সাবধান, কিছু ওষুধ একসঙ্গে খাবেন না
অনেকেরই ধারণা যে, কেবল মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভুল ওষুধ খেলেই মানুষের মৃত্যু হয়। ঠিক তা নয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খেয়েও বিশ্বে প্রতি বছর প্রায়১ লাখলোকের মৃত্যু ঘটে থাকে। এই মৃত্যুর বড় কারণ ওষুধের ভুল ব্যবহার।
জানা গেছে, ওষুধের ভুল ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রে খুব গুরুতর সমস্যা। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় দু’টি ঝুঁকিহীন ওষুধ কেউ একসঙ্গে খেয়েছেন অনেকে। এ থেকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। কখনো মৃত্যু ঘটে, আবার মৃত্যু না হলেও ভয়াবহ প্রতিক্রিয়াদেখা দেয়।
সাধারণ কাঁশির ওষুধ থেকে প্রেসক্রিপশনে দেওয়া পেইনকিলারেরও মাত্রা দেওয়া থাকে। কোন ওষুধের সাথে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না তাও নির্দিষ্ট করে বলা থাকে।তারপরেও সাবধানতার অভাবে এইওষুধ মিলিয়ে-মিশিয়ে খাওয়ার ফলে ভয়ঙ্করবিপদের ঘটনা ঘটে।
ওষুধের ভুল মিশ্রণের কারণে পেট খারাপ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতেপারে। ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ প্রতি মাসেএকাধিকডাক্তারেরপ্রেসক্রিপশন ফলো করেন।তারা জানেনও না শরীরের কী মারাত্মক ক্ষতি তারা করছেন।
ওষুধের সাধারণত ৫ধরনের ভুল ও বিপজ্জনক সংমিশ্রণ ঘটে থাকে। চেষ্টা করা উচিত এ সব ব্যাপারে সচেতন থাকতে, অন্যদেরও সচেতন করা জরুরি।
১. এ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও পেইনকিলার
যে রোগীর জন্যপেইনকিলার বা ব্যথানাশকের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়, সাধারণত সেরোগীকে এ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট বা বিষণ্নতা দূর করার ওষুধ খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা। উল্টাভাবে বিষণ্নতা দূর করার ওষুধ যিনি খাচ্ছেন তাকে নিষেধ করা হয় পেইনকিলার খেতে।কারণ একই সাথে এ দু’টি ওষুধ খেলে আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও পেইনকিলার ওষুধ একসাথে গ্রহণ করলে পাকস্থলী ও খাদ্যনালীতে প্রচণ্ড রক্তপাত হতে পারে। একটি ডাচ গবেষণায় দেখা গেছে এই ওষুধ দু’টি একসাথে গ্রহণ করলে পরিপাকতন্ত্রে রক্তপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই ওষুধ দু’টি একসাথে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের সেরেটোনিন হরমোনের মাত্রায়ও সমস্যা হতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্থির লাগতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবংশ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যেতে পারে।
২. রক্তজমাট বাঁধা রোধ করে এমন ওষুধ ও এ্যাসপিরিন
আর্টারিতে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে রোগীদের এ্যান্টিকগাল্যান্ট বা রক্তজমাটরোধী ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। এটি শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়াতে প্রভাব ফেলে বলে রক্ত জমাট বাঁধতে সময় বেশি লাগে।
এ্যাসপিরিন সাধারণত ছোটখাটো ব্যথার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না, এটি শরীরের রক্ত পাতলা করে দেয়। ফলে যখন এই দু’টি ওষুধ একসাথে গ্রহণ করা হয় তখন শরীরের অভ্যন্তরে ও বাইরে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. পেইনকিলার ও এ্যান্টিএ্যাংজাইটি ওষুধ
এ্যান্টিএ্যাংজাইটি বা অস্থিরতা কমানোর ওষুধ এবং পেইনকিলার বা ব্যথানাশক উভয় ওষুধই বিষণ্ণতা দূর করতে সক্ষম। কিন্তু একসাথে এই দু’টি ওষুধ গ্রহণ করলে প্রচণ্ডবিষক্রিয়া হতে পারে। একসাথে এই দু’টি ওষুধ খেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও হার্টবিট কমে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সিবিএস নিউজের মেডিক্যাল কন্ট্রিবিউটর ডাক্তার হলি ফিলিপস বলেন, ‘মানুষ সাধারণত দু’জন আলাদা আলাদা চিকিৎসক ও দু’টি আলাদা আলাদা ফার্মেসি থেকে এই দুই ধরনের ওষুধ পায়। এই টেকনিককে আমরা বলিডক্টর শপিং। ফলে দেখা যায় রোগীরা একেক চিকিৎসকের কাছে থেকে একেক ধরনের প্রেসক্রিপশন পায় এবং কোনো ডাক্তারই অন্য ডাক্তার বা প্রেসক্রিপশন সম্পর্কে জানে না।
৪. এ্যাসেটামিনোফেন ও অপিনয়েডস
এই দু’টি ওষুধই খুব জনপ্রিয় ওষুধ। একইসাথে বিপজ্জনকও। যখন এই ওষুধ দু’টি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি একসাথে গ্রহণ করা হয়, ফলাফল হয় ভয়াবহ। প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই এই ওষুধের টাইলেনল-এর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এর সাথে টাইলেনল থ্রি নিয়ে থাকেন। যখন একসাথে এই দু’টি গ্রহণ করা হয় তখন লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন মেডিকেল সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৩৮ শতাংশ মানুষের লিভার ফেইলিওর ঘটে; যারা একাধিক প্রকার ওষুধ গ্রহণ করেছে এবং এদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ এ্যাসেটামিনোফেন ও অপিনয়েডস উভয় ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেছে।
৫. সাধারণ কাঁশির ওষুধ ও এ্যান্টিহিসটামিনস
এই দুই ওষুধে একই ধরনের উপাদান রয়েছে। যারা একসাথে দু’টি গ্রহণ করেন তারা আসলে একই ধরনের ওষুধ অতিরিক্ত গ্রহণ করে ফেলেন। এর ফলে ঘুম বা নিদ্রাভাব বেড়ে যেতে পারে। যারা ভারি মেশিন বা যানবাহন চালান তাদের ওপর এই ওষুধের প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি এই দু’টি ওষুধ একসাথে গ্রহণ করলে সারারাত সম্পূর্ণ ঘুমের পরও পরদিন সকালে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব রয়ে যায়।
তথ্যসূত্র : বিদেশী ম্যাগাজিন ও ইন্টারনেট।
মন্তব্য চালু নেই