নিষিদ্ধপল্লীর মুখ থেকে যেভাবে উদ্ধার হলো তরুণী
ফোরাস রোড, একটা কালো গাড়ি আর একটা গাছ। এই হচ্ছে ক্লু। যে সূত্র ধরে মুম্বাইয়ের মতো শহরে কাউকে খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। দক্ষতার সঙ্গে সেই অসম্ভব কাজটিই করে দেখাল মুম্বাই পুলিশ। ফোন পাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে তারা উদ্ধার করে আনে দুই সন্তানের মা কলকাতার এক তরুণীকে। লোভনীয় চাকরির টোপ দিয়ে যাকে বিক্রি করে দিয়েছিল দালালরা। নামানো হচ্ছিল যৌন ব্যবসায়।
বৃহস্পতিবার বেলা তখন তিনটে। মুম্বাই পুলিশের কন্ট্রোল রুম (১০০)-এ একটা ফোন আসে। খুব চাপা স্বরে মহিলা জানান, তিনি খুবই বিপদে পড়েছেন। ফোনটি রিসিভ করেছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ ইনস্পেক্টর শশীধরন বধুনপট্টা। তিনিই তখন ছিলেন কন্ট্রোল রুমের চার্জে। ওই মহিলা চাপা স্বরে জানান, তাঁকে মোটা মাইনের চাকরির টোপ দিয়ে দু-মাস আগে কলকাতা থেকে মুম্বাইয়ে আনা হয়েছে। এবং, এখানে ওরা যৌনকর্মীর কাজ করানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। মহিলা আরও জানান, তাঁকে একটা ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু, সেটা মুম্বাইয়ের কোথায়, তা পুলিশকে জানাতে পারেননি ওই মহিলা।
শশীধরন তাঁকে ঠিকানা জিগ্যেস করলে মহিলা জানান, ‘আমি ঘর থেকে একটা ধুলোমাখা কালো গাড়ি দেখতে পাচ্ছি। আর একটু দূরে একটা গাছ।’ শশীধরন তাঁর কাছে তখন সংক্ষিপ্ত ঠিকানাটুকু জানতে চান। মহিলা শুধু এটুকুই বলতে পারেন ফোরাস রোড।
সোশ্যাল সার্ভিস শাখার সিনিয়র ইনস্পেক্টর জগদেব কলাপদ জানান, বিকেল তিনটে নাগাদ শশীধরনের কাছে খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে জানাই ডেপুটি কমিশনার প্রবীণকুমার পাতিলকে। এর পরই ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশে জগদেব ও তাঁর টিম অপারেশনে নামেন। যে টিমে ছিলেন পুলিশ ইনস্পেক্টর রাজা বিদকর, বিলাস দাতির, সঞ্জয় সালুঙ্খে এবং কনস্টেবল রেদেকার, শিতোলে এ অভাদ। মধ্যে মুম্বাইয়ের এই ফোরাস রোড রয়েছে নিষিদ্ধপল্লী। কারও পরনেই পুলিশের পোশাক ছিল না। ওই তিন ক্লু ধরে তাঁরা খুঁজে চলেন জায়গাটা। জগদেবের কথায়, আমরা নিজেদের মধ্যে বলে রাখি, যে আগে ওই গাড়ি ও গাছ দেখতে পাবে, সঙ্গে সঙ্গে যেন বাকিদের জানায়। সেই মতো আমরা ছড়িয়ে যাই নিষিদ্ধপল্লিতে।
ঘড়িতে যখন রাত সাড়ে ৮টা, ইনস্পেক্টর বিদকার ও এক কনস্টেবল খুঁজে পান ধুলোমাখা সেই কালো গাড়িটা। গাছের পাশেই পার্ক করে রাখা গাড়িটা। এর পরই চলে সেই বাড়িটার খোঁজ। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কিছু এজেন্ট বেনারস চাওলের দোতলায় কয়েকজন মহিলাকে আটকে রেখেছেন। বাড়িটা ঠিক গাছটার বিপরীতে। এর পর আমরা যখন সেই বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করি, কিছু এজেন্ট আমাদের আটকে দেয়। সেই বাধা টপকে আমরা সেই রুমটা খুঁজে পাই, যেখানে ওই মহিলাকে আটকে রাখা হয়েছিল। বলছিলেন জগদেব।
এর পরই সেই মহিলাকে উদ্ধার করে, তিন এজেন্টকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের একজন রাজু। ওই রাজুই মহিলাকে কলকাতা থেকে মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে। এবং, অন্যজন বিনোদ, যে ওই মহিলাকে রাজুর কাছ থেকে কেনে। ৩৭৬, ৩৭০ ও ৩৪৩ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়। সূত্র : এই সময়
মন্তব্য চালু নেই