ইসলামে বায়াত হওয়া প্রয়োজনীয়তা কতটুকু পর্ব-১

বায়াত বিষয়টা নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ। মুসলমানদের মধ্যে একাধিক দলের জন্যই এত মতভেদ। আর হবে না কেন রাছুল সা. বলেই গেছেন আমার উম্মতদের মধ্যে ৭৩ ফেরকা (দল) হবে। এই দল হওয়ার কারণ কোরআন এবং হাদিসের পাশা-পাশি নিজস্ব মতবাদ ঢুকিয়ে ইসলামকে কুলশিত করা হয়েছে। শরিয়তের আলেমগন গালমন্দ করে সূফিবাদী পিরদের আর সূফিবাদী পির সাহেবগন মন্দ বলেন শরিয়তের আলেমদের। যেটা কোন ভাবেই উভয় দলের জন্য উচিৎ নয়। গীবত জিনিষটা সকলের জন্যই মন্দ। শরিয়তের আলেম সাহেবগন ওয়াজ মাহফিলে এক ঘন্টার ওয়াজের জন্য ভাড়ায় এসে প্রথম ২০-৩০ মিনিট পিরদের গালাগালি মুনাফিক কাফের আক্ষ্যা দিতেই ব্যয় করেন। এটা কোন ক্রর্মেই শোভনীয় নয়। মানুষের পয়সা এই ভাবে হালাল হয় না; কারণ আমরা কিছু ভাল কথা শুনতে সোয়াব পাবার আশায় তাদের নিয়ে আসি ভাড়া করে। ওয়াজ মাহফিলে বসে আলেম সাহেবগন ভুলেই যায় ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কোন মুফতি, মৌলানাদের কোন অবদান ছিল না। আর একটা বিষয় তারা যে মাহফিলে ভাড়ায় আসেন ইসলাম প্রচার দাওয়াত দিতে। সেটা যে কোরআন অনুযায়ী বৈধ নয় সেটাও ভুলে যায়। কেউ যদি এই প্রশ্ন করে বসে কেন টাকা নিচ্ছেন এই জন্যই গলার জোরে সামনের মানুষদের ঠান্ডা করে রাখেন বলে মনে হয়।

শরিয়ত এবং মারেফত রাছুল সা. এর দুটি হাতের মতনই বলতে পারি। একটির সাথে অপরটির সংঘর্ষ হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু দলগত মতাদর্শনের কারণে এই দুইয়ের মাঝে এত বিভেদ। হুজুর সাহেবগন অলিক কল্পনার বসবর্তি হয়েই ইসলাম প্রচার করেন। উদাহরন সরূপ আল্লার কুদরতি পায়ে সেজদা দেওয়ায় আর আল্লা হাশরের মাঠেই দেখা দিবেন এটাই শরিয়তের আলেমদের বক্তব্য। অথচ আল্লা এই অলিক কল্পনার ব্যপারে একাধিক আয়াতে বলেছেন ১০:৩৬ এবং ৫৩:২৮# “বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না”। ওলিআল্লা পির সূফীবাদীগন বলেন আল্লা কোরআনে কোথায় বলেছেন যে আল্লা হাশরের মাঠেই আসবেন। আল্লা তো সাক্ষাত্যের কথা একাধিক বারই বলেছেন। সেটা কেন শুধুই হাশরে ময়দানেই হবে। যুক্তি সরূপ; আল্লা পবিত্র কোরআনে বলেছে ১৭:৭২# “যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত”। পরকালে অন্ধ হলে আল্লাকে দেখার তো কোন উপায় নাই। এটা তো মিথ্যা প্রলোভন হচ্ছে। এমনকি আল্লা কোরআনে বলেছেন ৩১:৩৩# “ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না”। এই আয়াত যেহেতু মানতেই হবে সেহেতু হাশরের ময়দানে আল্লাকে চিনিয়ে দিবে কে যারা আগে থেকে না চিনবেন? যাই হোউক আমার লেখা পড়ে বিচারের জন্য মানদন্ড কোরআনকে বিবেচ্চ করলেই কৃতজ্ঞ হবো। আর মনে রাখতে হবে আল্লা পবিত্র কোরআনে বলেছেন চিন্তাশীলদের জন্য এই কোরআন উপদেশ। এবার বায়াত বিষয় আলোচনা শুরু করি।

বায়াত হচ্ছে আনুগত্য করার প্রথম সিড়ি। বায়াতের মধ্যে দিয়ে আনুগত্য এবং নিজকে চিনার রাস্তার সুচনা হয়। এই বায়াত শব্দের অর্থ হচ্ছে বিক্রি। কথা হচ্ছে কি বিক্রি করবো? আমাদের জানা, অজানা, ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত গুনাহ বিক্রি করে দিবেন আপনি যার হাতে বায়াত হবেন তিনার উসিলায়।

তরিকতে পিরের কাছে কেন বায়াত হবেন?

আল্লা পবিত্র কোরআনের ১৭:৭১ নং আয়াতে বলেছেন “আমি কাউকে নেতা তার নেতা ছাড়া ডাকবে না”। আমাকে যেহেতু নেতা ছাড়া ডাকবেন না সেহেতু আমাকে একজন নেতা নির্ধারন করতেই হবে আল্লার ডাক পাবার আশায়। মারেফতের পির সাহেবগন ব্যতীত বায়াত কেউ করেন না। আর পির সাহেবগন কোন না কোন সিলসিলার সাথেই আছেন। কাজেই আমাদেরকে বায়াত হওয়ার জন্য পিরদের কাছে যেতে হয় সে সাথে তরিকতের সিলসিলাতেও। রাছুল সা. এর পূর্বে দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলে ‘নো দ্যাই সেলফ’ অর্থাৎ নিজকে চিনো। আর আমাদের নবীজি সা. বলেছেন হাদিসে “মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু” অর্থাৎ যে নিজকে চিনলো সে যেন আল্লাকে চিনলো। আমরা ধর্মভীরু মানুষ নিজকে চিনার জন্যই পির সাহেবগনদের দরবারে হাজির হই হতেই হয় পরকালের কথাই যে আল্লা বেশী বলেছেন। আমরা চিন্তা করে পির সাহেবদের কাছে যাই; যেয়ে কোরআন ভুলে যাই সেটা মোটেও উচিৎ নয়। পির সাহেবগন যে শিক্ষা দেয় তাই বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেই সেটা মোটেও বিবেকবানদের কাজ নয়। আল্লার হুকুম যে পর্যন্ত আছে সেটুকুই মানতে হবে। সেটা সূরা নিসার ৫৯ আয়াতে উল্লেখই আছে।

বায়াত হলে কি হবে?

প্রথমেই বললো ই.ফা বুখারী-৪৯৯ নং হাদিস অনুযায়ী বায়াত হলে, সালাত কায়েম হবে, যাকাত প্রদান হবে এবং মানুষকে নসিয়ত করা যাবে। “জারীর ইবনে আব্দল্লাহ রা. হইতে বর্ণিত আমি রাছুল সা. নিকট সালাত কায়েমের জন্য, যাকাত প্রদান এবং মুসলমাদের নসিয়ত করার জন্য বায়াত হয়েছি”

হাদিসটির দিকে লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন সালাত সঠিক ভাবে কায়েম করার জন্য বায়াত হওয়া জরুরী। কিন্তু বাস, সি এনজি, রিক্সার পিছনে লিখে বা পোষ্টার নানান জায়গায় লাগানো হয় “সালাত কায়েম করুন” কথাটা লিখা থাকে প্রায়ই নজরে পরে এই হাদিসে যে বায়াতের কথা বলা আছে সে ব্যপারে তো কোন দিন দেখি না তবে কিভাবে সালাত কায়েম হয়? আমার মনে এই প্রশ্নটা প্রায়শই জাগে। কিন্তু বায়াতের ব্যপারে কোরআনের যে শর্ত আছে তা অধিকাংশ পির সাহেবগনই বায়াত করার সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রত্যাক্ষান করেন। যেমন বায়াতের প্রধান শর্তই হচ্ছে আল্লার সাথে শেরেক করবো না। সেটা বায়াত করার পর থেকেই পিরের স্মরণ (ধ্যান) অর্থাৎ শেরেক করা শুরু করায়। আল্লা বলেছেন আমি শেরেকি গুনাহ ক্ষমা করি না। বর্তমানে কিছু মশহুর পির সাহেবগন বলেন পির ধরা জীবনের শেষ শেরেকি। মানতে পারি না আল্লা কি বায়াত হতে বলেছেন শেরেকি করার জন্য। নাউজুবিল্লাহ।

বর্তমানে অধিকাংশ পির সাহেবদের দরবারে বায়াত করার সময় দেখা যায় তালেবদের থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়। এই দরবার হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম অন্যকোন দরবারের দিকে নজর দেওয়া যাবে না। চিন্তাশীল শিক্ষিত কিছু কিছু মুরিদ দরবারের কর্মের সাথে কোরআনের সাথে সাঘর্ষিক যখন দেখে তখন দরবার ছাড়ার চিন্তা করলে তাদের সামনে বায়াত পূর্ব অঙ্গীকার মনে আসে তখন জাহান্নামের পথ থেকে সরে আসতেও দিধা হয় অন্তরে। আসলে সে দিধা আসার কোন কারণ নাই। আল্লা কোরআনের সূরা ২১:৭ এবং ১৬:৪৩ নং আয়াতে বলেছেন “অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে”। এই আয়াতদ্বয়ে আল্লা বলেছেন জ্ঞানীদের কাছে যেতে। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তির কাছে যেতে কোন নিষেধ নাই। এমনি একটি বহুল প্রচারিত বানী ‘ জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যেতে হলেও যাও’ কয়বার যাওয়া যাবে তারও কোন সীমা নাই। কাজেই যে যেখানে বায়াত আছেন বা হতে চান কারোরই ভাবা উচিত নয় যে কোরআন বিরোধী কিছু সেখানে থাকে সেটা ধরেই বসে থাকতে হবে। কোরআন হাদিস দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করেছি এবং তাছাড়াও সাধারন একটা কথা মনে করিয়ে দেই। তা হচ্ছে আমরা যখন নদীতে নৌকায় উঠি ভাল চলছে দেখেই উঠি মাঝ নদীতে যখন নৌকায় পানি উঠা শুরু হয় তখন নিশ্চয়ই সে নৌকায় বসে থাকা তো নিশ্চিত মৃত্যুরই সামিল।——-চলবে ২য় পর্বে সমাপ্ত

লেখক : ফকির উয়ায়ছী,  http://www.owaisitarikah.org/



মন্তব্য চালু নেই