এক মাস পরেই বাড়ি ফিরবেন খাদিজা

জীবনযুদ্ধে পূর্ণ বিজয়ের অর্জনের পথে সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা। আর মাত্র এক মাস পরেই ফিরবেন সিলেটের বাড়িতে।

খাদিজাকে টানা দুই মাস চিকিৎসাসেবা প্রদানের পর এমনটাই বলছেন সাভারের সিআরপির চিকিৎসকরা। মাস খানেকের মধ্যেই আবারো একা হাঁটা-চলার মত অবস্থায় ফিরবেন এই কলেজছাত্রী। প্রতিদিনই একটু একটু করে হাঁটা-চলা করছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা খাদিজা।

খাদিজার প্রেমিক দাবি করা বদরুলের ছুরিকাঘাতের পর আহত খাদিজার যে ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল তাতে তার বেঁচে ফেরার বিষয়ে সবার ছিল সংশয়। বাস্তবেও জীবন- মৃত্যুর অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই দ্বিতীয় জীবনে পা রাখতে হচ্ছে খাদিজাকে।

হামলার পরপরই সিলেট, এরপর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল তারপর সাভারের সিআরপিতে টানা দুই মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন খাদিজা। বর্তমানে ওই হাসপাতালটির মেডিক্যাল সার্ভিস উইংয়ের প্রধান ডা. সাঈদ উদ্দিন হেলালের তত্ত্বাবধানে ৩০৪ নম্বর রুমে ভর্তি রয়েছেন খাদিজা।

ডা. সাঈদ উদ্দিন হেলাল বলেন, খাদিজার বেঁচে থাকার অসীম ইচ্ছে ছিল। মৃত্যু খাদিজার কাছে হার মেনেছে। না হলে তার ওপর যে বর্বর হামলা হয়েছে তাতে একজন মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

এরই মধ্যে ভাই শারনান হকের সঙ্গে খাদিজার বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেয়েছে। ভাই-বোনের ওই ছবিগুলো সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বেড়াতে গিয়ে তোলা। ছবিতে অনেকদিন পরেই হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে খাদিজাকে।

ডা. সাঈদ উদ্দিন হেলাল বলেন, আমরা সিআরপি খাদিজাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। হামলার আগেকার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজটিও করা হচ্ছে। খাদিজাকে সিআরপিতে আনার পর আমরা ছয় ধরনের চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করি। বর্তমানে খাদিজাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার মানসিক অবস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে খাদিজাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত করে তুলতে পারব।

খাদিজার বাড়ি ফেরার এমন সম্ভাবনায় সবচেয়ে বেশি খুশি তার পরিবারের সদস্যরা। বাবা মাসুক মিয়া নিজের ব্যবসাসহ অন্য সবকিছু ফেলে প্রায় চার মাস ধরে লেগে রয়েছেন মেয়ের পেছনে। আছেন মা এবং ভাইও।

বাবা মাসুক মিয়া এ জানান, এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মেয়েটা আমার আবার আগের মত হাঁটা-চলা করবে কখনও ভাবতেও পারিনি। দেশবাসীর ভালবাসাই এমনটা সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসকরা বললেই আমি মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাব।

‘খাদিজাও এখন বাড়ি ফিরতে চায়। সুস্থ্ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরতে চায় খাদিজা-বলেন মাসুক মিয়া।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা। ঘটনার পর রাজধানীতে এনে প্রথম দিকে খাদিজাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিন দফা অস্ত্রোপচার হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলা হয়। স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২৮ নভেম্বর খাদিজাকে সাভারের সিআরপিতে নেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই