আপনার ছোট্ট শিশুটি সুস্থ আছে তো?

দিন পঞ্জিকার পাতা উল্টে চলে এসেছে একদম শীতের কাছে। আবহাওয়াও তার প্রমাণ রাখছে কিছুটা। কখনো ভ্যাপসা গরম আবার কখনো স্বাভাবিক। গায়ে পাতলা কাঁথা না জড়ালে ভোরে ঘুমই হয় না ঠিক মতো। অর্থাৎ শীতের আগমনী বার্তার স্পষ্ট উচ্চারণ। বৈরি হাওয়ার এ দিনে আপনার ছোট্ট শিশুটি সুস্থ আছে তো? এখনকার দিনে সর্দি-কাশি, গায়ে হালকা জ্বর, নিউমোনিয়ার আশংকা বেড়ে যায় দ্বিগুন। কেননা বড়দের শরীর যতটা সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন, পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের তা নেই। তাই ঋতু পরিবর্তনে চায় বিশেষ যত্ন।

এসময় রাস্তায় ধুলাবালির আধিক্য, পরিবেশগত কারণ,গাড়ির ধোঁয়া, বাসার কারো ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে আপনার আদরের সোনামণি। তাছাড়া বাজারের কেনা দুধ খেয়ে বড় হওয়া বাচ্চা, অপুষ্ট বা কোন রোগে ভোগা বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে।

ঠান্ডা লাগলে যা করবেন

শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে, তাকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান। বয়স হয় ছয় মাসের বেশি হলে অল্প করে পানি, তরল ও নরম খাবার বারবার খাওয়ান। একটু লেবুর সরবত, আদার রস, তুলসীপাতার রস কিংবা মধুও খাওয়াতে পারেন। শিশুকে ঘরে তৈরি খাবার দিন, বাইরের কোনো কাশির ওষুধ দেবেন না। সঙ্গে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াতে হবে। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে বা নাক দিয়ে শব্দও হলেও খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে নরম কাপড় দিয়ে নাকটা পরিষ্কার করে দিন।

নিউমোনিয়ায় যা করবেন

ঠান্ডা লাগার সাধারণ লক্ষণগুলোর সঙ্গে শিশু দ্রুত, ঘন ঘন শ্বাস নেয় এবং বুকের পাঁজর ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। তাই ঠান্ডা লাগলে শিশুর বুকের দিকে খেয়াল রাখুন। এ ছাড়া শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে। খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি থাকে, অতিরিক্ত কাশির কারণে ঘুমাতে পারে। শিশু যা খায়, তার সবই বমি করে দেয়। তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যান অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

টনসিলের সমস্যায় যা করবেন

জিহ্বা ক্ষত বা ফাটা, গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল বড়ে হওয়া, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, মাথা ব্যথা, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, খক খক করে গলা পরিষ্কার করা, গলা ও কানে ব্যথা হওয়া, গলা ফুলে যাওয়া এ সবই টনসিলের সমস্যার লক্ষণ। এসময় গলায় গরম কাপড় বেধে দিতে হবে। গরম পানির মধ্যে লবন দিয়ে গড়গড়া করাতে হবে। সঙ্গে গরম পানি খেতে দিন। বেশি সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অসুস্থ হবার আগের সচেতনতা

– যে কোন সমস্যা হওয়ার আগে থেকেই বাচ্চাকে সাবধানে রাখুন। ঠান্ডায় বেশি সময় বাচ্চাকে রাখা যাবে না। খুব সকালে বা রাতে ঠান্ডা খাবার দেওয়া যাবে না।

– ঘরে গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন।

– গলাব্যথায় লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করান।

– কাশি বেশি হলে এক চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ান।

– শীত আসার আগে থেকেই গরম পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।

– সুস্থ বাচ্চাকেও প্রতিদিন ১ চামচ মধু খাওয়ান যাত ঠান্ডা না লাগে।

– রাতে ঘুমানোর সময় ফ্যান স্লো করে দিন।

– বাচ্চাদের ঘর বেশি ড্রাই হওয়া ভাল না। তাই হিউমিডি ব্যবহার করা ভাল।

– যাদের ঘরে নবজাতক আছে তাদের এ সময় সাবধানতা অবলম্বণ করা দরকার, নবজাতকের ত্বক, শরীরের বিভিন্ন অংশ ও স্পর্শকাতর প্রত্যঙ্গ সহজে বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা সইতে পারে না। তাই শীতের হিমেল বাতাস, অতিরিক্ত ধুলাবালি যাতে আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে বাইরে নেয়া উচিত না।

প্রতিশেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই ছোট্ট সোনামনির যত্নে থাকা চায় আগে থেকেই সাবধান।
শিশু



মন্তব্য চালু নেই