আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ, শিরোপা চিলির

স্মৃতিটা এখনো তাজা। গত বছরের জুলাইয়ের কথা। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেঙেছিল আর্জেন্টিনার। এক বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে শিরোপার দুঃখ ঘোচানোর সুযোগ এসেছিল আলবিসেলেস্তেদের সামনে। কিন্তু এবারও স্বপ্নভঙ্গ হলো লিওনেল মেসিদের। কোপার ফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে চিলি। লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ নামে পরিচিত শতবর্ষী এই টুর্নামেন্টে এই প্রথম শিরোপার স্বাদ নিল চিলিয়ানরা। আর আর্জেন্টিনার শিরোপার জন্য ২২ বছরের অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হলো।

শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় শুরু হওয়া ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও স্কোরলাইন গোলশূন্য থাকে। ফলে শিরোপা নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোপার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে চিলি।

টাইব্রেকারে চিলির প্রথম শটে গোল করেন ম্যাটি ফার্নান্দেজ। আর্জেন্টিনার প্রথম শট গোল করে ১-১ সমতা ফেরান মেসি। ভিদালের করা চিলির দ্বিতীয় শট রোমেরোর হাতে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। আর্জেন্টিনার পরের শট নিতে আসেন হিগুয়েন। কিন্তু বল পোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় চিলি।

নিজেদের তৃতীয় শটে চিলিকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন আরানগুইজ। এভার বানেগার করা আর্জেন্টিনার পরের শট ঠেকিয়ে দেন চিলির গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভো। চিলির পরের শটে তাই সানচেজ গোল করলেই ৪-১ ব্যবধানের জয়ে শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় স্বাগতিকদের।

সান্তিয়াগো ডি চিলির এস্তাদিও ন্যাসিওনালে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে দুই দল। অষ্টম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল চিলি। ডি বক্সের ভেতর থেকে সানচেজকে উদ্দেশ্যে করে পাস দিয়েছিলেন চিলির বেয়াউসিজোর। তবে সানচেজের কাছে যাওয়ার আগেই বলটি ক্লিয়ার করেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি।

১৩ মিনিটে দারুণ এক সেভ করে চিলিকে গোলবঞ্চিত করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। বক্সের ভেতর থেকে শট নেন ভিদাল। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

২০ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। আগের মিনিটে চিলির বক্সের ডান পাশে জাবালেতাকে ফাউল করেন চিলির মেডেল। ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির নেওয়া ফ্রি-কিকে দারুণ এক হেড করেন আগুয়েরো। কিন্তু বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুয়েরোর হেড ঠেকিয়ে দেন স্বাগতিক গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভো।

২৩ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পায় চিলি। মাঠে নিজেদের অংশ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান চিলির এক খেলোয়াড়। বল পেয়ে যান ভারগাস। কিন্তু বল পোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। ৩৪ মিনিটে চিলির আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা। এরপর গোলশূন্য স্কোরলাইন রেখেই বিরতিতে যায় দুই দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার ওটামেন্ডির ভুলে বক্সের কাছে বল পেয়েছিলেন চিলির সানচেজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শট নিতে পারেননি আর্সেনালের এই স্ট্রাইকার। ৬৬ মিনিটে চিলিকে এগিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিদাল। বক্সের ভেতর তার নেওয়া শট রুখে দেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা।

৭৪ মিনিটে আগুয়েরোর বদলে গঞ্জালো হিগুয়েনকে মাঠে নামান আর্জেন্টিনা কোচ মার্টিনো। ৮২ মিনিটে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন চিলির স্ট্রাইকার সানচেজ। তার নেওয়া শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ২ মিনিটে দেওয়া হয়। আর অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠ থেকে চিলির এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের সামনে এসে লেভেজ্জিকে পাস দেন মেসি। লেভেজ্জি চিলির গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে পোস্টের কোনায় শট মারেন। বল পোস্টে না ঢুকলেও সুযোগ পেয়েছিলেন হিগুয়েন। কিন্তু বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। বল তার পায়ের টোকায় পোস্টের বাইরের জালে লাগে। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।

অতিরিক্ত সময়ের ১৫ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল চিলি। মাঝ মাঠে উড়ে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মাশচেরানো। বল পেয়ে যান চিলির সানচেজ। ফাঁকায় বল টেনে নিয়ে গিয়েও জালে জড়াতে পারেনি এই স্ট্রাইকার। বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতেন সানচেজ, ভিদাল, ব্রাভোরা।



মন্তব্য চালু নেই