দেখে নিন কেমন ছিল শত বছর আগের ঈদকার্ড
প্রতিবছর শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বারতা নিয়ে ঈদুল ফিতর আসে আমাদের মাঝে। রমজান আগমন মানেইতো ঈদের বার্তা। তাই প্রথম রমজান থেকেই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে মেহেদী পর্যন্ত ঈদের সব উপহার কেনা শুরু হয়ে যায়। তবে এতোসব কিছুর ভিড়েও দীর্ঘদিনের একটি ঐতিহ্যবাহী একটি বস্তুই রয়েছে যার দেখা মেলে কেবল ঈদের সময়ই। আর এটি হচ্ছে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদকার্ড বিনিময়। যদিও ডিজিটাল এই যুগে শত বছরের পুরনো এই এনালগ প্রথাটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
একটা সময়, যখন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলো দূরে থাকা স্বজন কিংবা এলাকার বন্ধু-বান্ধবীকে বাহারি ঈদকার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাতো। শুধু ঈদকার্ডের কথাই বলবো কেন? শত বছর আগের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাব ঈদ উপলক্ষে বাজারে বিশেষ পোস্টকার্ডেরও দেখা মিলত। আর সেই পোস্টকার্ডে কবিতার দুটি লাইন অথবা জনপ্রিয় কোনো গানের কলি কিংবা ভালোবাসার আদর মাখা দুটি বাক্য লিখে পাঠানো হতে দূরের স্বজনের কাছে। এসব লেখা আবার ক্যালিগ্রাফিতে করা হতো। ছাপাখানার যতো উন্নতি হয়েছে ধীরে ধীরে ঈদকার্ডের চেহারায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পরবর্তীকালে যেসব ঈদাকার্ড বাজারে এসেছে সেগুলোতে ব্যক্তির আর লেখার প্রয়োজন হতো না। সুন্দর সুন্দর কথামালা দিয়ে ছাপানো ঈদকার্ডই বাজারে মিলতো। অনেক ঈদকার্ডে আবার বাহারি সব ছবি ছাপানো হতো।
দিন পাল্টেছে। এখন আর লোকজনের ঈদকার্ডের দোকানে লাইন দেয়ার সময় নেই। সবার হাতেই এখন মোবাইল ফোন। ল্যাপটপ, নোটপ্যাড এসবের কথা নাই বললাম। অনেকে এখন ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। আবার অনেকে এসব ধার না ধেরে সরাসরিই বাটন চেপে হ্যালোই বলে ফেলেন। সেই যাই হোক, পাকিস্তানি দৈনিক ডন তাদের অনলাইনে ভার্সনে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের বেশ কিছু ঈদকার্ডের ছবি প্রকাশ করেছে। শত বছরের পুরনো এসব ঈদকার্ডগুলি সংগ্রহে ছিল লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগ্রাহক দিল্লির বাসিন্দা ইউসুফ সাঈদ, লেখক, প্রকৌশলী ও প্রত্মতত্ত্ব সংগ্রাহক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালি আদনান এবং পুরনো ঈদকার্ড ও লিথিওগ্রাফি সংগ্রাহক ইমেজসোফাসিয়ার মালিক ওমর খানের কাছে।
মূলতঃ উনিশ শতকের শুরুতে ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদকার্ড বিনিময়ের প্রচলন শুরু হয়। অবশ্য এরও বহু আগে সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারগুলি হাতে লেখা ক্যালিওগ্রাফি করা বার্তা পাঠাতেন দূরে স্বজনদের। মূলত: দুটি কারণে ওই সময় ঈদকার্ডের ব্যাপক প্রসার হয়েছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রেলপথের সম্প্রসারণ। ১৮৫৩ সালে যেখানে পুরো ভারতে রেলপথ ছিল মাত্র ৩৪ কিলোমিটার, ১৮৮০ সালে সেটি এসে দাঁড়ায় আড়াই লাখ কিলোমিটারে। ফলে ডাক ব্যবস্থাও খুব সহজ হয়েগিয়েছিল।
এ কারণে ঈদের আগে খুব সহজেই দূরের স্বজনদের কাছে ঈদকার্ড পৌছানো যেত। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে ছাপাখানার উন্নতি। প্রথমদিকে ইউরোপীয়দের ডিজাইনকরা ক্রিসমাস উপলক্ষে ছাপা শুভেচ্ছা কার্ডগুলিতে হিন্দি কিংবা উর্দুতে শুভেচ্ছা বাক্য যুক্ত করে ঈদকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মূলত বিশ শতকের শুরুতে ভারতীয় চিত্র ও লেখা যোগ করে ঈদকার্ড ছাপানো শুরু হয়। লাহোরের হাফিজ কামারুদ্দিন অ্যান্ড সন্স, এইচ গুলাম মুহাম্মদ অ্যান্ড সন্স এবং মুহাম্মদ হুসাইন অ্যান্ড ব্রাদার্স, দিল্লির মাহবুব আল মাতাবাহ এবং বোম্বের ইস্টার্ন কমার্সিয়াল এজেন্সি, শাব্বার টি করপোরেশন ও বোল্টন ফাইন আটর্স লিথোগ্রাফার্স হচ্ছে ভারতবর্ষে প্রথমদিককার ঈদকার্ড প্রকাশনা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। ওই সময় লন্ডনের রাফায়েল টাকের পোস্টকার্ডও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যবহৃত হতো।
মন্তব্য চালু নেই