কে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে?
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের অন্যতম শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি নেই প্রায় এক বছর ধরে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা চরম হতাশা এবং যোগ্য নেতৃত্বহীনতায় ভুগছেন। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে একাধিক গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ।অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংগঠিত সংঘাত দমনেও নেয়া যাচ্ছেনা সাংগঠনিক ব্যবস্থা।
দ্বিধাবিভক্ত ছাত্রলীগের কার্যক্রমের দরুন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন অনেকে। এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ।নেতাকর্মীরা দাবী,ক্যাম্পাসে শিবিরের তৎপরতা রোধে দক্ষ কর্মী থাকা সত্ত্বেও কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারছেন না।
জানা যায়, ২০১১ সালের ২৫ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। সেসময় সভাপতি মামুন হোসাইন এবং এম. এ খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়, এই কমিটির তিন বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ১১ ই জুন শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন কনকর্ড ও ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) সংঘর্ষ হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো কমিটি গঠন হয়নি। নেতাকর্মীরা আক্ষেপের সাথে বলেন, কমিটি না থাকায় দেশ ও দলের সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রলীগের এই শাখাটি সরকারকে সংঘবদ্ধ হয়ে সহযোগিতা করতে পারছে না।
গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থী আ জ ম নাছিরের নির্বাচনী প্রচারণায় সরব ভূমিকা পালন করে বেশ প্রশংসা কুড়ায়। কিন্তু প্রশংসার ঝুলি ভারী না হতেই নিজেদের আধিপত্য নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উপগ্রুপগুলো,কনকর্ড ও একাকার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় আহত হন সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটি ৭ জনকে বহিষ্কার করে। তবে বহিষ্কারের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় ধোয়াসা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় কাউাকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা বিলুপ্ত কমিটির নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কমিটি কবে ঘোষণা হবে এ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না। তবে দ্রুত কমিটি গঠনে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। অন্য পক্ষ নবনির্বাচিত মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। ১৯৯১ সাল থেকে চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ পুরো কমিটিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ভাগ করে নেওয়া হয়। এক পক্ষ থেকে সভাপতি হলে অন্য পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে এধরণের একটি অলিখিত সংবিধান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান।
এদিকে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে পদ প্রত্যাশীদের দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়।এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি অমিত কুমার বসু, সহ সভাপতি শাহাদাত হোসেন জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আরিফুল ইসলাম, রাকিব হোসেন, উপ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া হায়দার, সহ সম্পাদক রেজাউল হক রুবেল, ওমর ফারুক, কাউসার ফেরদৌস ফুয়াদ প্রমুখ।
আ জ ম নাছির উদ্দিন সমর্থিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি মোস্তফা সাইফুল ইসলাম রোমেন,সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী,অর্থ সম্পাদক আবু কায়জার রনি, প্রচার সম্পাদক সৌমেন পালিত বাবু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী মহসিন একরাম, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মামুন সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জমির উদ্দিন, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মো. মনসুর, সহ সম্পাদক আনোয়ার পাশা রকি, উপ দপ্তর সম্পাদক ইমাদ আহমেদ সাহিল প্রমুখ।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। খুব শীঘ্রই চবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা যায়। মেধাবী ও যোগ্যরা নেতৃত্বে আসলে ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য চালু নেই