এবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কানে ধরালেন শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তা

ঘুষের টাকা কম হওয়ায় এক উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কান ধরে উঠবস করাতে বাধ্য করেছেন এবং চড় মেরেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক।

(১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা ভবনে এ অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বলে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ভবনে তার বদলির তদবিরে আসেন। ওই অফিসার বদলির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এটিএম ফাত্তাহকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করার চেষ্টা করেন বলে ফাত্তাহর দাবী। দালাল পারভেজের সঙ্গে কথা হয় ২ লাখের। কিন্তু ঘুষের টাকা কম হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ওপর ক্ষুব্ধ হন ফাত্তাহ। এক সময়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা অফিসারকে কান ধরে উঠবস করান এবং সজোরে গালে চড় থাপ্পর মারেন এটিএম ফাত্তাহ। পরে কথিত ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ওই শিক্ষা অফিসারকে পুলিশের হাতে তুলে দেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে এটিএম ফাত্তাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘুষ দাবি ও গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আবদুর রব জানান, সম্প্রতি স্কুল ও কলেজের গ্রীষ্মকালীন খেলাধুলার সময় একজন শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে মারা যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন তার ওপর মহা খাপ্পা। তাই অতি দ্রুত তিনি বদলি হতে চেয়েছিলেন। আলাউদ্দিন ও পারভেজ নামের দুইজন বদলির জন্য ২ লাখ টাকা দাবী করেন ফাত্তাহকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু রব বলেছেন তিনি মিষ্টি খাওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে কয়েকজন সাংবাদিক মাউশির পরিচালক কলেজ ও প্রশাসনের কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পান কর্মকর্তা আবদুর রবকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন ফাত্তাহ। সাংবাদিকদের দেখে মারধর থামান ফাত্তাহ। এসময় অসহায় অবস্থায় দেখা যায় রবকে। হাত জোর করে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করান ফাত্তাহ। ওয়াহেদ তখন দাত কেলিয়ে হাসছিলেন। সাংবাদিকদের হাতে মারধরের ছবি রয়েছে।
পরিচালক ওয়াহেদুজ্জামান ফাত্তাহর সূরে সূর মিলিয়ে বলেন, এই শিক্ষা কর্মকর্তা ফাত্তাহকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছেন।

ফাত্তাহর সঙ্গে চাকুরি করেন এমন কয়েকজন অফিসার সাংবাদিকদের জানান, ইসলামী ছাত্র শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা ফাত্তাহকে দুর্নীতির দায়ে শাস্তিমূলক বদলির চিন্তাভাবনা চলছিল গত কয়েকমাস যাবত। ফাত্তাহর বিরুদ্ধে শিবিরপন্থী সাংবাদিক ও ঠিকাদারদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এপিএসকে ঘন্টায় ঘন্টায় অধিদপ্তরের আপডেট জানান ফাত্তাহ। ড্রাইভার সমিতির সঙ্গে গোপণে আঁতাত করেন। উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনেকে ফাত্তাহকে নিজেদের লোক মনে করেন। ঘুষের টাকা গোণা ও গ্রহণের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে একজন সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে নিয়ে এসেছিলেন ফাত্তাহ জানুয়ারি মাসে। এক বিকেলে এমপিও দালালদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মহাপরিচালকের হাতে ধরা পড়েন সেই কর্মকর্তা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আবার মানিকগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, স্মরণকালের সেরা এমপিও জালিয়াতি হয়েছে শিক্ষা ভবনে। এ ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং নিজেকে সুফি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বদলি ঠেকানোর ধান্দায় ফাত্তাহরই পাতা ফাঁদ এটা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গিয়ে বড় কর্তাদের এই মর্মে বোঝাবেন যে, ফাত্তাহ ইজ এ্যা জিনিয়াস অফিসার হু কট এ্যান উপজেলা অফিসার ইন রেড হ্যান্ডেড হোয়াইল গিভিং ব্রাইব। দ্যা অফিসার ওয়াজ হ্যান্ডেড ওভার টু পোলিশ ইমিডিয়েটলি। ফাত্তাহ ইজ এন অনেস্ট এ্যান্ড অবিডিয়েন্ট আজ ইজ দ্যা কেইস ফর তাজিব, আফসার, আনোয়ার এ্যান্ড মেজবাহ। নো করাপশন ইন দ্যা মাউশি।

ফাত্তাহ একজন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তা। কয়েকমাস আগে ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজে জুনিয়র একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে পা ধরাতে বাধ্য করেছিলেন। ওই শিক্ষক এইচএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করছিলেন। প্রথমে পা ধরে জেল থেকে রেহাই পেয়ে পরে সমিতিগতভাবে ওই ম্যাজিস্টেটের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেন তারা। নিন্দনীয় ওই ঘটনায় সারাদেশে এককাট্টা হয়েছিলেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডার স্ত্রী দ্বারা তালাকপ্রাপ্ত কয়েকজন সরকারি কলেজ শিক্ষক এবং বিএনপিপন্থী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নাছরিন বেগম ভান্ডারিয়া গিয়ে আন্দোলন করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনও অপরাধ করে থাকলে শাস্তি হবে কিন্তু চড় থাপ্পড় কিংবা কানে ধরে ওঠবস কেন করাবেন? এটা অমানবিক, মধ্যযুগীয় মানসিকতা এবং কঠোরভাবে নিন্দনীয়।
এদিকে আবদুর রহমানকে সন্ধ্যায় হাতিয়া উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। থানায় যোগাযোগ করছেন তার ভাই। গভীর রাতে থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় তাকে।

রহমানের বিরুদ্ধে পরিচালক ওয়াহেদুজ্জামানের লেখা অসত্য এজাহারের কপি আমাদের হাতে রয়েছে। সূত্রঃ দৈনিক শিক্ষা



মন্তব্য চালু নেই