বোয়ালমারীতে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত ও এক যুবক আহত হয়েছে। গত রোবাবার (৫ জুলাই) তারাবির নামাজ চলাকালিন সময়ে আনুমানিক রাত ৯টায় ময়না ইউনিয়নের সাতৈর-এলাংখালী গ্রান্ড-ট্রাংক রোডের হাটখোলারচর বটতলা নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ওই দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। নিহতরা হলো উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩নং ওয়ার্ড সদস্য গজারকান্দি গ্রামের মো. সহিদুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম মিরন (২৮) ও চতর গ্রামের মৃত সিরমান মোল্যার ছেলে ফরহাদ মোল্যা (৩০)।

এ ঘটনায় আহত চতর গ্রামের মোতালেব ফকিরের ছেলে মুরাদ হোসেনকে (৩৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা সুত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ যাবত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ডাকাত আতঙ্কে এলাকাবাসী দল গঠন করে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেন। ওই রাতে একটি মোটরসাইকেল যোগে ওই তিন যুবক সাতৈর-এলাংখালী সড়কের হাটখোলারচর বটতলা নামকস্থানে পৌছালে গ্রাম পুলিশসহ পাহারাদল মোটরসাইকেলটি থামার সংকেত দেয়। কিন্তু যুবকেরা না থেমে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকা অতিক্রমকালে সড়কের গতিরোধকে আটকে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে।

এসময় পাহারাদলসহ এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই ওই দুই যুবক নিহত ও অপর আরোহী আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি যুবকদের ব্যবহৃত বাজাজ ১০০ সিসি একটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। নিহত দুই যুবকের কাছে থাকা একটি চটের বস্তায় প্রায় চার ফুট লম্বা দুটি রামদা পাওয়া যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুল হক সজল জানান, দুই যুবককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আকুল হোসেন মৃধা জানান, অস্ত্রসহ ওই তিন যুবক হাটখোলারচর বটতলা এলাকা অতিক্রম করার সময় এলাকাবাসী তাদের অপরাধী সন্দেহে আটক করে। এসময় আশপাশের মসজিদের মাইকে ডাকাত আটকের খবর প্রচারিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাড়িঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসে তাদের পিটুনি দেয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুইজন মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি।

এ ঘটনায় নিহত ফরহাদ মোল্যার ছোট ভাই মো. মোস্তফা মোল্যা জানান, আমার ভাই তার অপর দুই সঙ্গীকে নিয়ে পাশের লংকাচর গ্রাম থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি দাবি করেন, রাতে এলাকায় পাহারা বসানোর জন্য পাশ্ববর্তী ঘোষপুর ইউনিয়নের লংকারচর গ্রাম থেকে ওই রামদা দুটি বানানো হয়েছিল। ওই রামদা নিয়ে আমার ভাই ও তার সঙ্গিরা ফিরছিলেন। এ ঘটনায় মোস্তফা বাদি হয়ে গতকাল সোমবার (৬ জুলাই) অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামী করে হত্যার অভিযোগে থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম নবী জানান, দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে এজাহার দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিকে আগের রাতে শনিবার ময়না ইউনিয়নের মদনধারী কুটিরপাড় গ্রামের রবিউলের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই