কি জাদু আছে এই আইটেম গানে, দর্শকদের কাছে এর গুরুত্ব কেন এত বেশি?
হালের ক্রেজ আইটেম গান। যা আইটেম নাম্বার অথবা আইটেম সং নামেই বেশি পরিচিত। এই আইটেম গানের প্রভাবে সম্প্রতি দেশের বাণিজ্যিক সিনেমার সংজ্ঞাই বদলে যেতে শুরু করেছে। অ্যাকশন, ছয়টি গান, কিছু ক্লাইমেক্স, নায়িকার চোখে অশ্রু আর ধনী-গরীবের প্রেম অথবা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের বিদ্রোহী সন্ত্রাসীর কাহিনির পাশাপাশি এখন ঢাকাই সিনেমার অন্যতম অনুসঙ্গ আইটেম গান।
বাণিজ্যিক সিনেমার বৈশিষ্ট্য বিচারে আইটেম নাম্বার প্রাধান্য পাচ্ছে বিএফডিসি কেন্দ্রিক সিনেমায়। শুধু তাই-ই নয়, ছোট পর্দার নির্মাতারা যারা মুক্ত চিন্তার ধারক এবং স্বাধীন নির্মাতা হিসেবে স্বীকৃত তাদের সিনেমাতেও এই আইটেম গানের জাদু আবশ্যক অনুসঙ্গ হিসেবেই গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু কি জাদু লুকিয়ে আছে এই উপাদানে? কেনই বা এটি গুরুত্ব পাচ্ছে নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে? এরই উত্তর খোঁজার প্রয়াস এই প্রতিবেদনে।
যা থাকছে আইটেম গানে:
আইটেম গান মানেই চটুল শব্দের ছন্দবদ্ধ কিছু অশ্লীল বাক্য। ২০১৫ সালে বহুল আলোচিত ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত অ্যাকশন জেসমিন চলচ্চিত্রের আইটেম গানের শিরোনাম ‘পান জর্দা চমন’। গানটির মুখ- ‘পিরিতের ব্ল্যাঙ্ক চেক আমি, নে না ভাঙ্গাইয়া/ দেখ না খিলি, আমি কেমন রে বাবু, নে না তোর ঠোঁটে রাঙাইয়া।’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন স্বীকৃতি। সুদীপ কুমার দীপের কথায় এর সংগীত পরিচালনা করেছেন শওকত আলী ইমন। নেচেছেন এ সিনেমার নায়িকা ববি। গানটিতে ববিকে ছোট পোশাক পরিহিত অবস্থায় নাচতে দেখা যায়। গানে নায়িকার কস্টিউম হিসেবে পরানো হয়েছে আটসাঁট ব্লাউজ এবং ঘাঘড়া। এতে দেখা যায়, তিনি নেচে গেয়ে সিনেমার খলনায়ক মিশা সওদাগর এবং তার সাগরেতদের মনোরঞ্জন করছেন।
দেখুন: অ্যাকশন জেসমিন সিনেমার আইটেম গান
এ জে রানা পরিচালিত নির্মাণাধীণ চলচ্চিত্র তোমার জন্য মন কান্দে (২০১৫)। এ সিনেমার জন্য ধারণ করা হয়েছে ‘আইসক্রিম’ শিরোনামের আইটেম গানটি। গানটির কথা লিখেছেন- সুদীপ কুমার দীপ, সংগীতায়োজন করেছেন- আলি আকরাম শুভ। গানটির মুখ- ‘আয় পাকনা, চেয়ে দেখ না আমি আইসক্রিম/ চাইলে পাবি, আইলে খাবি, দেখবি নাইস ড্রিম।’ এই গানের সঙ্গে নেচেছেন আইটেম কন্যা খ্যাত শিল্পী বিপাশা কবীর। সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও এরই মধ্যে ইন্টারনেটের কল্যাণে তা দেখেছেন অনেকেই। শুধু কোরিওগ্রাফীতেই নয় এর কথাগুলো অশ্লীলতায় ভরা। গানটির একটি অন্তরায় বলা হচ্ছে- ‘আইসক্রিম খাব আমি মিষ্টি মিষ্টি করে, আইসক্রিম দেখব আমি দুষ্ট দুষ্ট ভোরে’। এর পর বলা হচ্ছে- ‘আয় না কাছে আমার আছে সেক্সি ফিগার স্লিম।’
আসছে ঈদে মুক্তি মিছিলে থাকা, বহুল আলোচিত সিনেমা অগ্নি-টু’র প্রচারণার উদ্দেশ্যে ইউটিউবে প্রকাশ করা হয় ‘ম্যাজিক মামনি’ শিরোনামের আইটেম নাম্বার। এই গানটির সঙ্গে নেচেছেন হালের ক্রেজ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। জাজ মাল্টিমিডিয়া পরিবেশিত এ গানটিতে দেখা যায়- মাহি র্যাম্প স্টেজে নাচতে নাচতে গাইছেন ‘বাবলী না আমি লাভলী না, নই রে বিল্লো রানি, খেলি ছিনিমিনি ছিনিমিনি ছিনিমিনি মন নিয়ে ম্যাজিক মামনি।’ তার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে আছেন আরো চার নৃত্যশিল্পী। এই গানটিতে মাহিকে যেভাবে খোলামেলা করে উপস্থাপন করা হয়েছে এর আগে তাকে কোথাও এভাবে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয় গানটিতে স্ট্রিপ ডান্স ব্যবহার করা হয়েছে, যা ঢাকাই সিনেমায় নতুন। মাহির সহকারী নৃত্যশিল্পীদের যে রকম বিকিনি পোশাকে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং নাচের চাইতে গানটিতে যে ধরনের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছেন সেটিও চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে এই আইটেম গানগুলো কি আবারো অশ্লীলতা ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে না কি?
দেখুন: অগ্নি টু সিনেমা আইটেম সং
https://youtu.be/izZU6bI96e8
আইটেম গানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রভাব:
এর আগে ঢাকাই সিনেমায় ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পরে কাটপিস। সিনেমায় কাটপিস সংযোজন করা হত প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা চালানোর সময়। সে সব দৃশ্যে নারী শিল্পীদের শ্লীলতাহানী অথবা ধর্ষণ দৃশ্যগুলো দেখানো হত। পাশাপাশি নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো আলাদাভাবে ধারণ করে সংযোজন করা হত সিনেমায়। এই কাটপিস সংস্কৃতি বন্ধ করতে নতুন আইন তৈরি, পুলিশি অভিযান পরিচালনাসহ কত ধরনের কাটখড় পোড়াতে হয়েছে তা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সকলেরই জানা। সিনেমার মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর যে অভিযোগ ছিল কাটপিসকে কেন্দ্র করে তা বহু চেষ্টার পর বন্ধ করা সম্ভব হয়। সম্প্রতি আইটেম গানের নামে যেভাবে অশ্লীলতা ছড়ানো হচ্ছে তা ঢাকাই সিনেমার জন্য এক ধরনের হুমকি নয় কি?
প্রায়শই বল হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র বাঁচানোর কথা। সর্ব মহল থেকে দাবী আছে বাংলা সিনেমার পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনা যায় কীভাবে। সত্তর এবং আশির দশকে এ দেশের চলচ্চিত্রের সোনালি সময় হিসেবেই অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপ থেকে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশি চলচ্চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, সমালোচকদের দৃষ্টিতে সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)। এর পর পর্যায়ক্রমে রয়েছে তানভীর মোকাম্মেলের চিত্রা নদীর পারে (১৯৯৯) ও নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৪), আলমগীর কবিরের সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), তোজাম্মেল হক বকুলের বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না (১৯৮৯), শেখ নিয়ামত আলী ও মসীউদ্দীন শাকেরের সূর্য দীঘল বাড়ি (১৯৭৯), আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩) এবং রূপালি সৈকতে (১৯৭৯), হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দীলিপ সোমের সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮)।
এই জরিপে দেখা যায়, দর্শকদের দৃষ্টিতে ও ভোটে সেরা বাংলাদেশি সিনেমার তালিকায় রয়েছে, ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), আলমগীর কবিরের সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), তানভীর মোকাম্মেলের চিত্রা নদীর পাড়ে (১৯৯৯), বুদ্ধদেব দাসগুপ্তর উত্তরা (১৯৯৯), দীলিপ সোমের সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), আলমগীর কবিরের রূপালি সৈকতে (১৯৭৯), তানভীর মোকাম্মেলের লালসালু (২০০১), আলমগীর কবির পরিচালিত ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), কবীর আনোয়ারের সুপ্রভাত (১৯৭৬), জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)। উইকিপিডিয়ায় পরিবেশিত এ তথ্যটি নিয়ে বির্তক হতেই পারে। তবে স্বর্ণালি যুগের দর্শক প্রিয়তা অর্জনকারী এবং ব্যবসায়িকভাবে সফল সকল সিনেমাই কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফী, কস্টিউম, সংগীত, কোরিওগ্রাফী, কালার কারেকশন প্রভৃতি বিষয়গুলোতে উৎকর্ষতার নতুন মাত্রা তৈরি করেছিল। চলচ্চিত্র বোদ্ধারাও এ মতের সঙ্গে অবশ্যই এক মত হবেন।
সেই হিসেবে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না (১৯৮৯) সিনেমাটির নাম বলা যেতে পারে। সর্বকালে সেরা ব্যবসা সফল সিনেমার খেতাব পায় ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ অভিনীত সিনেমাটি। এ ছাড়া সে সময়ের ব্যবসা সফল সিনেমার তালিকায় রয়েছে লাঠিয়াল, নয়নমনি, সুজনসখি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, আগুন নিয়ে খেলা, নীল আকাশের নীচে, দর্পচূর্ণ, টাকা আনা পাই, দ্বীপ নেভে নাই, কাঁচ কাটা হীরে, বেঈমান, গুন্ডা, অশিক্ষতসহ অসংখ্য সিনেমা যেগুলো বিএফডিসি কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক ধারার নির্মাতাদের তৈরি। সে সব সিনেমায় না ছিল কাটপিস, না ছিল আইটেম গান।
দেখুন: অল্প অল্প প্রেমের গল্প (২০১৪) সিনেমার আইটেম গান (সিনেমাটি দর্শক প্রিয়তা না পেলেও এই আইটেম গানটি বেশ প্রসংশিত হয়।
https://youtu.be/jmoxxMuI9Pk
নব্বইয়ের দশকে বলিউড সিনেমা ক্যায়ামত সে ক্যায়ামত এর বাংলাদেশি সংস্করণ কেয়ামত থেকে কেয়ামত থেকে শুরু করে সত্যের মৃত্যূ নেই সিনেমাগুলোতেও কোনো আইটেম নাম্বার ব্যবহার করা হয়নি। আবার ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়া জাকির হোসেন রাজুর সিনেমা অনেক সাধের ময়না ছিল ব্যবসায়িকভাবে সফল। চিরায়ত প্রেম কাহিনি নির্ভর সিনেমাটিতেও কোনো আইটেম গান ছিল না।
নানা জনের নানা মত:
তবে এই উদাহরণগুলো সামনে নিয়ে এলে অনেকেই বলেন, সময় বদলে গেছে। আকাশ সংস্কৃতির যুগে সময়ের সঙ্গে তাল না মেলালে কি চলে? এখানেও দেখা যায় নানা জনের নানা মত।
নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘সিনেমায় খলনায়কের আস্তানায়, ড্যান্স ফ্লোরে নাচতে দেখা যায় আইটেম কন্যাদের। আগেও এ ধরনে গানে একটু অশ্লীলতা ছিল। যুগের পরিবর্তনে এটির নাম ও উপস্থাপনার ধরন পরিবর্তন করে আইটেম গান বলা হয়। সিনেমা দেখে মানুষ বিভিন্ন চমকের জন্য। বলিউডের সিনেমায় কিছু চমক থাকে। কারিনা, ক্যাটরিনা কাইফ সিনেমায় নাচেন কিন্তু তারা কিন্তু ওই সিনেমায় অভিনয় করছেন না। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আইটেম গান ব্যবহার করা হচ্ছে।’
নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজন ছাড়া যদি আইটেম গান ব্যবহার করা হয় সেটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। যদি গল্পের প্রয়োজনে আইটেম গান ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা খারাপ হবে না। তবে অবশ্যই শালীনতা বজায় রেখে করতে হবে। আইটেম সং মানেই তো আর অশ্লীলতা নয়। গানের কথাতেও উস্কানিমূলক কিছু থাকতেই পারে। চটুল গান এ দেশে নতুন নয়। তবে অবশ্যই পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা রাখতে হবে।
দেখুন: তোমার জন্য মন কান্দে সিনেমার আইটেম গান
https://youtu.be/rrG8QghfGhk
ঢাকাই সিনেমার ‘আইটেম গার্ল’ হিসেবে পরিচিত বিপাশা কবির বলেন, ‘আমি অনেক আইটেম গানে নেচেছি। আমার গানগুলো বিভিন্ন সময়, কারণে-অকারণে ব্যবহার করা হয়েছে। দর্শকেরও আইটেম গানের চাহিদা থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, দর্শক আইটেম গান দেখতেই হলে যায়। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে আইটেম গানের জায়গাটাকে কিছু লোক নোংরা করছে। অনেক সময় ক্যামেরার কাজগুলোও একটু অন্যভাবে করে যা শিল্পীকে নোংরাভাবে উপস্থাপন করে। আইটেম গান এক্সপ্রেশনের বড় একটা জায়গা। ছোট কাপড় পরলেই আইটেম গান হয় না।’
সদ্য মুক্তি পাওয়া সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র সুতপার ঠিকানা খ্যাত নির্মাতা প্রসূন রহমান বলেন, ‘আইটেম গান বিনোদনের নামে অত্যন্ত অশোভন এবং অসম্মানজনক একটি প্রক্রিয়া। নারীকে সেখানে আইটেম হিসেবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিনোদনের নামে যেখানে কেবলমাত্র অশ্লীল উপায়ে সুরসুরি দেওয়াই এর উদ্দেশ্য। এটি যারা তৈরি করছেন, নির্মাণে অংশগ্রহণ করছেন এবং প্রচারে অংশ নিচ্ছেন প্রত্যেকেই আসলে প্রকান্তরে নারীকে অসম্মান করছেন। নারীকে কেবলমাত্র সেক্সচ্যুয়াল ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং সমাজের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। চলচ্চিত্রে এই প্রকার সুরসুরি প্রদর্শন সমাজ জীবনে নারীর প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দেয় বলে আমি বিশ্বাস করি।’
মুভিয়্যানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি চলচ্চিত্র কর্মী ও সংগঠক বেলায়েত হোসেন মামুনের মতে- ‘আইটেম গান হচ্ছে সস্তা বিনোদনের চকচকে মোড়কিকরণ। এটা এক শ্রেণীর দর্শককে আগ্রহী করার জন্যই করা হচ্ছে। আগেও এ ধরনের গানের ব্যবহার ছিল। সেটা করা হত দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে। দেখা যেত গ্রামে বসা মেলার গানে বা যাত্রায়। এর পর দেখা গেল কাটপিসের ব্যবহার। তা করা হত বাইরে থেকে, সিনেমা প্রদর্শনের সময়। আর এখন অশ্লীল আইটেম গান যোগ করা হচ্ছে সিনেমার চিত্রেনাট্যেই। এটি অশ্লীল কাটপিসের আরেক সংস্করণ। আমরা বলিউডের আইটেম গানগুলো দেখে নকল করছি। সেই গানগুলোতে উচ্চমাত্রায় যৌনতার ছোঁয়া দিয়ে অসুস্থ অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। আমাদের এখানেও এখন সেই রূপ দেখা যাচ্ছে। আসলে সুস্থ ধারার বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রের জন্য কখনই আইটেম গানের প্রয়োজন নেই। সিনেমা দর্শক দেখবে কি দেখবে না, সেটা নির্ভর করে কাহিনির আকর্ষণ, নির্মাতার দক্ষতা এবং অভিনয়শিল্পীর মুন্সিয়ানার ওপর। যারা আইটেম গানকে প্রমোট করছেন তারা বুঝে বা না বুঝে অসুস্থ একটি ধারায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। ফলে আমাদের চলচ্চিত্রে সংকট আরো বাড়ছে।’
শ্যামলী সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক আহসানউল্লাহ হাসান বলেন, ‘আইটেম গানটির যদি কথা, সুর ও সংগীতের দিক থেকে ভালো হয় তবেই তা দর্শকের মুখে মুখে শোনা যায়। তবে সব আইটেম গানই ভালো নয়। অশ্লীল আইটেম গান হলেই যে তা দর্শক গ্রহণ করে এমনটা নয়। তা ছাড়া ভালো সিনেমার জন্য কাহিনি বর্হিভূত আইটেম গানের কোনোই প্রয়োজন নেই।’
আইটেম গানের এ দৌরাত্ম্য এখন ঢাকাই সিনেমায় সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। যার প্রমাণ আমরা দেখি ছোট পর্দার জনপ্রিয় আলভী আহমেদ নির্মিত সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা ইউটার্ন-এও। তার আগে রেদওয়ান রনির সিনেমা চোরাবালিতে দেখা গেছে আইটেম গানের ব্যবহার। এই সিনেমাটির আইটেম গান ‘জলের কাছে এসে ডাঙায় কেন থাকবি/ দে ভিজিয়ে দে শুকনো কেন রাখবি’র সঙ্গে নেচেছেন সিন্ডি রোলিং।
দেখুন: চোরাবালি সিনেমার আইটেম গান
https://youtu.be/L0OhXj4KWbg
থ্রিলার ঘরনার ছবিটির গানে দেখা গেছে মঞ্চের ও টিভি পর্দার অভিজ্ঞ অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিমকেও। গানটিতে সিন্ডি রোলিংয়ের পোশাক এবং গানের কথা যতটা না আপত্তিকর তার চেয়ে অশ্লীল দেহভঙ্গি নজড়ে পড়ে বেশি। যা অশ্লীলতাকেই উস্কে দেয়।
আইটেম গানের বিষয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সিনিয়র অভিনেতা উম পুরী সম্প্রতি মুখ খুলেছেন। তিনি বলছেন, আইটেম গান বিনোদনের নামে অশ্লীলতাকেই ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার কথার সূত্র ধরে বলতে চাই, যে শ্রেণীর দর্শক হলে গিয়ে সেক্সি শিলাকে দেখছেন, যে দর্শকরা শিষ বাজিয়ে ম্যাজিক মামনি উপভোগ করবেন, তাদের মধ্যে থেকে যে কেউ গানগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের কামনা চরিত্রার্থ করার রসদ সংগ্রহ করতেই পারেন। আর নারী নির্যাতনের মতো ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন। ফলে আবারো আরেকজন নারী সহিংসতার শিকার না হন!
কেননা চলচ্চিত্র তো সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি। সর্বাধুনিক এই বিনোদন মাধ্যমটির ক্ষমতা এতটাই বেশি, যা সমাজের বৈশিষ্ট্য তৈরিতে সরাসরি ভূমিকা রাখার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং এখনই সময়, আইটেম গানের জাদুর মায়া থেকে বের হয়ে আসার। না হলে এটিও কাটপিসের মতো চলচ্চিত্রের বিষফোঁড়ার রূপ ধারণ করতে পারে।রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই