পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুত কিছু তথ্য জানি (পর্ব ৫)
এবারের পোষ্টটা খাদ্য সম্পর্কিত । যে খাদ্যের জন্যই আমাদের এত পরিশ্রম ! শুধুমাত্র প্রথম তথ্যটা অবশ্য ঠিক খাদ্য নিয়ে বলা যাবে না । এটা আমার প্রিয় খাদ্য গরুর গোস্ত, মানে গরু নিয়ে আরকি ।
৬৫। গরুর আই ডি কার্ড
কয়েকদিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হিন্দু মৌলবাদী দল বিজেপির নেতা রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় । ব্যাপারটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে ।
তো যাই হোক তোদের গরু তোরা দিবিনা তাতে আমাদের কি ? আমরা কি আর গরু খাওয়া বন্ধ করে দিব ? কক্ষনোই না ! কিন্তু তাই বলে এই গরু পাচার রোধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গরুদেরও নাকি ছবি সম্বলিত আই ডি কার্ড দেয়া হচ্ছে, এর মানেটা কি শুনি ? ।
আমি বলি কি, গরুদের যখন আই ডি কার্ড দিচ্ছই, পাসপোর্টটাও দিয়ে দাওনা, অন্তত ভিসা টা নিয়ে বাংলাদেশটাতো একটু ঘুরে যেতে পারত ? নাকি ? আফটার অল গরুরাও মানুষ !!
৬৬। খাদ্য ও পানি ছাড়া সত্তুর বছর
এই খাদ্য ও পানীয় ছাড়া কি আমাদের চলে ? চলে না । তাহলে ভারতের আহ্মেদাবাদ শহরের আটাত্তুর বয়স্ক প্রহলদ যানি (Prahlad Jani)গত সত্তুর বছর ধরে কোন খাদ্য গ্রহণ এমনকি পানি পান না করেই বেঁচে আছেন কিভাবে ? তিনি অবশ্য দাবী করেছেন তার আট বছর বয়সে এক দেবীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার মাধ্যমেই তিনি এত দীর্ঘদিন কোন প্রকার খাদ্য ও পানীয় ছাড়াই সুস্থ ভাবে বেঁচে আছেন । তার প্রাত্যহিক কাজকর্মের মধ্যে তিনি দুটি কাজ নিয়মিত করে থাকেন, একটি হচ্ছে ধ্যান ও অন্যটি সূর্যস্নান । চার পাঁচ দিন পরপর তিনি পানি দিয়ে গোসল করেন । আমার কি মনে হয় জানেন ? উনার শরীরে সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতিটি কোন ভাবে তৈরি হয়ে গেছে হয়ত । এখন শুধু দেখার অপেক্ষা কবে আবার উনার শেকড় বের হয় !
৬৭। স্যুপের প্রচলন
খাদ্যের মধ্যে আবার আমার গরুর গোস্তের পরে স্যুপটাই প্রিয় । জানেন এই স্যুপের প্রচলনই কিন্তু হয়েছিল জলহস্তির গোস্ত দিয়ে, তাও যীশু খৃষ্টের জন্মেরও প্রায় ছয় হাজার বছর আগে ! ভাবা যায় ?
৬৮। জাপানে মোটা হওয়া বেআইনি
আমার এই গোস্ত প্রীতি দেখে অনেকে হয়ত মনে করবেন আমি আবার ভীষণ মোটা, তাই না ? মোটেই না । আর মোটা হলেই বা সমস্যা কি ? আমি কি আর জাপানে থাকি নাকি যে মোটা হওয়া যাবে না । কি বললেন ? জাপানের সাথে মোটা হওয়ার কি সম্পর্ক ? তবে শুনুন, জাপানে সুমো কুস্তিগির ছাড়া মোটা হওয়া নাকি রীতিমত বেআইনি । ওখানে চল্লিশ বছর বয়স্ক একজন পুরুষের কোমরের মাপ থাকতে পারবে সর্বোচ্চ আশি সেন্টিমিটার এবং মহিলাদের সর্বোচ্চ নব্বই সেন্টিমিটার ।
আচ্ছা, দেখেনতো ওখানে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে দশ সেন্টিমিটার বেশী সুবিধা পাবে কেন ? বলি, আইনটা কোন মহিলা করেছিল নাকি ?
৬৯। মুরগীও ফাষ্ট ফুড খায় নাকি ?
আর গরুর গোস্ত খেয়ে মোটা ! কেন মুরগিরা এখন কম যায় নাকি ? চল্লিশ বছর আগেকার মুরগীদের শরীরে নাকি যে পরিমাণ চর্বি থাকত, এখনকার মুরগীদের শরীরে তার চেয়ে দুইশত ছিষট্টি ভাগ বেশী চর্বি থাকে ! কেন বাবা ? ওরাও কি এখন ফাষ্ট ফুড খায় ?
৭০। মাছের আঁশ
আবার তারপর আছে মাছ, মাছে অবশ্য মোটা হবার সম্ভাবনা নেই । তবে মাছের ঝামেলার মধ্যে ঐ কাঁটাটাই একটু সমস্যা করে আরকি । ও আচ্ছা, মাছ কাটাওতো ঝামেলা, বিশেষ করে আঁশ ছাড়ানো, ঠিক না ? তবে বলি কি, মাছের আঁশ ছাড়ানোর আগে মাছটিতে একটু ভিনেগার মাখিয়ে নিন । আঁশ ছাড়ানো সহজ হবে ।
৭১। ভাজার সময় সমস্যা ?
আবার কি হল ? ও, মাছ ভাজার সময় তেল ছিটকে আসে ? কত সমস্যারে বাবা, এর পর তো মাছের কাঁটাটাও বেছে দিয়ে আসতে বলবেন । আচ্ছা ঠিক আছে কাঁটাও বেছে দিয়ে আসব, তবে যদি ওটা বড় সাইজের ইলিশ মাছ হয়, আর আমার কপালে একটু আধটু দাওয়াত জোটে । তাহলে, ঠিক আছে ? দাওয়াত পাওনা থাকল ! ও আচ্ছা, আসল কথাইতো বলতে ভুলে গেলাম, মাছ ভাজুন আর যাই ভাজুন, তেল গরম হয়ে এলে তেলে এক চিমটে লবন অথবা ময়দা দিয়ে দিন, ব্যস্, এবার নিশ্চিন্তে ভাজাভাজি করুন । তেল অনেক কম ছিটকে আসবে ।
আবার কি বললেন ? এটা আগেই জানা ছিল ? এখন তো জানা থাকবেই, থাকবে না ? বলি, যদি আগেই জানা থাকত তবে লেখাটা তো না পড়লেই পারতেন, পারতেন না ?
৭২। আলু ভর্তা
তো এই ইলিশ মাছ ভাজার সাথে একটু শুকনা মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ আর আলু ভর্তা হলে অনেক ভালো লাগে, তাইনা ? তবে আলু ভর্তাটা যে সাদা ধবধবে হওয়াটা একটা আর্ট, এটা জানেন তো ? অনেকের হাতে আলু ভর্তা লালচে হয়ে যায়, অনেকটা গাজরের কাচাকাছি ।
আলু ভর্তা সাদা হবে কিভাবে ? তাহলে শুনুন, আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে আলু পানি থেকে নামানোর আগে পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে দিন, তারপর ভর্তা করুন, দেখবেন ভর্তা কি সুন্দর সাদা হয়েছে !
৭৩। ওফ্, পেঁয়াজ ? অসহ্য
কি ভাই ? পেঁয়াজের কথা বললাম, ওখানেও সমস্যা ? কি সমস্যা শুনি ? ও পেঁয়াজ কাঁটার সময় চোখ দিয়ে কান্না বের হয় ? ঠিক আছে, কান্না বের হবার সময় আমি পাশে টিস্যু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, আপনি কাঁদতে থাকবেন আর আমি মুছতে থাকব, ঠিক আছে ? বলি সব কিছু নিয়ে এত সমস্যা হলে চলবে কিভাবে ? বলি, আমি আর কয়দিন লিখব ? আমার লিখা বন্ধ হয়ে যাবার পর কি করবেন তখন ?
আচ্ছা তখন কি করবেন এটা তখন দেখা যাবে, এখন যেটা করবেন, সেটা হচ্ছে পেঁয়াজ কাঁটার আগে কিছুক্ষন রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠান্ডা করে নিন, এবার কেঁটে দেখুনতো, চোখ দিয়ে পানি বের হয় কিনা ?
পেঁয়াজ কাঁটা শেষ, এবার হাত ধুয়ে ফেলুন তাহলে । আবার কি হোল ? হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ যাচ্ছে না ? মাগো, কি কুক্ষণেই না এসব লিখতে বসেছিলাম ? হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ যাচ্ছেনা সেটাও আমাকে দেখতে হবে ? বলি – একটু লেবু ঘষে ফেলুন না হাতে, এবার গন্ধ শুঁকে দেখুন তো, গন্ধ আছে কিনা ?
৭৪। চালে চালে লেগে যায় ?
আচ্ছা ! ওদিকে আবার ভাত বা পোলাও রান্না করার সময় চাল একটার গায়ে আরেকটা লেগে যায় না তো ? যদি এই সমস্যা থাকে তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে দিন, আর একটার গায়ে আরেকটা লাগবে না ।
৭৫। সব্জি সেদ্ধ
আর এর সাথে যদি সব্জি রান্না করেন তাহলে কিন্তু যে সমস্ত সব্জি মাটির ওপরে জন্মায়, সেগুলো সেদ্ধ করার সময় ঢাকনি দিয়ে ঢাকবেন না । কি ? কেন ঢাকবেন না ? আরে বাবা যেটাকে জন্মানোর সময় মাটিই ঢাকনি দেয় নি, সেটাকে সেদ্ধ করার সময় আপনি ঢাকনি দেবেন কোন হিসেবে শুনি ? নাহ্, ওই মজা করলাম একটু । যদি সত্যি সত্যিই জানতে চান তাহলে নেটটা চেক করে দেখুন না একবার । সব কিছু কি আমিই লিখে দিব ? কেন, আমার আঙুল কি ব্যথা করে না ?
দাওয়াতের কোন খবর নেই, ওদিকে সবকিছুই শিখে নিচ্ছে !
৭৬। অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করবেন ?
ঠিক আছে, অলিভ অয়েল দিয়েই রান্না করুন । এই অলিভ অয়েলের অনেক গুণ, রান্না থেকে শুরু করে নিজের গায়ে কিংবা বাচ্চার গায়ে অনেকেই অলিভ অয়েল মেখে থাকেন । ঠিক না ? তাহলে জেনে রাখুন, বাজারে অলিভ অয়েল নামে যে সমস্ত অয়েল বিক্রী হয়, তাঁর মধ্যে সত্তুর ভাগই খাঁটি অলিভ অয়েল না । কি ? খাঁটি অলিভ অয়েল চিনবেন কিভাবে ? তা বাবা আমি বলতে পারবনা । আমি অলিভ অয়েল খাইওনা, গায়েও মাখিনা । আমার গাঁয়ে মাখি খাঁটি সরিষার তেল । কিছু রসুন দিয়ে গরম করে রাখি আর রাতে গাঁয়ে মেখে নেই, উপকার কি হয় জানিনা, তবে মশা কামড়ায় না ।
৭৭। ডেজার্ট
রান্না শেষ হয়ে গেলে, খাওয়া দাওয়া গরম থাকতে থাকতেই খেয়ে নেবেন কিন্তু ! রান্না শেষ করবার পর খেতে যত দেরী করবেন, খাওয়াতে ততই জীবাণু সংক্রমণ বাড়তে থাকবে । অযথা জীবাণু সক্রমণ কেন ঘটাবেন ? ও, আরেকটা কথা, মুল খাওয়া দাওয়ার পর একটু ডেজার্ট খেয়ে নেবেন কিন্তু, এটা শরীরের জন্য অনেক ভালো । কি ডেজার্ট ভালো হয় ? এই যেমন কলা খেতে পারেন, কলাতে আবার বিষন্নতা কাটে, মেজাজটা হবে ফুরফুরে । বিশেষ করে খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর প্লেট গ্লাস ধোয়ার সময় যে বিষন্নতা ভাবটা হয়, সেটা আর হবে না ।
৭৮। হায়রে খাদ্য
আর খাওয়া দাওয়া অপচয় করবেন না কিন্তু, জানেন তো সমগ্র পৃথিবীতে যখন একদিকে প্রতি নয়জনে একজন মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে, অন্যদিকে সমগ্র পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত খাদ্যের অর্ধেকই ফেলে দেওয় হয় !
এ জন্য কিন্তু আমেরিকার সিয়াটলে ২০১৫ইং শুরু থেকে খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।এ ব্যপারে আমার আর কোন বক্তব্য রাখার ইচ্ছে হোল না । আপনার বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম ।
৭৯। ফ্রিজে দূর্গন্ধ !
যা খাবার বেঁচে যাবে ফ্রিজে রেখে দেবেন, পরে গরম করে খাবেন ! কি ফ্রিজে দূর্গন্ধ হয়ে যায় ? খুব সহজ একটি সমাধান দিচ্ছি । একটি পরিষ্কার মোজায় কিছু কফি দানা রেখে দিন ফ্রিজে, দেখবেন গন্ধ উধাও ।
৮০। হাদিস
আজকের মত শেষ করছি তাহলে, সামনের পোষ্টও এই খাওয়া দাওয়া নিয়েই রাখার ইচ্ছে আছে । আর শেষ করার আগে একটা হাদিসঃ
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) নাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “ইবনু উমর (রাঃ) ততক্ষন পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষন পর্যন্ত তার সাথে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে না আনা হতো। একদা আমি তার সঙ্গে বসে আহার করার জন্য জনৈক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব বেশী আহার করলো” । ইবনু উমর (রাঃ) বললেনঃ “নাফি! এ ধরনের লোককে আমার কাছে নিসে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, মুমিন ব্যাক্তি এক পেটে খায়। আর কাফির ব্যাক্তি সাত পেটে খায়” ।
সূত্রঃ
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৭/ আহার সংক্রান্ত
হাদিস নম্বরঃ ৫০০১
(বিঃদ্রঃ এই ব্যাপারগুলো নিয়ে যথেষ্ঠ বিতর্ক আছে। এই প্রবন্ধটি সংগৃহীত। এর পুরোটা সত্য কিনা সেটা অনুসন্ধান সাপেক্ষ)
আরও পড়ুন:
পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুদ কিছু তথ্য জানি (পর্ব ১)
পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুদ কিছু তথ্য জানি (পর্ব ২)
পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুদ কিছু তথ্য জানি (পর্ব ৩)
পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুদ কিছু তথ্য জানি (পর্ব ৪)
পৃথিবীর কত কিছুই আমাদের অজানা, আসুন অদ্ভুদ কিছু তথ্য জানি (শেষ পর্ব)
মন্তব্য চালু নেই