযোগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে তারা টুর ব্রাউজার টোটানাটা মেইল ব্যবহার করত। শুধু গ্রুপ প্রধানরাই অন্য গ্রুপের প্রধানদের চিনতো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা আরও একটি গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত হয়। যারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সংগঠন, কার্যক্রম সম্পর্কে কথা বলে। ওই গ্রুপের সদস্যরা স্বপনকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল এবং খুব শিগগির তা সংগ্রহ করার কথা ছিল। ওই টাকা দিয়ে যশোর এলাকা থেকে অস্ত্র ক্রয় করবে বলে তারা পরিকল্পনা করেছিল বলে স্বপন জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক মেজর রইছুল আলম মনি, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান।



মন্তব্য চালু নেই